Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
আ মরি সীমান্ত

বাংলা বললে বিপদ বাড়ে!

ওই চাষির বাংলা কথা বিএসএফ জওয়ান বুঝতে পারেননি। কিন্তু তাঁর অভিব্যক্তি দেখে জওয়ানের মনে হয়, চাষি নির্ঘাৎ তাঁকে গালমন্দ করল। ব্যস! এই মনে হওয়া থেকে চাষিকে নিয়ে যাওয়া হল ক্যাম্পে।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
 জলঙ্গি শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৩৩
Share: Save:

পদ্মায় পাঁট জাঁক দিচ্ছিলেন জলঙ্গি সীমান্তের এক চাষি। বিএসএফের এক জওয়ান স্পষ্ট হিন্দিতে তাঁকে আরও একটু দূরে সরে গিয়ে পাট জাঁক দিতে বলেন। এমনিতেই নিরাপত্তার কারণে সীমান্তে পাটচাষ নিয়ে কয়েক বছর ধরেই চাপানউতোর চলছে। বিরক্ত হয়ে সেই চাষি শুধু বলেছিলেন, ‘ধুস, আর পাট চাষই করব না!’

ওই চাষির বাংলা কথা বিএসএফ জওয়ান বুঝতে পারেননি। কিন্তু তাঁর অভিব্যক্তি দেখে জওয়ানের মনে হয়, চাষি নির্ঘাৎ তাঁকে গালমন্দ করল। ব্যস! এই মনে হওয়া থেকে চাষিকে নিয়ে যাওয়া হল ক্যাম্পে। তার পরে স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য এসে পরিস্থিতি সামাল দেন।

কথায় আছে, আশায় বাঁচে চাষা। সীমান্তের চাষিরা শুধু আশা নয়, তাঁদের ভাল-মন্দও নির্ভর করে ভাষার উপরেও। শুধু চাষি কেন, সীমানা পেরিয়ে নদীতে যাঁরা মাছ ধরতে যান সেই মৎস্যজীবীরাও খুব ভাল করে জানেন, হিন্দিভাষী বিএসএফকে মাতৃভাষা বলেও কখনও কখনও কী বিপদে পড়তে হয়!

জলঙ্গি, রানিনগর, শেখপাড়া বা সাগরপাড়া সীমান্তে বিএসএফের সঙ্গে হিন্দি বলতে না পেরে বা ভুল হিন্দি বলে কত লোক যে বিএসএফের কাছে হেনস্থা হয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। সীমান্তের লোকজনের অভিযোগ, এ ব্যাপারে কোথাও নালিশ জানিয়েও সুরাহা মেলে না। বরং উল্টে শুনতে হয়, ‘হিন্দিটা শিখে নিলেই তো আর এই সমস্যা হয় না।’

সীমান্তের লোকজনের দাবি, এমনিতেই সীমান্তে হাজারও সমস্যা রয়েছে। সব সময় সে সবের খেসারত দিতে হয় চাষি ও মৎস্যজীবীদের। এখন চাষ করতে বা মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য যদি তাঁদের হিন্দিটাও শিখতে হয় তা হলে তো সমস্যার। সমস্যাটা যে গুরুতর তা মানছেন স্থানীয় প্রশাসনের বহু কর্তাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, অন্য সীমান্তের সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পার্থক্য রয়েছে। এখানে দুই বাংলার ভাষা, চেহারা, কাজকর্ম কমবেশি একই রকম।

ফলে রাজস্থান বা কাশ্মীর সীমান্ত থেকে বাংলা সীমান্তে এসে বহু বিএসএফের প্রথম দিকে বেশ সমস্যা হয়। সেই জওয়ানেরা সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখেন। দুই সীমান্তের ভাষা এক হওয়ার কারণে তাঁরা আরও বিভ্রান্ত হন।

বিএসএফের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, এই সমস্যা আগের চেয়ে এখন অনেকটাই কমেছে। সীমান্তে এখন অনেক মহিলা জওয়ান এসেছেন। তাঁদের অনেকেই বাঙালি। ফলে বাংলায় তাঁরা দিব্যি কথা বলতে পারেন। তা ছাড়া বাংলা সীমান্তে কাজ করতে এসে বিএসএফকেও বাংলা শিখতে হচ্ছে। ফলে অনেকেই কাজ চালানোর মতো বাংলা বলতে পারেন। যা শুনে এক চাষি বলছেন, ‘‘আমাদের হিন্দি শুনে ওরা রেগে যায়। ওদের বাংলাটা যদি এক বার শুনতেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jalangi BSF Indo Bangladesh Border
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE