Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Bhandardaha

কালো জলে ভয়ের ছায়া

দু’বছরে অনেকটাই বদলে গিয়েছে বালিরঘাট-সেতু। আধ-ভাঙা কংক্রিটের রেলিংয়ের পাশে পোক্ত ক্র্যাস ব্যারিয়ার।

সেদিন: বিলের কালো জল থেকে তোলা হল ডুবে যাওয়া বাস। দু’বছর আগের সেই ভোরবেলা এখনও যেন স্পষ্ট হয়ে আছে বালিরঘাটে। (ফাইল চিত্র)

সেদিন: বিলের কালো জল থেকে তোলা হল ডুবে যাওয়া বাস। দু’বছর আগের সেই ভোরবেলা এখনও যেন স্পষ্ট হয়ে আছে বালিরঘাটে। (ফাইল চিত্র)

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বালিরঘাট শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৩৭
Share: Save:

দু’বছরে অনেকটাই বদলে গিয়েছে বালিরঘাট-সেতু। আধ-ভাঙা কংক্রিটের রেলিংয়ের পাশে পোক্ত ক্র্যাস ব্যারিয়ার। খান দুয়েক স্পিড ব্রেকার। সেতুর উপরে ঝকঝকে রাস্তায় মাস তিনেক অন্তর পিচ পড়ে নিয়ম করে। বছরে এক বার নীল-সাদা রংয়ের পোঁচ। সেতুর দু’মাথায় নজরদারির জন্য দু-দু’টি ওয়াচ টাওয়ার। দু’বছরের পুরনো দুর্ঘটনার স্মৃতি আষ্টেপৃষ্টে বুকে নিয়ে চুপ করে আছে বালিরঘাট সেতু।

মুখ্যমন্ত্রী থেকে তাবড় পুলিশ কর্তা, বিরোধী নেতা থেকে সর্বভারতীয় চ্যনেলের ভিড়— দু’বছর আগে ঠিক এই দিনেই সব দেখেছিল দৌলতাবাদের এই প্রান্তিক জনপদ। তার পরেই একে একে শুরু হয়েছিল সংস্কার আর সচেতনতার প্রচার।

তবে, সেতুতে এ সবই হয়েছে ৪৪টি প্রাণের বিনিময়ে। ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি ভোরে সেতুর রেলিং ভেঙে যে যাত্রিবাহী বাস বিলের জলে তলিয়ে গিয়েছিল। নিরন্তর চেষ্টার পরে তাকে তোলা হয় দু’দিন পরে। মৃতের সংখ্যা ৪৪। আহত ১৩।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই মাস খানেকের মধ্যেই সেজেগুজে উঠেছিল নড়বড়ডে বালিরঘাট সেতু। তবে, সব শোকেরই শেষ থাকে, থিতিয়ে আসে স্মৃতি। তাই এত কিছুর পরেও বালিরঘাটের ১২৪ মিটার দীর্ঘ সেতুতে এখনও লাগেনি আলো। বিকেল ফুরোলেই সেই পুরনো অন্ধকার। সেতুর দুই মুখে যে ওয়াচ টাওয়ার বসেছিল, সেখানে পুলিশ কর্মী নয়, এখন দখল নিয়েছে আগাছা। বুনো গাছের ঝোপ পেরিয়ে লোহার সিঁড়ি বেয়ে সেই টাওয়ারে ওঠার উপায়ই আর নেই। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব বলছেন, ‘‘ওয়াচ টাওয়ার দু’টিতে খুব দ্রুত পুলিশ পোস্টিং করা হবে।’’ মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনাও তড়িঘড়ি জানিয়ে রাখছেন, সেতুতে শীঘ্রই আলোর ব্যবস্থা করা হবে বলে।

অন্ধকার সেই সেতুতে গত দু’বছরে, বড় মাপের না হলেও ছোটখাটো দুর্ঘটনা যে লেগেই আছে, পুলিশের পরিসংখ্যান তা মেনে নিচ্ছে। বালিরঘাটের বাসিন্দা সুদীপ্ত মণ্ডল সে দিন নৌকা নিয়ে ডুবন্ত যাত্রীদের কয়েকজনকে ভান্ডারদহ বিল থেকে উদ্ধার করে‌ছিলেন। তিনি বলছেন, ‘‘সেতুর সংস্কার হয়েছে, তবে আলো বসেনি। ব্রিজের উপরে গাড়ি তাই সাবধানে চলাচল করে। তবে বেপরোয়া চালকের তো অভাব নেই! অনেকেই রাতের আঁধার ফুঁড়ে গাড়ি হাঁকান।’’সে দিকে খেয়াল রাখার জন্যই বসেছিল ওয়াচ টাওয়ার। কিন্তু বছর খানেক হল সেই টাওয়ারে পুলিশ তো দূরের কথা, গ্রামবাসীরা বলছেন, কাক পক্ষীও বসে না! আজ, বুধবার সেই সেতুতে দুর্ঘটনার দ্বিতীয় বর্ষে চালকদের সচেতন করা হবে। দৌলতাবাদ বাজার কমিটির সম্পাদক পান্না সরকার বলছেন, ‘‘মানুষ বড় তাড়াতাড়ি ভুলে যায়, না হলে এখনও কানে ফোন নিয়ে গাড়ি চালায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhandardaha Balirghat Bridge Bus Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE