পাড় ভাঙছে নদী। শুক্রবার শক্তিপুরে। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক
গ্রামের পাশ দিয়ে আড়াআড়ি চলে গিয়েছে ভাগীরথী। বর্ষায় ফুলেফেঁপে ওঠা সেই নদীর ছলাৎ ছলাৎ শব্দে কাকভোরের নীরবতা খান খান হয়ে যাচ্ছিল। শব্দের উৎস যেখানে, সেদিকেই লাঠি হাতে এগিয়ে গেলেন ৭৭ এর বৃদ্ধ। মোটা পাওয়ারের চশমার মধ্যে দিয়েও অহিভূষণ মণ্ডলের ছলছলে চোখ স্পষ্ট হচ্ছিল।
নদীর দিকে তাকিয়ে অস্ফূটে বললেন, ‘‘এই গ্রামেই আমার বেড়ে ওঠা। জানেন, পড়শি গ্রামের লোকেরা আমাদের গ্রামের নাম দিয়েছেন ভাঙন গ্রাম। জন্মভূমিকে এ ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে দেখে বুকটা ফেটে যায়।’’
আদুরে একটা নাম খাতায়কলমে অবশ্য আছে অহিভূষণের গ্রামের। শিমূলডাঙা। গ্রাম্য উচ্চারণে কখনও কখনও তা হয়ে ওঠে শিমলেডাঙা। শক্তিপুর থানা থেকে দক্ষিণে এক কিলোমিটার গেলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে শিমূলডাঙায়। গ্রামে এক সময় তিনশোরও বেশি পরিবার ছিল। বৃদ্ধ জানালেন, গত কয়েক বছরে ভাগীরথীর ভাঙনে প্রায় দেড়শো বাড়ি জলের তলায় চলে গিয়েছে। রোজ একটু একটু করে গ্রাস করছে নদী। ইতিমধ্যে অনেকে ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁদেরও দিন কাটছে চরম আতঙ্কে।
স্বামী শ্বশুরের ভিটে আঁকড়ে এখনও পড়ে রয়েছেন সরমা মণ্ডল। ভাগীরথীর পাড় থেকে কয়েক মিটার দূরে তাঁর বাড়ি। মধ্য চল্লিশের মহিলা বলছিলেন, ‘‘রাতে ভয়ে ঘুম আসে না। একটু জোরে হাওয়া দিলেই ছিটেবেড়ার দরজা খুলে লম্ফ নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। অনেক সময়ে গ্রামের ছেলেপুলেরাও টর্চ নিয়ে সারারাত পাহারা দেয়। এভাবে কতদিন চলবে বলতে পারেন!’’ ভাঙনে ঘর ভেঙেছে গ্রামের গণপতি মণ্ডল, ইবন মণ্ডল ভক্তিপদ মণ্ডলদের। তাঁরা কেউ শ্বশুরবাড়িতে পরিবার নিয়ে উঠেছেন। একটু স্বচ্ছলরা নদী থেকে দূরে জমি কিনে থাকছেন।
বাপ-ঠাকুর্দার বাড়ি ছেড়ে যেতে পারেননি সুখেন মণ্ডলও। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘‘আমার বাড়ির একদিক নদীর ওপর ঝুলছে। চোখের সামনে একদিন তা ভেসে যাবে। কিছুই করতে পারব না। সরকার আমাদের কথা একবারও ভাবে না।’’
বেলডাঙা ২-এর বিডিও সমীররঞ্জন মান্না বলছেন, ‘‘ওই গ্রামে ভাঙনের সমস্যার কথা সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে। পাশের গ্রামে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। তারপর শিমুলডাঙায় কাজ শুরু হবে। ভাঙনে দুর্গতদের সরকার সবরকম সাহায্য করবে। প্রয়োজনে তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy