Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শীত-সন্ধ্যায় শক্তিপুরের ঠিকানা বইমেলার মাঠ

ঝুপ করে নেমে এল শীতের সন্ধ্যা। সেই বিকেল থেকেই মাইকে গান বেজে চলেছে। শক্তিপুরের বৃদ্ধা অপরাজিতা মণ্ডল ভেবেছিলেন, এলাকায় বুঝি কেউ পুজোর আয়োজন করেছে। ন’বছরের নাতি অন্তু মণ্ডলকে তিনি বলেন, ‘‘চল তো দাদুভাই, পুজো দেখে আসি।’’

শক্তিপুর বইমেলায়। নিজস্ব চিত্র

শক্তিপুর বইমেলায়। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস সৈয়দ
শক্তিপুর শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৮
Share: Save:

ঝুপ করে নেমে এল শীতের সন্ধ্যা। সেই বিকেল থেকেই মাইকে গান বেজে চলেছে। শক্তিপুরের বৃদ্ধা অপরাজিতা মণ্ডল ভেবেছিলেন, এলাকায় বুঝি কেউ পুজোর আয়োজন করেছে। ন’বছরের নাতি অন্তু মণ্ডলকে তিনি বলেন, ‘‘চল তো দাদুভাই, পুজো দেখে আসি।’’

নাতির হাত ধরে গায়ে চাদর জড়িয়ে গুটিগুটি পায়ে তিনি হাজির হন গানতলায়। প্যান্ডেলে ঢোকার আগে চাদরের ভেতর থেকে কোনও রকমে দু’হাত বের করে কপালে ছোঁয়ান তিনি। ওই দৃশ্য দেখে বিব্রত নাতি ডানে-বাঁয়ে দিক তাকিয়ে ঠাকুমার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলে, ‘‘ও ঠাকুমা, পুজো কোথায় গো! এখানে তো বইমেলা চলছে।’’

কিন্তু সে কথা শুনছে কে? ঠাকুমা বলছেন, ‘‘ওরে বাবা, বই মানেই তো বাগদেবীর আরাধনা। দেবী সরস্বতী বলে কথা। প্রণাম না করলে হয় নাকি!’’ কথা শেষ করেই এ বার নাতিকে নিয়ে সটান মেলার মাঠে ঢুকে পড়েন বৃদ্ধা অপরাজিতা। তার পরে গিয়ে বসে পড়েন সাংস্কৃতিক মঞ্চের সামনে।

যে শক্তিপুরে তুচ্ছ ঘটনায় বোমাবাজি, গুলি চলার মতো ঘটনা ঘটেই থাকে। যেখানে কয়েক বছর আগে এক মহিলার শ্লীলতাহানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের উপরে চড়াও হন এলাকার মানুষ। তৎকালীন মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রকুমারের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। শক্তিপুর থানার তৎকালীন ওসি তুহিন বিশ্বাসের মাথা ফাটে। হাসপাতালেও ভর্তি থাকতে হয় তাঁকে। গত পঞ্চায়েত ভোটেও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল শক্তিপুর। তবে জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে যেখানে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হয়নি, শাসক দলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন, সেখানে কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী ভাবে শক্তিপুর থানা এলাকার পাঁচটি পঞ্চায়েত রামনগর বাছড়া, সোমপাড়া-১ ও ২, শক্তিপুর ও কামনগরে ভোট হয়েছে।

সেই শক্তিপুর থানার প্রতাপ সঙ্ঘ ফুটবল ময়দানে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে ‘শক্তিপুর বইমেলা’। শক্তিপুর থানার পুলিশের উদ্যোগে দ্বিতীয় বর্ষের ওই বইমেলায় বাংলাদেশের বইয়ের দোকান ছাড়াও বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার ৫৭টি স্টল রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে তৃণমূল-কংগ্রেস-বিজেপির স্টল। সেখানে ওই তিন রাজনৈতিক দলের নেতারা পাশাপাশি বসে দলীয় বই বিক্রির ফাঁকে কথায়-আড্ডায় নির্ভেজাল সময় কাটাচ্ছেন। শক্তিপুর থানার ওসি পিন্টু মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এলাকার বিভিন্ন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পড়ুয়ারা মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে।’’

শীতের রাতে আগে যেখানে যাত্রা ও নাইট হত, এখন সে সব অতীত! ফলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বইমেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের টানে ভিড় করছেন বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। বেলডাঙা-২ (পশ্চিম চক্র) ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি ইন্দ্রনীল প্রামাণিক বলছেন, ‘‘দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের ভিড় হচ্ছে।’’ সূচনা দিনে বইমেলায় ভিড় দেখে জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘শক্তিপুরের মতো এলাকায় বইমেলাতে ভিড় ছিল অবাক করার মতো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Book Fair Shaktipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE