Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
কেপ-কাহিনি/১

ফোন গেল সাইকেলে, পড়ে রইল পাকা বেল

জাতে সে চুরির সোদর ভাই। লোক ঠকানো বুদ্ধি, হাতের গুণ আর ওস্তাদের আশীর্বাদ— তিনের মিশেল হলে যখন তখন মাহেন্দ্রক্ষণ! কেপমারিকে প্রায় আর্টের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, এমনই কয়েক জন দিকপালের খোঁজ নিল আনন্দবাজার। জাতে সে চুরির সোদর ভাই। লোক ঠকানো বুদ্ধি, হাতের গুণ আর ওস্তাদের আশীর্বাদ— তিনের মিশেল হলে যখন তখন মাহেন্দ্রক্ষণ! কেপমারিকে প্রায় আর্টের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, এমনই কয়েক জন দিকপালের খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:২৮
Share: Save:

বেল পাকলে কাকের কিছুই না।

উল্টে বেল পাড়তে গেলে যে এমন ফাঁসতে হতে পারে, ধারণাই ছিল না নবদ্বীপের পানু, বাপি বা তাপসের।

গাছে তুলে মই নিয়ে পালানোর কথা ঢের শুনেছে। কিন্তু বেলগাছে তুলে স্মার্টফোন আর সাইকেল নিয়ে কেটে পড়ার ভেলকি এই প্রথম।

দেখাল বছর চল্লিশের লোকটা। খানিক আগেই যাকে নিপাট ভদ্রলোক বলে মনে হয়েছিল তাদের। রাজবংশী পরিবারের তিন কিশোর এখন বলছে, ‘‘গাছে আমরা, নীচে বেল, লোকটা চোখের সামনে দিয়ে মোবাইল আর সাইকেল নিয়ে ধাঁ। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না!’’

নবদ্বীপের পুরনো বাসিন্দারাও এখন বলছেন, ‘‘চুরি, সিঁধ, কেপমারি বহু দেখেছি মশাই। কিন্তু এমন শিল্পী মানুষের কথা এই প্রথম শুনলাম। ওস্তাদের আশীর্বাদ আর তালিম না থাকলে কাজ সেরে এমন মাখনের মতো কেটে যাওয়া চাট্টিখানি কথা!’’

সে যে কী কথা, তা হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছে তিন জন— তাপস আর পানু দশম ও একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া, বাপি বছরখানেক আগে লেখাপড়ায় ইতি টেনেছে। বুধবার সকালে প্রাচীন মায়াপুরে চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমের কাছে বসে তারা আড্ডা দিচ্ছিল আর খুটখাট করছিল মোবাইলে।

তখনই ফল ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়ে আশ্রমে ঢোকে লোকটা। আশ্রম প্রধান অদ্বৈতদাস বাবাজির কথায়, ‘‘আমাদের গাছে বেল পেকেছে, লোকটা কিনতে চায়। বেল পিছু চার টাকা দর দেবে।’’ বাবাজি রাজি।

ব্যস, তিন ছোকরার কাছে গাছে উঠে বেল পাড়ার কথাটা পেড়ে ফেলে লোকটা। দু’শো টাকা করে মজুরি। পানু আর বাপি এক কথায় রাজি। নিজেদের মোবাইল তাপসের জিম্মায় রেখে তারা তরতর করে উঠে পড়ে গাছে। লোকটা তাপসকে বলে, ‘‘কী ভাইপো, ওরা কামাবে আর তুমি কামাবে না? গাছে উঠলেই দু’শো।’’

একটু পরেই পানু আর বাপি দেখে তাপসও পাশের গাছে উঠে পড়েছে। দু’জনেই সমস্বরে চিৎকার করে, ‘‘হ্যাঁ রে, ফোনগুলো কোথায়?’’ গাছতলা থেকে হাসিমুখে লোকটা বলে, ‘‘ফোন তিনটে আমার কাছেই। চিন্তা নেই। তাড়াতাড়ি হাত চালাও।’’

দেখতে-দেখতে গাছের তলা ভরে উঠছে পাকা বেলে। পেকে উঠছে ফাগুনের রোদ। হঠাৎই লোকটা যেন আকাশ থেকে পড়ল, ‘‘এই মরেছে! বেলগুলো নিয়ে যাব কী করে? বস্তাই তো ফেলে এসেছি। ভাইপো, এই সাইকেলটা তোমাদের? একটু নিচ্ছি। বস্তাগুলো নিয়েই ফিরব।’’

বলে, তিনটে মোবাইল পকেটে ভরে পানুর সাইকেল নিয়ে চলে গেল লোকটা। আর ফিরল না।

বেশ কিছু ক্ষণ বেলগাছে তীর্থের কাকের মতো বসে থাকার পরে নেমে তিন জনে ছুটল আশ্রমে। লোকটা কি এখানে এসেছে? সকলে বলল, না! লোকটা কোথায় থাকে, তা-ও কেউ জানে না। কেউ তাকে আগে দেখেনি। কপাল চাপড়ে নবদ্বীপ থানায় গিয়ে ডায়েরি করল তিন কিশোর। কিন্তু ডায়েরি পেয়ে পুলিশ আর কবে কাকে ধরতে পেরেছে!

অদ্বৈত দাস বলেন, ‘‘চিরকালই তো এ ভাবে এসে লোকে গাছের সুপারিটা, আমটা, নারকেলটা কিনে পেড়ে নিয়ে যায়। এমন ঘটনা এই প্রথম। কী দিনকাল পড়ল বলুন তো!’’

যদিও ওদের কারও নাম ‘ন্যাড়া’ নয়, তবু তিন কিশোর প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছে, ‘‘গাছে ওঠা তো দূর, ভুলেও আর বেলতলায় নয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Smart Phone Cycle Stolen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE