Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মহিলাদের ঋণ সৃজনী-র

সমবায়ের হাত ধরে স্বনির্ভরতা

এখন নদিয়ায় ১৮টি মহিলা স্বয়ম্ভর ক্রেডিট সোসাইটি রয়েছে। মুর্শিদাবাদেও তৈরি হয়েছে মহিলা পরিচালিত সমবায় সমিতি। সাধারণত, প্রাথমিক কৃষি ঋণদানকারী সোসাইটি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে থাকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির অ্যাকাউন্ট।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৮
Share: Save:

এখন ওঁদের আর ঋণের জন্য বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বা মহাজনের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। একটা সময় ঋণ চেয়ে ব্যাঙ্কে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। বহু দরবার করে ঋণ মিলত সামান্য।

তার পরেই তৈরি হল ‘সৃজনী মহিলা স্বনির্ভর দল সমবায় সমিতি লিমিটেড’-এর। তা তৈরি করলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাই। সেটা ছিল ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর। জেলার নাম নদিয়া। এই ঘটনা ব্যাঙ্কিংয়ের জগতে গ্রামীণ মহিলাদের পা রাখার প্রথম উদাহরণ।

সেই শুরু। এখন নদিয়ায় ১৮টি মহিলা স্বয়ম্ভর ক্রেডিট সোসাইটি রয়েছে। মুর্শিদাবাদেও তৈরি হয়েছে মহিলা পরিচালিত সমবায় সমিতি। সাধারণত, প্রাথমিক কৃষি ঋণদানকারী সোসাইটি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে থাকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির অ্যাকাউন্ট। বছর সাতেক আগের কথা। রানাঘাট ২ ব্লকের বৈদ্যনাথপুর এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি নিজেদের এলাকার ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলেন। তাঁরা প্রয়োজনে ওই ব্যাঙ্ক থেকে পর্যাপ্ত ঋণ পেতেন না। সেই সময় মহিলাদের পাশে দাঁড়ান এলাকার এক কৃষি আধিকারিক। তাঁর উৎসাহেই কৃষিজীবী পরিবারের মহিলারা তৈরি করেন সমবায় সমিতি। এখন ওই সমিতির সদস্য সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। ১২ জন রয়েছেন কার্যনির্বাহী কমিটিতে। ওই সমিতির লেনদেনের পরিমাণ ৬৫ লক্ষ টাকা।

সমিতির পক্ষে ম্যানেজার কাজল ঘোষ জানাচ্ছেন, তাঁদের সমিতিতে কেবলমাত্র মহিলারাই সদস্য। সমিতি কেবলমাত্র তাঁদের কাছ থেকেই আমানত সংগ্রহ করে। ঋণও দেয় শুধু মহিলাদেরই। সঞ্চিত আমানতের প্রায় তিনগুন ঋণ মেলে সমিতি থেকে।

সমিতির ঋণে এখন অনেকেই প্রকৃত অর্থে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন। সমিতির মহিলা কর্মকর্তারাই এখন সার বেচছেন। সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কাজেও মহিলা পরিচালিত সমিতিগুলি অংশ নিচ্ছে। কয়েকশো মহিলা এই মুহূর্তে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে পোশাক, প্রসাধনী দ্রব্যের কারবার চালাচ্ছেন। কেউ বা চাষের জন্য ঋণ নিচ্ছেন। ফসল বেচে লাভ থেকে শুধছেন ঋণ।

সৃজনীর এ সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে জেলায় এ রকম আরও ১৭টি ক্রেডিট সোসাইটি তৈরি হয়েছে। নবদ্বীপ, বেথুয়াডহরি থেকে শুরু করে জেলার প্রায় সব প্রান্তেই রয়েছে এমন সমিতি। তবে এই সমিতিগুলি প্রথম দিকে সদস্যদের ঋণ দিতে সমস্যায় পড়ত। কারণ, তাঁদের আমানত ছিল স্বল্প। কিন্তু সে সমস্যা মেটে সমবায় দফতরের প্রধান সচিব এমভি রাওয়ের হস্তক্ষেপে। বছর খানেক আগে তিনি জেলার সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের কর্তা ও মহিলা ক্রেডিট সোসাইটিগুলির নেত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সময় সোসাইটির মহিলারা জানান, সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক তাঁদের সোসাইটিকে ঋণ দিচ্ছেন না। প্রধান সচিব নির্দেশ দেন, মহিলা স্বয়ম্ভর ক্রেডিট সোসাইটিগুলিকেও ঋণ দিতে হবে। তারপর থেকেই জেলা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ মহিলা পরিচালিত সমিতিগুলিকে ঋণ দিতে শুরু করেছে।

ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান শিবনাথ চৌধুরী জানাচ্ছেন, বছর খানেকের মধ্যে ওই সোসাইটিগুলিকে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে মুর্শিদাবাদে ৬টি মহিলা সমবায় সমিতি রয়েছে। দফতরের এক কর্তা জানালেন, এই জেলায় নদিয়ার থেকে অনেক পরে মহিলা সমবায়ের ধারণাটা এসেছে। তবে সমিতিগুলি ভাল কাজ করছে। রাজ্য সমবায় দফতরের সেন্ট্রাল জোনের যুগ্ম নিবন্ধক মহম্মদ ইনাসউদ্দিন বলেন, মহিলাদের আর্থিক ক্ষমতায়নে সমিতিগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। আরও সমিতি তৈরির চেষ্টা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE