Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাইকেলের গতি কমায় ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা

সাইকেলের গতি কমেছে যত, বিক্ষোভ বেড়েছে তত বেশি! ডোমকল, বেলডাঙা, বাদকুল্লা, সাগরপাড়া, জলঙ্গি—তালিকাটা বেশ লম্বা। কোথাও সাইকেলের দাবিতে পথ অবরোধ করে পুলিশের মার খেয়েছে পড়ুয়ারা।

সবুজ সাথীর সাইকেল

সবুজ সাথীর সাইকেল

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও শুভাশিস সৈয়দ
কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০১:০৮
Share: Save:

সাইকেলের গতি কমেছে যত, বিক্ষোভ বেড়েছে তত বেশি!

ডোমকল, বেলডাঙা, বাদকুল্লা, সাগরপাড়া, জলঙ্গি—তালিকাটা বেশ লম্বা। কোথাও সাইকেলের দাবিতে পথ অবরোধ করে পুলিশের মার খেয়েছে পড়ুয়ারা। কোথাও বিক্ষোভ থামাতে গিয়ে প্রহৃত হয়েছেন খোদ শিক্ষক। সবুজ সাথী প্রকল্পে সাইকেল না পেয়ে একের পর এক এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন।

সাইকেল না পাওয়া পড়ুয়াদের অভিযোগ, এ তো এক যাত্রায় পৃথক ফল হচ্ছে। পড়শি স্কুল কিংবা উঁচু ক্লাসের ছেলেমেয়েরা সাইকেল পেয়ে গিয়েছে। সকাল বিকেল সেই নতুন বাহনে তারা চড়কি পাক দিচ্ছে এ পাড়া সে পাড়া। আর তাঁরা সাইকেলের কথা বললেই শিক্ষকদের কাছে শুনতে হচ্ছে— ‘এখনও সাইকেল আসেনি। এলে তোরাও পাবি।’

কিন্তু কবে আসবে সেই সাইকেল?

দিনের পর দিন তার কোনও সদুত্তর না মেলায় ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রছাত্রীরা কেউ বিক্ষোভে সামিল হচ্ছে, কেউ নেমে পড়ছে পথ অবরোধে। সম্প্রতি সাইকেলের দাবিতে জলঙ্গি সীতানগর হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বহরমপুর-ধনীরামপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করেছিল। অভিযোগ, রাস্তা ‘পরিষ্কার’ করতে ছাত্রছাত্রীদের উপর বেধড়ক লাঠি চালায় পুলিশ। জখম হয় দ্বাদশ শ্রেণির সাত পড়ুয়া। উত্তেজিত হয়ে পড়ুয়াদের একাংশ পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করে। একই দাবিতে কুমারপুর ভোলানাথ মেমোরিয়াল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়েও বিক্ষোভ দেখায় পড়ুয়ারা। বাধা দিতে গেলে প্রহৃত হন এক শিক্ষক। বেলডাঙা থানায় কয়েক জন ছাত্রের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়।

বিক্ষোভের মাত্রা এতটা না হলেও সাইকেল না পাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে নদিয়াতেও। প্রায় ৭ মাস আগে নবম থেকে দশম শ্রেণিতে উঠলেও এখনও সাইকেল পায়নি নদিয়ার প্রায় ৮৫ হাজার ছাত্রছাত্রী। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সাইকেলের পরিবর্তে তাঁদের হাতে সাইকেল দেওয়া হবে বলে একটি করে অঙ্গীকারপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। নদিয়ার জেলাশাসকের সই করা সেই অঙ্গীকারপত্রে বলা হয়েছে—রাজ্যে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ৪০ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে সবুজসাথী প্রকল্পে সাইকেল দেওয়া হবে। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে রাজ্যে ২৫ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর হাতে সাইকেল তুলে দেওয়া হয়েছে। ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে বাকিদেরও সাইকেল দেওয়া হবে। স্কুল থেকে সময় মতো জানিয়ে দেওয়া হবে কবে সাইকেল দেওয়া হবে।

নদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শঙ্কর নস্কর জানান, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির সব ছাত্রছাত্রীকে সাইকেল দেওয়া হয়েছে। কিছু ছাত্রছাত্রী নানা কারণে সাইকেল নিতেই আসেনি। ২০১৫ সালে নবম শ্রেণির (বর্তমানে দশম শ্রেণি) পড়ুয়াদের জন্য সাইকেল দেওয়ার নির্দেশিকা জেলাতে এসেছে। তবে এখনও তাঁদের জন্য সাইকেল আসেনি। সাইকেল এলেই তা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিলি করা হবে।

কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া রাহুলকুমার সিংহের কথায়, ‘‘এক বছর আগেই আমাদের সাইকেল দেওয়ার কথা ছিল। অন্য ক্লাসের ছাত্ররা সাইকেলে পেলেও আমরা এখনও সাইকেল পাইনি। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে সাইকেল দেওয়া হবে বলে আমাকে একটি সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়েছে। ওই পর্যন্তই!’’

বেলডাঙার কুমারপুর ভোলানাথ মেমোরিয়াল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাসুদেব রায় বলেন, ‘‘২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে দশম শ্রেণির ছাত্ররা যারা মাধ্যমিক পাশ করে গিয়েছে তারা ছাড়া কেউ ওই সরকারি প্রকল্পের আওতায় সাইকেল পায়নি। যদিও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ওই প্রকল্পের আওতায় সাইকেল দেওয়ার কথা রয়েছে।’’

বাসুদেববাবু জানান, সবুজ সাথী নামে ওয়েবসাইট রয়েছে। ওই ওয়েবসাইটে ছাত্রছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হয়। তার আগে কোন ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সাইকেল বিলি করা হবে, তা স্থানীয় ব্লক প্রশাসন ফোন করে জানিয়ে দেয়। সেই মতো ছাত্রছাত্রীদের বায়োডাটা পূরণ করে দেওয়ার দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের। ওই পূরণ করা ফর্ম ডাউনলোড করে দুটো জায়গা ফাঁকা রাখা হয়— পড়ুয়াদের ফটো লাগানোর জায়গা এবং স্বাক্ষরের জায়গা। পরে সাইকেল বিলি করার সময়ে ফর্মের ওই দুটো জায়গায় ফটো ও স্বাক্ষর করলে সেই ছাত্রছাত্রীকে সাইকেল দেওয়া হয়।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কেন?

সবুজ সাথী প্রকল্পের মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যবেক্ষক মানবেন্দ্র দাস বলেন, ‘‘২০১৫ সালের শিক্ষাবর্ষে জেলায় প্রায় ১ লক্ষ ৮৭ হাজার সাইকেল আসার কথা ছিল। কিন্তু সেই সংখ্যক সাইকেল আসেনি। ফলে ভোটের আগে পর্যন্ত ৬০ হাজার ২৪০টি সাইকেল বিলি করা সম্ভব হয়েছে। বাকি সাইকেল অগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলায় আসতে শুরু করবে। ওই সাইকেল বিলি করতে সেপ্টেম্বর হয়ে যাবে।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীর নাম ওয়েবসাইটে নথিভূক্ত রয়েছে তাঁরা সকলকেই সাইকেল পাবে। এটা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।’’

সাইকেলের চাকা কবে গড়তে শুরু করে, সেটাই দেখার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student Bicycle Sabuj Sathi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE