Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দ্বন্দ্ব-ক্ষোভ সামলাতে আজ কর্মিসভায় শুভেন্দু

দলের প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরকে বহিষ্কৃত। মন্ত্রিত্ব হারিয়ে ম্রিয়মাণ সাগরদিঘির বিধায়ক সুব্রত সাহা। দলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনের শরীরটা তেমন ভাল যাচ্ছে না। জেলা পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেন অধিকাংশ সময়ে জেলায় থাকেন না, তাঁর নামে দলের মধ্যে থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া দলের নেতাদের পরস্পরের সঙ্গে সংঘাত মুর্শিদাবাদ তৃণমূলের চিরকালের সঙ্গী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০০:৩২
Share: Save:

দলের প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরকে বহিষ্কৃত। মন্ত্রিত্ব হারিয়ে ম্রিয়মাণ সাগরদিঘির বিধায়ক সুব্রত সাহা। দলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনের শরীরটা তেমন ভাল যাচ্ছে না। জেলা পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেন অধিকাংশ সময়ে জেলায় থাকেন না, তাঁর নামে দলের মধ্যে থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া দলের নেতাদের পরস্পরের সঙ্গে সংঘাত মুর্শিদাবাদ তৃণমূলের চিরকালের সঙ্গী।

এই পরিস্থিতিতে আজ, শনিবার, পুরসভা ভোটের আগে বহরমপুরে কর্মিসভা করার কথা তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর। বহরমপুরের রবীন্দ্রসদনে বৈঠকে তাঁর সঙ্গে থাকার কথা জেলার দলীয় পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেনের। জেলার সামগ্রিক হাল জানেন তিনি। সে কারণে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের সংগঠনের কাজকে ‘চ্যালেঞ্জ’ বলে নিচ্ছেন তিনি।

জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলে পুরভোটে দল কতটা ভাল ফল করতে পারবে তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন জেলার তৃণমূল নেতারাই। সেই পরিস্থিতিতে সভা করে কর্মীদের চাঙ্গা করতে চাইছেন শুভেন্দু। পুর নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে ১০৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রবীন্দ্রসদনের কর্মিসভায় সেই সব প্রার্থীকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও দলের জেলা ও ব্লক নেতৃত্ব সভায় থাকবেন।

ইন্দ্রনীল সেন দাবি করলেন, মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের জায়গা আগের চাইতে শক্ত হয়েছে। ২০১০ সালে পুরভোটে ১০৭টি আসনের মধ্যে মাত্র ৪৭টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছিল তৃণমূল। সে হিসেবে জেলায় দল এখন অনেকটাই সংগঠিত। তিনি বলেন, “ছ’টি পুরসভার ১০৭ জন প্রার্থী ছাড়াও, বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বাছাই করা কর্মী, শাখা সংগঠনের সভাপতি এবং জেলা কমিটির বিভিন্ন সদস্যদের বৈঠক হবে।” শুভেন্দু ও ইন্দ্রনীল, দু’জনেরই বক্তব্য, বৈঠকে সমন্বয়ের বার্তা দেওয়া হবে কর্মীদের।

কিন্তু কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় নিয়ে নেতারা যত চিন্তিত, কর্মীরা ততই চিন্তিত নেতাদের সমন্বয় নিয়ে। এক তৃণমূল কর্মী বলেন, “তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর তিনবার জেলায় সভাপতি বদলেছে। এ ছাড়াও কংগ্রেস থেকে বিধায়ক ও নেতারা ছেড়ে এসে যোগ দিচ্ছেন বারবার, ফলে নতুন নতুন নেতা তৈরি হচ্ছেন। কোনও নির্দিষ্ট কর্মসূচী নিয়ে বছরখানেকও কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে দলটাকে তৈরি করাই সমস্যা হয়ে উঠছে।” সেই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ, তৃণমূলের নেতারা প্রকাশ্যে যেভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছেন, তাতে নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে ভারসাম্য রাখা অসম্ভব হয়ে উঠছে। যদিও হুমায়ুন কবীরের এলাকা, অর্থাৎ রেজিনগর এবং শক্তিপুরে এ বার পুরভোট হচ্ছে না বলে তাঁর অভাব সরাসরি অনুভূত হবে না, তবু বেলডাঙার একটি অংশে খানিকটা ধাক্কা খাবে দল। সেই সঙ্গে প্রাক্তন জেলা সভাপতি মহম্মদ আলি, কিংবা শিক্ষক-নেতা সাগির হোসেনের মতো নেতারা দলে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার ফলে পুরনো কর্মীদের সঙ্গে দলের যোগ খানিকটা ছিন্ন হয়েছে। এি পরিস্থিতিতে, সকলকে এক সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিলেও কাজের বেলায় তা যে সোজা নয় সে হাড়েহাড়ে বুঝেছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

জেলা তৃণমূলের সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, “পুরভোট তৃণমূলের কাছে সেমিফাইনাল। ফাইনাল আগামী বিধানসভা ভোট।” মান্নান হোসেনের ঘনিষ্ঠদের দাবি, গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর তিনি জেলা তৃণমূলের সভাপতি হওয়ার পরে জেলায় দলের উত্তরোত্তর শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ৬৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে এসেছে। বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্বাচিত সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ক্ষমতাসীন বোর্ড সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। এমনকী মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে তৃণমূলের এক জন সদস্য ছিল। এখন সেখানে সদস্য সংখ্যা বেড়ে হয়েছে চার জন।

তবুও দলের মধ্যেই অনেকে মনে করছেন, এই পুরভোট জেলা সভাপতির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এই প্রথম ইন্দ্রনীল এবং শুভেন্দুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটা ভোট করাতে হবে তাঁকে। সেই সঙ্গে, ক্রমাগত নিজের ছেলে সৌমিক হোসেনকে নেতৃত্বে নিয়ে আসার চেষ্টার জন্য দলের বেশ কিছু নেতা মান্নানের উপর অসন্তুষ্ট। এই নেতারা কার্যত নিজের এলাকা ছাড়া জেলায় দলের ভাল ফলের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বেন, এমন আশা কম। শুভেন্দু অধিকারী এই নেতাদের ভোটের লড়াইতে নামাতে পারেন কিনা, সেটা দলের কাছেও বড় প্রশ্ন।

এমন সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব উড়িয়ে দিয়ে এ দিন শুভেন্দু অবশ্য বলেন, “মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের ভাল ফল অধরা থাকবে না। খুব শীঘ্রই তা দেখা যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE