Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সাগরদিঘিতে অভিযুক্ত তৃণমূল

সিন্ডিকেট-দাপটে প্রশ্নের মুখে আইটিআই নির্মাণ

শাসকদলের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ফের জুলুমবাজির অভিযোগ। এ বার বন্ধের মুখে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত ব্লকে আইটিআই তৈরির প্রকল্প! তৃণমূলের লোকজনের গড়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লাগাতার হুমকির অভিযোগ তুলে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে আইটিআই কলেজ-ভবন তৈরির কাজ ছাড়তে চাইছে বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

শাসকদলের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ফের জুলুমবাজির অভিযোগ। এ বার বন্ধের মুখে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত ব্লকে আইটিআই তৈরির প্রকল্প!

তৃণমূলের লোকজনের গড়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লাগাতার হুমকির অভিযোগ তুলে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে আইটিআই কলেজ-ভবন তৈরির কাজ ছাড়তে চাইছে বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা। সিন্ডিকেটের সদস্য তথা ছ’জন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে রবিবার দুপুরে থানায় অভিযোগ করেছেন ঠিকাদার সংস্থার কর্তা নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘ঠিকাকর্মীদের সাইট ছেড়ে চলে আসতে বলেছি। পরিস্থিতি না পাল্টালে কাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবতে হবে।’’ গোটা ঘটনায় অভিযোগের তির প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত সাহার গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।

শাসকদলের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নির্মাণকাজে দাদাগিরির অভিযোগ নতুন নয়। রাজারহাট-নিউটাউন এলাকায় এ নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বহু নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ। শুধু সিন্ডিকেট নয়— কিছু দিন আগে কাটোয়ায় শ্রীখণ্ড গ্রামে ঠিকাদারকে তোলা চেয়ে হুমকি, শেষমেশ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় নির্মীয়মাণ কিসান মান্ডির কাজ আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল-আশ্রিত লোকজনের বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কাতেও একই অভিযোগ উঠেছিল।

এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে?

স্থানীয় সূত্রে খবর, মাসখানেক আগে সাগরদিঘির কিষান মান্ডির পাশেই প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আইটিআই কলেজের ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। বরাত পায় এনআই ইনফ্রা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড নামে এক সংস্থা। চুক্তি মতো ওই ঠিকা সংস্থাকে ইট-বালি, সিমেন্ট-সহ নানা নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ শুরু করে তৃণমূলেরই একটি সিন্ডিকেট। কিন্তু, সেই বরাত না পেয়ে বিধায়ক সুব্রত সাহার গোষ্ঠী খেপে যায় বলে অভিযোগ। সংস্থার কর্তা নুরুল ইসলামের দাবি, ‘‘কাজ শুরুর পর থেকেই ওই দুই গোষ্ঠীর গোলমাল চলছে। ইদানীং তা বেড়েছে।’’

সংস্থার ম্যানেজার অরুণ সরকারের অভিযোগ, ‘‘গত ২২ মার্চ মোরগ্রামের কাছে এক হোটেলে বিধায়কের গোষ্ঠীর লোকেরা ডেকে পাঠায়। তাঁদের মালপত্র সরবরাহের ভার না দিলে হোটেল থেকে বের হতে দেবে না বলে শাসায়। ভয়ে বাজারের চেয়ে বেশি দামে মালপত্র নেওয়ার চুক্তিতে সই করে তবে পার পাই।’’ বিষয়টি মৌখিক ভাবে সাগরদিঘি থানায় জানালেও ফল হয়নি বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘উল্টে তারপর থেকে ফোনে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সাইটের কর্মীদেরও ভয় দেখানো হচ্ছে। বাধ্য হয়ে এ দিন ছ’জনের নামে লিখিত অভিযোগ জানাই।’’

পুলিশ অবশ্য অরুণবাবুর অভিযোগ মানতে চায়নি। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর শুধু বলেন, ‘‘ঠিক কী হয়েছে, তা জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলছি।’’ তবে ঠিকাদার সংস্থার তরফে অভিযোগ, সিন্ডিকেটের পিছনে তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত সাহার অনুগামীরা রয়েছেন বলেই পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কী বলছেন বিধায়ক? সুব্রতবাবুর জবাব, ‘‘বেকার ছেলেরা কাজকর্ম করে আয় করলে খুশি হব। তবে সিন্ডিকেটের নামে গুন্ডামিকে দল প্রশ্রয় দেয় না। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ এ সব করলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।’’

এই ঘটনায় এলাকায় তৃণমূলের দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসেছে। স্থানীয় নেতা আরব আলি বিধায়কের শিবিরের দাদাগিরির কথা গোপন করছেন না। এই আরবের গোষ্ঠীই আইটিআইয়ের মালপত্র সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে। দলের এক সময়ের ব্লক কাযর্করি সভাপতির সরাসরি অভিযোগ, ‘‘সুব্রত সাহার অনুগামীরা উন্নয়নমূলক কাজে বাধা দিচ্ছেন। কংগ্রেস, সিপিএমের এক সময়ের যত দুষ্কৃতী দলে যোগ দিয়ে এই সব করছে। তাদের মদত দিচ্ছেন বিধায়ক এবং তাঁর গোষ্ঠী।’’ পুলিশ বিধায়কের হয়ে পক্ষপাতিত্ব করছে বলেও তাঁর অভিযোগ। ‘‘ফলে পুলিশ আদৌ কিছু করবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়’’— বলছেন আরব।

দলেরই নেতাকর্মীদের বাধায় বন্ধের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রকল্প। তা জেনে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলের নাম ভাঙিয়ে সিন্ডিকেটের দাদাগিরি প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। অভিযুক্তেরা পার পাবে না। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE