Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Development

চার দশক পরে চালু হতে চলেছে বহুতালি স্বাস্থ্যকেন্দ্র

১০ শয্যার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১ জন চিকিৎসক ও ৪ জন নার্স নিয়োগ হয়েছে আগেই। নিয়োগ করা হয়েছে ৪ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও।

এই দৃশ্য আর দেখা যাবে না। —নিজস্ব চিত্র

এই দৃশ্য আর দেখা যাবে না। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
সুতি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৯
Share: Save:

চার দশক ধরে গরু চরছিল সুতির বহুতালি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। অবশেষে গরুর সেই বাথান সরিয়ে চালু হতে চলেছে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

দীর্ঘ দিন ধরে ঝাড়খন্ড ও বীরভূম লাগোয়া সীমান্ত এলাকা লাগোয়া ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার প্রায় শূন্যে এসে ঠেকেছিল। বাড়িতে প্রসব ঠেকাতে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রসূতি কেন্দ্র বা ‘ডেলিভারি পয়েন্ট’ হিসেবে বহুতালি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে ফের চালু করার।

সেই মতো নতুন করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন নির্মাণের পরে ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও প্রায় দু’বছর কেটে গিয়েছে। তালা খোলা হয়নি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। একই ভাবে সরানো যায়নি গরুর বাথানও। অবশেষে সেই গরুর বাথান সরিয়ে আগামী শনিবার তালা খুলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ফের চালু হতে চলেছে। এতে এলাকায় খুশির হাওয়া বইছে। সুতি ১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত মালাকার জানান, আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি নতুন করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করা হবে। তার দু’দিন পর থেকে অর্থাৎ ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে রোগী ভর্তি শুরু হবে।

১০ শয্যার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১ জন চিকিৎসক ও ৪ জন নার্স নিয়োগ হয়েছে আগেই। নিয়োগ করা হয়েছে ৪ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও। আহিরণ ও বেলডাঙা গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আরও দু’জন চিকিৎসককে সাময়িকভাবে পাঠানো হচ্ছে সেখানে। এছাড়াও পাঠানো হচ্ছে আরও একজন নার্স। এর ফলে ওই এলাকায় বাড়িতে প্রসবের হার পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে বলে আশা করছে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর।

বহুতালি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রায় ছ’দশকের পুরনো। সেই সময়ে দশ শয্যার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছিলেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী। স্থানীয় শিমুল রবিদাস বলছেন, “দু’জন চিকিৎসক ছিলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। প্রায় চল্লিশ বছর আগে অশান্তির জেরে অন্তর্বিভাগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার পর থেকেই বাড়িতে প্রসবের রেওয়াজ হয়ে গিয়েছিল এই এলাকায়। কারণ তখন যাতায়াতের রাস্তাও গড়ে ওঠেনি। যাতায়াত করতে হত বীরভূম দিয়ে ঘুরে। ফলে যাবতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা তখন থেকেই বন্ধ ছিল।”

বাবু শেখ বলছেন, “চার দশক থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু ছিল খাতায় কলমে। নতুন ভবন গড়ে উঠেছে। উদ্বোধনও হয়েছে। তবু গরুর বাথান সরেনি। পাঁচিল না থাকায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যেই বাস, অটো ও ছোট গাড়ির স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে।”

বিউটি খাতুন বলছেন, “আমার শ্বশুরবাড়ির পাশেই সাহাজাদপুর। বাবার বাড়ি বহুতালি। কোথাও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। তাই বাড়িতেই দাইকে ডেকে বাড়িতেই প্রসব করানো হয়েছে আমার। সরকারি প্রসূতি সদন না থাকায় বহুতালিতে এখনও বহু প্রসবই হয় বাড়িতেই।”

গত বছর বাড়িতে প্রসব নিয়ে সোরগোল শুরু হওয়ায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় যাতে বহুতালি এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বাড়ানো যায়। সংস্থার পক্ষ থেকে তিনজন কর্মীকে এলাকায় নিয়োগ করা হয়েছিল। নদীর দু’পাড়ে দুটি নিশ্চয় যানও দেওয়া হয়েছে তাদের। এলাকায় ঘুরে ঘুরে তারা নজরদারি চালাচ্ছেন প্রসূতিদের।

সংস্থার কো অর্ডিনেটর বিজয় হাজরা জানান, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। ফলে প্রসূতিদের বুঝিয়ে হাসপাতােল নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এখনও। ফলে ২৫ শতাংশের উপর প্রসব এখনও হচ্ছে বাড়িতে। বাকিদের বুঝিয়ে পাঠানো হচ্ছে আহিরণ বা বীরভূমের রাজগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। বহুতালি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু হলে বাড়িতে প্রসবের সংখ্যা কমবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Development Suti Health Centre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE