Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Child marriage

বিয়ে রুখতে বিডিও-র কাছে ছাত্রী

বিডিও-কে এসব কথা জানাতেই ব্লকে হাজির হন কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কো-অর্ডিনেটর জাকিরন বিবি, কন্যাশ্রী যোদ্ধা শামিমা, দিলরুবা, সাহিনারা। তাদের দেখে মনোবল ফিরে পায় কিশোরী।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

মফিদুল ইসলাম
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:১৪
Share: Save:

নিজের বিয়ে বন্ধের আর্জি নিয়ে সটান বিডিও অফিসে হাজির হল বছর পনেরোর এক আদিবাসী কিশোরী। সাড়ে তিন কিমি পথ পায়ে হেঁটে বিডিও অফিসে হাজির হয় সে। হরিহরপাড়ার ঘটনা। জানা গিয়েছে, ওই কিশোরীর নাম পায়েল মাল (১৫)। তার বাড়ি হরিহরপাড়ার দস্তুরপাড়া গ্রামে।সোমবার দুপুরে নিজের অফিসের ঘরে বসে দফতরের কাজ সামলাচ্ছিলেন হরিহরপাড়া ব্লকের যুগ্ম বিডিও বিধান মৃধা। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠেই তাঁর চেম্বার। হঠাৎই সেখানে হাজির ওই কিশোরী। যুগ্ম বিডিও ‘কী সমস্যা জানতে চাওয়ায় তার চোখের কোণে জলের ধারা। চোখের জল মুছতে মুছতেই কিশোরীর আর্তি, ‘স্যর আমার বাড়ির লোক জোর করে আমার বিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমি পড়তে চাই। আমায় বাঁচান।’’ কিশোরীর মুখে এমন কথা শুনে চমকে ওঠেন ওই সরকারি আমলা। ওই কিশোরীকে নিয়ে তিনি যান বিডিওর কাছে। বিডিও-র চেম্বারে বসে কিশোরী জানায়, স্থানীয় একটি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে সে ক্লাস সিক্সে পড়ে। কিন্তু পরিবারের লোকেরা তার অমতেই বিয়ের বন্দোবস্ত করেছেন। আজ, মঙ্গলবার ছিল তার বিয়ের দিন। পাত্র পেশায় দিনমজুর। পাশের দৌলতাবাদ থানা এলাকায় তার বাড়ি। কিশোরী জানিয়েছে, তার গ্রামে অন্য মেয়েদেরও অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তারা পড়াশোনার সুযোগ পায় না। ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হতে চায় সে। পায়েলের বাবা রিপন মাল, মা সুমিতা মাল, দু’জনেই দিনমজুর। তার ভাই লেখাপড়া শেখেনি। কলকাতায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে সে।

বিডিও-কে এসব কথা জানাতেই ব্লকে হাজির হন কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কো-অর্ডিনেটর জাকিরন বিবি, কন্যাশ্রী যোদ্ধা শামিমা, দিলরুবা, সাহিনারা। তাদের দেখে মনোবল ফিরে পায় কিশোরী। এরপর এদিন বিকেলে ব্লকের সমাজকল্যাণ আধিকারিক, কয়েক জন কন্যাশ্রী যোদ্ধা ও হরিহরপাড়া থানার পুলিশ ওই কিশোরীর বাড়িতে হাজির হন। নাবালিকার পরিবারকে বোঝানো হয়, বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে। এ ধরনের বিয়ে হলে যে আইনি ঝামেলায় জড়াতে হবে, সেটাও মনে করিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। কিশোরীর মা পরে বলেন, ‘‘আমাদের গরিবের সংসার। দিন আনি দিন খাই অবস্থা। ভাল পাত্র পেয়ে বিয়ে দিচ্ছিলাম। তবে প্রশাসনের লোকজনদের কাছে লিখিত আশ্বাস দিয়েছি, মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হলে তার বিয়ে দেব না।’’ ওই কিশোরী বলে, ‘‘শুনেছিলাম বিডিও, কন্যাশ্রী দিদিরা কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে দেওয়া আটকান। তাই সোজা বিডিও-র দফতরে গিয়েছিলাম।’’

কিশোরীর সাহসকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন ব্লক প্রশাসনের কর্তারাও। বিডিও পূর্ণেন্দু স্যানাল বলেন, ‘‘ও যে সাহস করে আমাদের কাছে এসেছে এটাই বড় ব্যাপার। ওর পড়াশোনার যাবতীয় খরচ আমরা দেব।’’ কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কোঅর্ডিনেটর জাকিরন বিবি বলেন, ‘‘ আমরাও খোঁজ রাখব। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও ওকে নিয়ে যাব। পড়াশোনা ঠিকমতো করছে কি-না পায়েল, সেদিকেও নজর রাখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE