Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আন্দুলিয়ায় স্কুলের পথে ডুবে মৃত্যু খুদে পড়ুয়ার

অতীত থেকে শিক্ষা নিল না মুর্শিদাবাদ! দিন কয়েক আগে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের মহব্বতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে জলে ডুবে মারা গিয়েছিল এক পড়ুয়া। সেই ঘটনার রেশ না মিটতেই এ বার স্কুলে যাওয়ার পথে জলে ডুবে মৃত্যু হল কান্দির আন্দুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক পড়ুয়ার। এই ঘটনায় অবশ্য এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ দুষছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতকে।

মেয়েকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অশোক পাল।—নিজস্ব চিত্র

মেয়েকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অশোক পাল।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৫ ০০:৪১
Share: Save:

অতীত থেকে শিক্ষা নিল না মুর্শিদাবাদ! দিন কয়েক আগে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের মহব্বতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে জলে ডুবে মারা গিয়েছিল এক পড়ুয়া। সেই ঘটনার রেশ না মিটতেই এ বার স্কুলে যাওয়ার পথে জলে ডুবে মৃত্যু হল কান্দির আন্দুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক পড়ুয়ার। এই ঘটনায় অবশ্য এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ দুষছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতকে।
টানা বৃষ্টিতে পুকুরের জল উঠে এসেছিল রাস্তায়। জলের তোড়ে মোরাম রাস্তার বেশ কিছু অংশ ধুয়ে গিয়েছিল। যে কোনও মুহূর্তে সেই রাস্তায় যে বিপদ ঘটতে পারে তেমন আশঙ্কাও করেছিলেন কেউ কেউ। শনিবার সকালে সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়ে গেল।
এ দিন সকালে স্কুলে যাবে বলে বেিরয়েছিল কান্দির আন্দুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা চুমকি পাল (১২)। বাড়ির অদূরে রাস্তার সেই ভাঙা অংশে পা দিয়ে সে আর নিজেকে সামলাতে পারেনি। জলে তলিয়ে গিয়েছিল। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পরে উদ্ধার হয় তার নিথর দেহ। ওই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা গ্রামে।
এর আগে ওই গ্রাম প্লাবিত না হলেও এ বছর টানা বৃষ্টিতে জলবন্দি হয়ে পড়ে গোটা গ্রাম। পুকুর, ডোবা উপচে গিয়ে আলাদা করে মাঠঘাট চেনার কোনও উপায় নেই। যে দিকে চোখ যায় শুধু জল আর জল। আর তাতেই কাল হয়েছে বলে জানান গ্রামবাসীরা।
মৃতার বাবা পেশায় দিনমজুর অশোক পাল বলেন, “রাস্তাতে যে ভাবে জল দাঁড়িয়েছে তাতে ভাবছিলাম গ্রামের কোনও ছেলেমেয়ে না ডুবে যায়। আর সেটাই ঘটল।’’
তবে ওই ঘটনার জন্য পঞ্চায়েতকে সরাসরি দায়ী করছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, গ্রামের নিকাশি নালাগুলি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হয়নি। তার ফলে গ্রামে জমা জল ঠিক মতো বেরোতে পারছে না। পুকুর, নালার জল উপচে রাস্তায় উপর দিয়ে বইছে।

স্থানীয় বাসিন্দা তালেব শেখ, রতন পালেরা বলেন, ‘‘গ্রামের নালাগুলি সংস্কারের জন্য পঞ্চায়েতকে বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘ভোট এলে নেতারা প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেন। কিন্তু তার কিছুটা যদি বাস্তবায়িত হত তা হলে মেয়েটিকে আর এ ভাবে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হত না।’’

অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আন্দুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের মালেক শেখ বলেন, ‘‘ঘটনাটা দুঃখজনক। তবে অভিযোগ ঠিক নয়। কিছু কিছু নালা সংস্কার হয়েছে। কিন্তু বর্ষা চলে আসায় সব নালা সংস্কার করা যায়নি।’’

পঞ্চায়েতের দাবি, নালা সংস্কারের আগে থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া এ বার গ্রামের চারদিক এমনিতেই প্লাবিত হয়ে আছে। তাই গ্রামের জল নেমে মাঠের দিকে যাচ্ছে না। সে কারণে গ্রামের সব রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

কান্দি মহকুমাশাসক বিজিন কৃষ্ণ জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ও নদীগুলিতে জলাধারের জল ছাড়ায় জল সরছে না। চারিদিকে জল জমে রয়েছে। মহকুমার অধিকাংশ পড়ুয়াদের তাই জল ঘেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে। কোথাও নৌকাতে চেপে স্কুলে যেতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করা যায় কিনা তা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে কথাবার্তা শুরু হয়েছে।

এ দিন অবশ্য নদিয়ার হরিণঘাটায় তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যের যে সব এলাকায় প্লাবন হয়েছে, সেই সব এলাকার স্কুল-কলেজ এবং যে সব স্কুল-কলেজে মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন সেই সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন জেলাশাসক।’’

এ দিন ওই স্কুল পড়ুয়া ছাড়াও দুই জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কারণে আরও চার জন মারা গিয়েছেন। তাঁরা চাকদহের লালজি মাহাতো (৩৮), আবেদিন তরফদার (৬৫) ও নাকাশিপাড়ার সাবদুল শেখ (৩৫)। জলে ডুবে মারা গিয়েছেন বাদল মির্জা (৬০) নামে সালার থানার এক বাসিন্দা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE