Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রবিবাসরীয় ‘ডিগবাজি’ নিয়ে জল্পনা

মুখে কুলুপ আঁটলেও মুর্শিদাবাদ জুড়ে কংগ্রেসের ঘর ভাঙার কারিগর শুভেন্দু যে এ ব্যাপারেও তলে তলে কাজ এগিয়ে রেখেছেন, তা মনে করছেন জেলা বিজেপির এক নেতা।

জনসভার জন্য সেজে উঠছে রানিনগরের মাঠ। নিজস্ব চিত্র

জনসভার জন্য সেজে উঠছে রানিনগরের মাঠ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩২
Share: Save:

তাঁর ফোন বন্ধ। তিন রাজ্যে কংগ্রেসের তুমুল সাফল্যের পর থেকেই তিনি অধরা। সে দিন বহরমপুর শহর জুড়ে কংগ্রেসের মিছিল, আবির, মিষ্টিমুখের ছড়াছড়ি। দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুরনো দিন মনে করিয়ে দেওয়া জমায়েত। আর হাসপাতাল লাগোয়া বিজেপির সদর দফতরে নতমুখ বিজেপি কর্মীদের পিঠে হাত রাখার মতোও কেউ নেই। দলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ? ফোন বন্ধ তাঁর সে দিন থেকেই!

কংগ্রেস, তৃণমূল ঘুরে বিজেপিতে যোগ দেওয়া এক নেতা বলছেন, ‘‘গৌরী বড় ভয়ে, বড়ই অস্বস্তিতে। ওর উপরে বড় চাপ!’’ কীসের চাপ? এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘এর উত্তরটা রবিবার রানিনগরে শুভেন্দু অধিকারীর জনসভায় পেয়ে যাবেন!’’

গুঞ্জন নতুন নয়। গ্যাস-সিলিন্ডার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের তালিকায় গৌরীর নাম রয়েছে প্রথম দিকেই। তৃণমূলের অন্দরের খবর, সেই সুবাদে তাঁর উপরে চাপটা এ বার দল-বদল পর্যন্ত না গড়ায়! অভিযোগের তালিকা থেকে নাম ‘কাটাতে’ ওই যোগ দেওয়াটাই নাকি শর্ত বলে জানাচ্ছেন জেলার এক প্রথম সারির তৃণূল নেতা।

তাই রবিবারের জনসভায় গৌরীর মঞ্চে থাকা নিয়ে মুর্শিদাবাদ এখন তোলপাড়। তবে, গৌরীর ফোন বন্ধ। দলের অন্য নেতারাও বলছেন, ‘‘আরে দাদা যে কোথায় কেউ জানে না।’’ তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি, ‘বিশেষ’ কাজে দলের জেলা সভাপতি বেঙ্গালুরু গিয়েছেন। তবে প্রাক্তনমন্ত্রী হুমায়ুন কবীর ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘কে জানে ও কোথায়, কখনও শ্বশুরবাড়ি মালদহ থেকে কখনও কলকাতা থেকে ফোন করেছে আমায়। এটুকুই বলতে পারি।’’ বিজেপি’র ভারপ্রাপ্ত জেলা সভাপতি তপন চন্দ্র জানিয়েছেন, গৌরীর ‘দলবদল’ নিয়ে গুজব তাঁর কানেও এসেছে। তবে তার সত্যতা যাচাই করতে পারেননি তিনি।

রবিবারের সভায়, গৌরীর সঙ্গে বিজেপিতে ধস নামাতে চলেছে বলে তৃণমূলের যে প্রচার, সেই তালিকায় অবশ্য হুমায়ুন নিজেও রয়েছেন। রয়েছে জলঙ্গির সিপিএম বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাকের নামও। রাজ্জাক অবশ্য সে কথা মানতে চাননি। বলছেন, ‘‘এ সবই মিথ্যে প্রচার।’’ তবে, হুমায়ুন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে জানিয়েছেন, প্রস্তাব তাঁর কাছে এসেছিল। বলছেন, ‘‘বললেই তো আর তৃণমূলে যোগ দিতে পারি না। দলের কোন স্তর থেকে প্রস্তাব আসছে, কোন পদে কেমন সম্মান দিয়ে কি দায়িত্ব দেওয়া হবে আমায় জানাক ওরা, তার পরে না হয় ভেবে দেখা যাবে!’’ দলের জেলা পর্যবেক্ষক এবং পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু নিজে অবশ্য দলবদল নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। হেঁয়ালি রেখে হাসছেন তিনি, ‘‘আমি কিছু জানি না!’’ তবে, তাঁর ঘনিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই সভায় অনেকেই এক সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে। মুখে কুলুপ আঁটলেও মুর্শিদাবাদ জুড়ে কংগ্রেসের ঘর ভাঙার কারিগর শুভেন্দু যে এ ব্যাপারেও তলে তলে কাজ এগিয়ে রেখেছেন, তা মনে করছেন জেলা বিজেপির এক নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘ধমকে-চমকে-আশ্বাসে দলে লোক টানতে শুভেন্দুবাবুর যে জুড়ি নেই তা বিরোধীরা কম বেশি জানেন। কাজেই বিজেপির ঘাড়েও যে তিনি শ্বাস ফেলবেন তা নতুন কী!’’

ঘর ভাঙার সেই নিরন্তর খেলায় এক সময়ে দলনেত্রীকেও আশ্বাস দিতে হয়েছিল, ‘আর নয়’। তবে তাতেও যে ইতি পড়েনি দিন কয়েক আগে রসুলপুরের সভায় তার প্রমাণ মিলে গিয়েছে। পরিবহণমন্ত্রীর সেই সভায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন দু’বারের সিপিএম বিধায়ক নবগ্রামের কানাই মণ্ডল। এই অবস্থায়, রবিবার শুভেন্দুর রানিনগরের সভাতেও ‘ডিগবাজি’ দেখা যেতে পারে বলেই মনে করছেন তৃণমূলের মেজ-সেজ নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad BJP Suvendu Adhikari TMC Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE