Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চৈত্রের চা-চর্চায় চমক চরাচরে

কিন্তু এ সব তো চায়ের চেনা বারোমাস্যা। চায়ের পেয়ালায় তুফান তুলতে নতুন কিছু চাই। চায়ের দোকানে চমকই যদি না থাকে তা হলে আর ট্যাঁকের কড়ি ফেলে দোকানে চা খাওয়া কেন? এ

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুজাউদ্দিন
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০১:৩৩
Share: Save:

চা দিয়ে যায় চেনা! কোথাও চিনি কম, কোথাও ঘন দুধ। এ পাড়ায় যদি লিকার কাটে বেশি, ও পাড়ার সসপ্যানে দিনভর ফুটতে থাকে মালাই-চা।

কারও প্লাস্টিক কাপে ঘোর আপত্তি, কেউ আবার গেলাস নিয়ে সতর্ক। কোথাও ‘আজ নগদ, কাল ধার’, কোথাও আবার দেওয়ালের ব্ল্যাকবোর্ডেই লেখা থাকে জমা-খরচের হিসেব!

কিন্তু এ সব তো চায়ের চেনা বারোমাস্যা। চায়ের পেয়ালায় তুফান তুলতে নতুন কিছু চাই। চায়ের দোকানে চমকই যদি না থাকে তা হলে আর ট্যাঁকের কড়ি ফেলে দোকানে চা খাওয়া কেন? এ কথা বিলক্ষণ জানেন চায়ের দোকানদারও। কিন্তু এমন মনকেমন ফাগুনে চমক মিলবে কোথায়?

‘অবাক জলপান’-এর সেই ঝুড়িওয়ালা থাকলে হয়তো বলে বসতেন, ‘চমক? চমক এখন কোথায় পাবেন? এ তো চমকের সময় নয়। গাছপাকা কুল চান তো দিতে পারি।’ নবদ্বীপের শিশির বন্দ্যোপাধ্যায় হেসে বলেছিলেন, ‘‘কুল বাছা কুল! মাথা খেলালেই ভরা গরমেও চমক মেলে বইকি!’’

তাঁর চায়ের দোকানের রেগুলার খদ্দেররা অবশ্য সে কথায় বিশেষ কান দেননি। তাঁরা ভেবেছিলেন, এ শুধু কথার কথা বই আর কিছু নয়।

কিন্তু ফোনে বার্তাটা রটতে শুরু করেছে ক’দিন ধরেই। ফেসবুকের দেওয়ালে, হোয়াটসঅ্যাপের টিং-টংয়ে বিশেষ ছবির নীচে হুড়মুড়িয়ে পড়ছে ‘লাইক’, ‘কমেন্ট’, ‘স্মাইলি’, ‘হা হা’, ‘ওয়াও’।

কিন্তু ব্যাপারটা কী? তেমন কিছুই না, স্রেফ একটা ছবি! সেখানে দেখা যাচ্ছে, জমজমাট একটা চায়ের দোকান। সাজানো বিস্কুটের বয়াম। তারে ঝুলছে পাউরুটি, কেক, পানমশলা। আর একটা সাদামাটা ফ্লেক্স। চমকটা আছে লেখাতেই— সেল, সেল, সেল। বিস্কুট-সহ দুধ চা দু’টাকায়। ‘অফার’ চলবে পয়লা চৈত্র থেকে ৩০ চৈত্র। ভরা বসন্তে নদিয়ার নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল লাগোয়া ‘গরিব টি স্টল’-এর মালিকের হলটা কী? ক্রেতা সামলাতে সামলাতে মুচকি হাসছেন শিশির, ‘‘ওই যে বলেছিলুম, মাথা খেলালেই চমক মেলে। চৈত্রে তো সক্কলে সেল দেন। তা হলে চা নয় কেন?’’

এ যদি চৈতন্য চরাচরের চা-চর্চা হয়, তা হলে মুর্শিদাবাদের সীমান্ত ঘেঁষা চর এলাকাও পিছিয়ে নেই। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই চা চর্চা শুরু করেছিল জলঙ্গি, ডোমকলের মতো জনপদ। লেড়ো বিস্কুট, সস্তার কেকের পাশে জায়গা করে নিয়েছিল রঙিন টিভি। ভিড় বাড়তে শুরু করল চায়ের দোকানে। অবস্থা এমন, যে চায়ের সঙ্গে টা থাকুক বা না থাকুক টিভি কিন্তু চাই-ই চাই। প্রথম দিকে ছিল কেবল কেবল। খবর, সিরিয়াল দেখতে দেখতেই উড়তে শুরু করল কাপের পর কাপ চা।

পরে টিভির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হল ভিসিডি। সকালে সানি দেওলের ঢিসুম ঢিসুম তো বিকেলে চিরঞ্জিতের ‘বেদের মেয়ে জোৎস্না’। সে এক হইহই কাণ্ড! এই ক’দিন ধরে আবার সিনেমা-সিরিয়াল ভুলে লোকজন মগ্ন ছিলেন ত্রিপুরা নিয়ে। কিন্তু ‘সেল’-এর ব্যাপারে উৎসাহ নেই নবাবের জেলার। নবদ্বীপের শিশির বলছেন, ‘‘বছরভর তো তিন টাকায় চা-বিস্কুট খাওয়াই। এক মাস দু’টাকায় খাওয়ালে সামান্য হলেও লাভ থাকবে।’’

চৈত্র আসতে আর যেন ক’দিন বাকি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tea Tea Stall Nabadwip State General Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE