Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কোচিংয়েই আস্থা, তাই স্কুল ফাঁকা

দিনের পর দিন স্কুল কামাইয়ে সায় রয়েছে অভিভাবকদেরও। স্কুলের নামটুকু শুধু তাঁদের প্রয়োজন বোর্ডের পরীক্ষায় বসার জন্য। কিন্তু পড়াশোনা শেখা এবং ভাল নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে আস্থা কোচিং সেন্টারে! 

স্কুল ছেড়ে কোচিংয়ে। নিজস্ব চিত্র

স্কুল ছেড়ে কোচিংয়ে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০২:২৯
Share: Save:

স্কুলে নয়, শুধু কোচিংয়ে পড়তে চাইছে নতুন প্রজন্ম!

এই অভিযোগ বেশিরভাগ স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। বিশেষ করে বাংলামাধ্যম স্কুলে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের অধিকাংশ স্কুলের বদলে সকাল-বিকেল বইখাতা নিয়ে কোচিং-এ ছুটছে। করিমপুরের প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল হোক কিম্বা কৃষ্ণনগরের মত জেলা সদরের স্কুল—জেলার সর্বত্র প্রবণতা সমান এবং মারাত্মক বলে মনে করছে শিক্ষাজগতের সঙ্গে জড়িতেরা।

দিনের পর দিন স্কুল কামাইয়ে সায় রয়েছে অভিভাবকদেরও। স্কুলের নামটুকু শুধু তাঁদের প্রয়োজন বোর্ডের পরীক্ষায় বসার জন্য। কিন্তু পড়াশোনা শেখা এবং ভাল নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে আস্থা কোচিং সেন্টারে! শিক্ষকরাই দাবি করেছেন, অমুক কোচিংয়ে পড়লে ফাইনালে সব প্রশ্ন কমন আসবে, তমুক কোচিংয়ের স্যার দুর্দান্ত সাজেশন দেন—এই মোহে ছাত্রদের ভিড় ভেঙে পড়ছে কোচিং সেন্টারে। স্কুলের পড়াশোনা তাঁদের কাছে ‘ফালতু।’ অনেক ক্ষেত্রে স্কুলে শিক্ষকের অভাব বা পঠনপাঠনের উন্নত পরিকাঠামোর অনুপস্থিতি এই প্রবণতায় বাড়তি ইন্ধন জোগাচ্ছে। এক শিক্ষক দুঃখ করে বললেন, ‘‘কোচিংগুলি তো ‘মিনি স্কুল’। গাদা ছাত্রছাত্রী এক-একটি ব্যাচে পড়েন। কারও প্রতি আলাদা যত্ন নিতে পারছেন না হয়তো শিক্ষক। তবু নোটের জন্য ভিড় ভেঙে পড়ছে। সেগুলিই এখন সমান্তরাল স্কুল।’’

নদিয়ার একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষের কথায়, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উপস্থিতির হার ৮৫-৯০ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। নবম শ্রেণি থেকে তা কমতে শুরু করে। বহু স্কুলে সেটা নেমে আসে ৬০-৬৫ শতাংশে। আর দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে এক ধাক্কায় তা ৩৫-৪০ শতাংশ নামে।

অবস্থা ফেরাতে অতি সম্প্রতি ব্যতিক্রমী চেষ্টা চালিয়েছিলেন তেহট্টের নাটনা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। গরমের ছুটির শেষে স্কুল খোলার কিছু দিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ফের ছুটি বাড়ানো হয় স্কুলে। তবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ছুটি ছিল না। ২০-৩০ জুন ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি গিয়ে তাঁরা হারানো আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করেছেন। ছাত্র ও অভিভাবকদের বুঝিয়েছেন, স্কুলে নিয়মিত ক্লাস করার সুফল কতটা। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। ওই স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্র সংখ্যা ১১০ থেকে কমে ৩০-৩৫ এ পৌঁছেছিল। শিক্ষক ও শিক্ষিকারা উদ্যোগী হওয়ার পরে ছাত্রদের উপস্থিতি বেড়ে ৯০-এর বেশি হয়েছে হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। নদিয়া জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটা ঘটনা যে, পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলে না গিয়ে কোচিংয়ে যাওয়ার প্রবনতা বাড়ছে। আমরাও প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়া ও অভিভাবকদের বোঝান।’’

করিমপুর এলাকার এক অভিভাবকের কথায়, “মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের আগে প্রতিটা মুহূর্ত দামি। স্কুলে নিয়মিত ক্লাসই হয় না। যতটুকু হয় তার মান খুব খারাপ। তার থেকে ওই সেই সময়টা টিউশন নেওয়া ভাল।” এর পাল্টা করিমপুরের সেনপাড়া রাধারানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা যূথিকা চক্রবর্তীর কথায়, “পড়ুয়াদের মধ্যে একটা ধারণা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, উচুঁ ক্লাসে স্কুলের থেকে কোচিং সেন্টারে বেশি ভালো পড়াশোনা হয়।”

শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কিংশুক চক্রবর্তীর কথায়, “বছর ছ’য়েক শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। ফলে, বহু মেধাবী ছাত্রছাত্রী কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন। অনেকে তো আবার বাড়িতে রীতিমত ল্যাবরেটরি তৈরি করে ফেলেছেন। অনেক রকম যন্ত্রপাতিও রাখছেন। অন্য দিকে বহু স্কুল শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। ফলে ছেলেমেয়েরা কোচিংয়ে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Student Private tuition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE