বিতর্কের মধ্যে থাকাটা তাঁর মজ্জাগত। পিতৃপরিচয় বিতর্ক, সেই মুকুটে নতুন একটা পালক মাত্র।
তৃণমূল কাউন্সিলর ভক্তিভূষণ রায় সম্পর্কে দলেরই এক নেতা মজা করছেন— ‘‘যা কিছু কালো, তার মধ্যে ভক্তিরস না থাকলে যেন সম্পূর্ণ হয় না!’’
ইতিমধ্যেই মাটি কাটা, সরকারি জমিতে লোক বসানো, জমি বিক্রি— অভিযোগের বিরাম নেই। এখন পিতৃপরিচয় প্রশ্নে পিছু হটেও তাই পার পাচ্ছেন না ভক্তিভূষণ।
কল্যাণীর পুরনো বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ভক্তির শেকড়টা লুকিয়ে আছে নিতান্তই নিম্নবিত্ত গৃহকোণে। ডিম বিক্রি করেই রোজগার করতেন তিনি। এখন বসত করেন পেল্লাই প্রাসাদে। শাসক দলে তাঁর প্রভাব এবং ক্রমে কাউন্সিলর হয়ে ওঠার গল্পটাও জড়িয়ে আছে এই অযাচিত প্রতিপত্তির সঙ্গে।
কল্যাণীর প্রান্তিক এলাকা, গঙ্গাপাড়ের মাঝেরচর একেবারে বিচ্ছিন এক জনপদ। সেই এলাকার বাসিন্দাদের অনেকের কাছে পাড়ার ছেলে ভক্তিভূষণের উত্থান আজও বিষ্ময়ের। দলের নেতা-কর্মীরাও আড়ালে প্রশ্ন তোলেন তা নিয়ে।
মাঝেরচরের মানুষ অবশ্য ভক্তিকে এখনও চেনেন, এক জন সবার বিপদে এগিয়ে আসা সাদা সাপটা মানুষ হিসেবে। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তাঁকে এ ভাবেই দেখে এসেছে তামাম মাঝেরচর। তখনও তিনি দোকানে দোকানে ডিম ‘সাপ্লাই’ করেন। পরের বছর, ২০০৫ সালে, পুরভোটে বামেরা কল্যাণী পুরসভা দখল করলেও মাঝেরচর এলাকায় জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী জ্যোৎস্না হালদার। তাঁর হয়ে কাজটা সামলে দিয়েছিলেন ভক্তি।
পরের নির্বাচনেই তাই দলের কাছে টিকিট দাবি করে বসেন। কিন্তু তৎকালীন কাউন্সিলরকে সরিয়ে ভক্তিকে টিকিট দিতে রাজি হয়নি দল। ছাড়ার পাত্র ছিলেন না ভক্তিও। দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন নির্দল হিসেবে। জিতেও গিয়েছিলেন বিপুল ভোটে। আর, জিতেই ফের পা বাড়িয়েছিলেন তৃণমূলে। ভক্তির বদলটা ধরা পড়ে এলাকার নিকাশির কাজ শুরু হওয়ার পরে। অভিযোগ, এই সময় সিন্ডিকেট তৈরির অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তার পরে একে একে বিভিন্ন বেআইনি ও অনৈতিক কাজে নাম জড়াতে থাকে তাঁর নাম। সরকারি জমিতে টাকা নিয়ে লোক বসানো থেকে সরকারি জমি দখল করে বিক্রি করা— বাদ যায়নি কিছুই।
দলেরই এক কাউন্সিলর বলছেন, ‘‘পুরনো বসত ছেড়ে তার হালের এই জেল্লা সবই বাঁকা পথে।’’ তাই নাকি? ভক্তি মৃদু হাসছেন, ‘‘কান দেবেন না ভাই, সবই অপপ্রচার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy