Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ির দোরগোড়ায় এসে বড় অপমানিত হলাম

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজারবাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

তনভির আহমেদ
ইসলামপুর শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২০ ০৪:৫২
Share: Save:

দিনের পর দিন গৃহবন্দি, কাজে যাওয়া দূরের কথা বাজার করতে গেলেও পুলিশের লাঠির বাড়ি খেতে হচ্ছে। সুরাতের পলসোনা থানা এলাকা তখন রেড জোন। এক দিকে করোনা আতঙ্ক, অন্য দিকে বাড়ছে খাবারের খরচ, ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ জলের বিল। দশ বাই দশ ঘরে দিনরাত গাদাগাদি করে থেকে হাঁপিয়ে উঠছিলাম। রাতে ভয় হত, এ বার বাড়ির লোকজনকে হয়তো আর দেখতেও পাব না। এই ভয়ই আমাদের ঠেলে থেকে বের করে দিল। সবাই মিলে ঠিক করলাম গ্রামে ফিরব। শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে একটি বাস ভাড়া করে ৫০ জন শ্রমিক মিলে রওনা দিলাম নিজের দেশে। আমাদের পকেট তখন প্রায় ফাঁকা। সকলেই বাড়িতে ফোন করলাম, যে কোনও উপায়ে টাকা পাঠানোর জন্য। কেউ গরু ছাগল বিক্রি করে, কেউ আবার পাটের জমি বন্ধক দিয়ে কেউ বা গয়না মহাজনের কাছে বন্ধক রেখে টাকা পাঠিয়ে ছিলেন। খুব কষ্ট হয়েছিল পরিবারের সদস্যদের জন্য, কিন্তু তার পরেও মনে হয়েছিল আর যাই হোক নিজের দেশে তো ফেরা হবে। মরলে দেশেই মরব!
কিন্তু গোটা যাত্রাপথ মসৃণ হলেও আমাদের রাজ্যের কুলটি থানায় ঢুকে এক নতুন অভিজ্ঞতা হল আমাদের। মনে হল, আমরা সকলেই করোনা পজ়িটিভ, এক গাড়ি করোনা নিয়েই এ রাজ্যে ঢুকছি। টানা তিন দিন ধরে বাসে চেপে ফিরতে ফিরতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু ঘরে ফেরার আনন্দ ছিল মনে। ৬টা রাজ্য পার হতে গিয়ে কোথাও কোনও অসুবিধার সামনে পড়তে হয়নি আমাদের। এমনকি মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ়ের পুলিশও আমাদের শুকনো খাবার দিয়েছে, কিন্তু যখন একেবারে ঝাড়খণ্ড সীমানা পেরিয়ে নিজের রাজ্যে প্রবেশ করলাম, ঠিক তখনই মনে হল আমরা বড় অন্যায় করে ফেলেছি। পুলিশের আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল আমরা সকলেই করোনা আক্রান্ত। তারা বার বারই বলছিল, ভিন রাজ্য থেকে এখানে আসার কোন অনুমতি নেই, ফলে তোমরা আবার বাস নিয়ে ফিরে যাও সুরাতে। অবস্থা বুঝুন। কিন্তু কি করব ওখানে থাকলে না খেয়েই মরতে হবে যে। ফলে একটা ঝুঁকি নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিলাম আমরা। কিন্তু তার জন্য যে এমন হেনস্থার শিকার হতে হবে এমনটা কখনও কল্পনাও করিনি। প্রায় ১৭ ঘণ্টা ঠায় না খেয়ে বসে কাটিয়েছি ঝাড়খণ্ড সীমানায়। কুলটি থানার পুলিশের আচরণ দেখে মনে হয়েছে আমরা যেন ভিন্ দেশে এসে পড়েছি। শেষ পর্যন্ত নেতাদের ফোন করার পরে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় করোনা হাসপাতলে। সেখানে লালারস সংগ্রহ করা হল সকলের। শেষ পর্যন্ত ৫ দিন পরে কলকাতা থেকে রিপোর্ট আসার পরেই আমাদের ছাড়া হল। শেষ পাঁচ-ছ’টা দিন মনে করলে বড় অপমান লাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

migrant worker labour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE