ঝড়ের-রাতে: সাগরদিঘির গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
ছাব্বিশ বছর আগের একটা ঝোড়ো স্মৃতি যেন সপাটে আছড়ে পড়ল সাগরদিঘির সাতটি গ্রামে।
শুক্রবার রাতের ওই ঝড়ে উড়ে গেল অজস্র বাড়ির টিনের চাল, ভেঙে পড়ল কবেকার পুরনো গাছ, মুখ থুবড়ে পড়ল বিদ্যুতের খুঁটি। ১৯৯৩ সালে কান্দির টর্নেডো যেন যেন নতুন করে মনে পাড়িয়ে দিয়ে গেল সাগরদিঘিকে। সৈকত মাহাত (২৪) নামে বর্ধমানের এক যুবক গ্রামে এসেছিলেন হারভেস্টিং মেশিন সারাতে। বাজ পড়ে মারা গিয়েছেন তিনি। আহত অন্তত সাত।
ইদের মুখে ওই প্রবল সান্ধ্য ঝড়ের দাপটে সাগরদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের হরহরি, বয়ার, গড়গড়া, ছামুগ্রাম, যুগোর, হলদি, কুন্দরের মতো গ্রামগুলিতে গিয়ে দাঁড়ালে মনে হচ্ছে, বিধ্বংসী কোনও যুদ্ধ সদ্য শেষ হয়েছে সেখানে। সাগরদিঘির পঞ্চায়েত প্রধান অরূপ মন্ডল বলেন, ‘‘বৃষ্টির সঙ্গে আচমকা রাত ৮টা নাগাদ ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হয়। সঙ্গে অনর্গল বজ্রপাত। বেশি নয় বড়জোর মিনিট কুড়ি, গ্রামগুলোকে একেবারে তছনছ করে দিয়ে গেল। আমরা তো ভাবছিলাম প্রলয় শুরু হল!’’ প্রাথমিক হিসেবে দেখা গিয়েছে, সাত গ্রামে ১৬০টি বাড়ি একেবারে মাটিতে মিশে গিয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে শ’দেড়েক বাড়ির। কয়েকশো গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। রোজার রাতে অনেকেই যখন রান্নায় ব্যস্ত তখনই প্রবল বেগে ঝড় ওঠে। এর আগাম কোনো পূর্বাভাস না থাকায় বিপদে থেকে বাঁচার কোনও সুযোগই পাননি গ্রামবাসীরা।
শুক্রবার সকালে হরহরিতে গিয়ে গিয়ে দেখা গেল, কেউ ছাদ-হীন বাড়িতে পলিথিনের চাদর বিছিয়ে আশ্রয় খুঁজছেন। কেউ ব্যস্ত বাড়ির চালে আছড়ে পড়া গাছের ডাল সরাতে। গোয়াল গুঁড়িয়ে গিয়েছে, ভেঙে গিয়েছে হাঁস-মুরগির ঘর— আশ্রয়হীন ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা।
দিনমজুর ইকবাল আহমেদ গিয়েছিলেন মসজিদে নামাজ পড়তে । বাড়িতে ছিলেন স্ত্রী ও দুই ছেলে। বলছেন, “ঝড় উঠতেই প্রচণ্ড আওয়াজ চারদিকে। সবাই চিৎকার করছে। গাছ ভেঙে পড়ার শব্দ। কিছুই করার ছিল না। সঙ্গে অঝোর বৃষ্টি আর বাজ পড়া।” হাবিবুল্লা চৌধুরী অবশ্য অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন সপরিবারে। ইফতার সেরে সকলেই গরমের জন্য বাড়ির পাশেই পাকুড় গাছের নিচে বসেছিলেন। হাবিবুল্লা বলছেন, “বৃষ্টি শুরু হলেও গাছের নিচে ছিলাম বলে গায়ে তখনও জল পড়েনি। ঝড়টা এল হঠাৎ ঘরে ঢুকতে যাব পাকুড়ের বিশাল ডালটা ভেঙে পড়ল খড়ের চালার উপর।” গোটা বাড়ির টিন এ দিন ঝড়ে উড়ে গেছে জামাল শেখেরও। তিনি গাঙ্গাড্ডায় ছিলেন। স্ত্রী রাসেদা বলছেন, “বাড়িতে শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়ে এসেছে। দুই ছেলেকে নিয়ে ঘরে বসে আছি। আচমকাই ঝড়ের এক ঝটকা। বিকট শব্দ। উপরে তাকিয়ে দেখি বাড়ির মাথায় টিনের
ছাদ উধাও!’’
এ প্রসঙ্গে বিডিও শুভজিৎ কুণ্ডু বলছেন, “সাতটি গ্রামেই ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে সরকারি তরফে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy