শুভেন্দু অধিকারী
জগদ্ধাত্রী পুজো ঘিরে মানুষের উন্মাদনাকে পুরোদস্তুর কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল। বুধবারই বেশ কয়েকটি পুজোর উদ্বাধন করতে কৃষ্ণনগরে আসছেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী তথা সদ্য কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র দেখভালের দায়িত্ব পাওয়া শুভেন্দু অধিকারী। যদিও দলেরই অনেকে বলছেন, উদ্বোধনটা উপলক্ষ, লক্ষ্য আসলে লোকসভা ভোটের আগে জনসংযোগ ঝালিয়ে নেওয়া।
পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই এই জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে মূলত কৃষ্ণনগরকে ‘পাখির চোখ’ করেছে বিজেপি। ফলে তৃণমূলের ঘর বাঁচানোর লড়াই। তৃণমূল সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদে অধীরের গড় ভাঙায় শুভেন্দু যে সাফল্য পেয়েছেন, তা মাথায় রেখেই তাঁকে সেনাপতি করে এই কেন্দ্রে লড়াই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এবং এই দায়িত্ব পাওয়ার পরে এই প্রথম বার কৃষ্ণনগরে আসছেন শুভেন্দু। ফলে তাঁকে ঘিরে কর্মীদের উন্মাদনার পারদ চড়তে শুরু করেছে।
জগদ্ধাত্রী পুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই পুরভোটের দামামা বেজে উঠবে। তার পরেই লোকসভা ভোট। ফলে কৃষ্ণনগরের প্রধান উৎসবের এই আঙিনা হাতছাড়া করতে রাজি নন শাসক দলের নেতারা। জগদ্ধাত্রী পুজো দিয়েই তাঁদের প্রচারের প্রস্ততি কার্যত শুরু হয়ে গিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই কৃষ্ণনগর পুরসভা দখলে রেখেছেন দক্ষিণপন্থীরা। বিশেষ করে কংগ্রেস। ২০০৮ সালে তাদের বেশ কয়েক জন কাউন্সিলরকে দলে টানলেও পুরবোর্ড দখল করতে পারেনি তৃণমূল। তবে ২০১৩ সালে পুরসভার সব কাউন্সিলরই তৃণমূলে যোগ দেন। বিরোধীশূন্য পুরবোর্ড পায় তৃণমূল। এমন বেশ কিছু কাউন্সিলর আছেন যিনি বা তাঁর স্ত্রী নিজের ওয়ার্ড থেকে টানা জিতে আসছেন। তারা ওয়ার্ডের পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে শুধু ওতপ্রোত ভাবে জড়িত নন, কোনও-কোনও পুজো সরাসরি তাঁদের নামেই পরিচিত।
যেমন শক্তিনগর পাঁচমাথার মোড়ের পুজোটি পুরপ্রধান অসীম সাহার পুজো বলে পরিচিত। হাতারপাড়া বারোয়ারির পরিচিতি দিলীপ বিশ্বাসের পুজো বলে। জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত থাকেন গোলাপট্টিতে। সেখানকার পুজোও তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে। আবার ঘূর্ণী বারোয়ারির সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্থানীয় কাউন্সিলর গৌতম রায়ের নাম। কৃষ্ণনগরের সবচেয়ে জনপ্রিয় পুজো হল চাষাপাড়ার বুড়িমা। গত দশ বছর ধরে সেই পুজো কমিটির সম্পাদক গৌতম ঘোষ। ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি অথবা তাঁর স্ত্রী টানা কাউন্সিলর হয়ে আসছেন। এ বারও প্রার্থী হওয়া প্রায় নিশ্চিত।
এর বাইরেও একাধিক পুজো কমিটির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন এই সব বড় নেতারা। শহরের প্রায় প্রত্যেক পুজো কমিটিতে কোনও না কোনও কাউন্সিলর বা নেতা জড়িয়ে আছেন। সামনে ১২ ডিসেম্বর পুরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ভোট যদি নির্দিষ্ট সময়ে হয়, তা হলে উৎসব মিটতেই শুরু হবে ভোটের প্রস্তুতি। তেমনটাই ঘটবে ধরে নিয়ে শুরু হয়েছে কোমর বাঁধা।
বুড়িমার চাষাপাড়া বারোয়ারি সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলছেন, “আমরা সারা বছরই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলি। কিন্তু এ বার পুজোর পরেই ভোট। ফলে পুজোকে ঘিরে জনসংযোগের আলাদা গুরুত্ব তো থাকবেই।” গোলাপট্টির পুজোর দায়িত্বে এ বার গৌরী দত্তের ছেলে, স্থানীয় কাউন্সিলর অয়ন দত্ত। তাঁর কথায়, “পুজো এ বার বড় হচ্ছে। নানা পরিকল্পনাও আছে আমাদের।” পাঁচমাথা মোড়-সহ শহরের একাধিক বারোয়ারির সঙ্গে জড়িত পুরপ্রধান অসীম সাহা বলেন, “জনসংযোগের এটা একটা বিরাট সুযোগ। আমরা সমস্ত কাউন্সিলরকে সেটা মন দিয়ে করতে বলেছি।”
এই খেলায় অবশ্য বিজেপি বিশেষ সুবিধা করতে পারছে না। যত হিন্দুত্বের জিগিরই তারা তুলুক না কেন, জগদ্ধাত্রী এখনও তাদের হাতের বাইরে। প্রায় কোনও কমিটিতেই তারা কার্যত নেই। তবে কোতয়ালি থানার সামনে একটি বইয়ের স্টল করছে তারা। দলের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের দাবি, ‘‘আমরা সারা বছর মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রেখে চলি। তার জন্য কোনও উৎসবের প্রয়োজন হয় না।’’ তৃণমূল জেলা সভাপতি পাল্টা বলেন, ‘‘সারা বছর মানুষের সঙ্গে কারা থাকে,তা মানুষ জানেন। তবে উৎসবের সময়ে জনসংযোগ তো যে কোনও রাজনীতিরই অঙ্গ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy