Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
কাপাসডাঙা

স্কুলের হাত ধরে পাল্টে যাচ্ছে গ্রাম

স্কুলের ঢাউস ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা রয়েছে—‘আজ আমার জন্মদিন।’ তার নীচে চক দিয়ে লেখা পড়ুয়াদের নাম। সে নাম পাল্টে যায় প্রতিদিন। প্রার্থনা শেষে পড়ুয়াদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায় গোটা স্কুল। হাতে তুলে দেওয়া হয় চকোলেট।

শুভেচ্ছা বোর্ডের সামনে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

শুভেচ্ছা বোর্ডের সামনে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩২
Share: Save:

পড়ুয়াদের জন্মদিন মনে রাখেন শিক্ষকেরা!

স্কুলের ঢাউস ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা রয়েছে—‘আজ আমার জন্মদিন।’ তার নীচে চক দিয়ে লেখা পড়ুয়াদের নাম। সে নাম পাল্টে যায় প্রতিদিন। প্রার্থনা শেষে পড়ুয়াদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায় গোটা স্কুল। হাতে তুলে দেওয়া হয় চকোলেট।

মিড-ডে মিলের মেনুতে চমক আনতে বাজার করে আনেন স্কুলেরই শিক্ষক!

স্কুল থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে সেই পাইকারি বাজার। শিক্ষকদের যুক্তি, সেখান থেকে বাজার করলে দামে কম পড়ে। পড়ুয়াদের পাতে নিত্য নতুন পদ রাখা যায়। আবার কিছু টাকা উদ্বৃত্তও থাকে। চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের বিদায় সংবর্ধনাও জানান শিক্ষকেরাই।

সেই বিশেষ দিনে স্কুল জুড়ে হইহই ব্যাপার। মিড-ডে মিলের মেনুতে সে দিন থাকে ভাত, সব্জি, মুরগির মাংস, দই ও মিষ্টি। অতিরিক্ত এই খরচ মেটানো হয় জমিয়ে রাখা সেই উদ্বৃত্ত টাকা থেকে।

মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এলাকা কাপাসডাঙার এই স্কুলের নাম ৪০ নম্বর নওপুকুরিয়া নতুনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০১ জন। শিক্ষক রয়েছেন ৮ জন। স্কুলের এমন কাজকর্মে গ্রামের লোকজন তো বটেই, উচ্ছ্বসিত জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দফতরের কর্তারা। ইতিমধ্যে ওই স্কুল বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পানপিয়ারা খাতুন বলেন, ‘‘এমনটা সম্ভব হয়েছে স্কুলের শিক্ষক ও গ্রামের লোকজনদের সহযোগিতায়।’’ আর তামাম গ্রাম বলছে, ‘‘আমরা আর কী করেছি! যা করার সে তো মাস্টাররাই করেছে গো।’’

একটা সময় কাপাসডাঙার নাম শুনলেই চমকে উঠত তামাম জেলা। অশান্তি, খুন, বোমাবাজি ছিল প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। প্রত্যাশিত ভাবেই সেই অস্থির সময়ের ছায়া পড়েছিল গ্রামের এই স্কুলে। দেখা মিলত না পড়ুয়াদের। ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন শিক্ষকেরা। বছর সাতেক থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে।

প্রধানশিক্ষিকা পানপিয়ারার বাড়ি স্কুলের পাশেই। তিনি বলছেন, ‘‘২০০৮ সালেও আমার বাড়িতেও বোমা পড়েছিল। এখন অবশ্য সে সবই অতীত। আমাদের স্কুলের ছেলেমেয়েদের অনেকেই এখন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও জয়েন্টে ভাল ফল করছে।’’

এই স্কুলের এমন বদলে যাঁরা অন্যতম কাণ্ডারি সেই বিশ্বজিৎ দত্ত ও তপন পুততুন্ড বলছেন, ‘‘ইচ্ছে থাকলে ও সবার সহযোগিতা পেলে অনেক অসম্ভবই সম্ভব করা যায়।’’ কথাটা কথার কথা নয়। গত কয়েক বছরে এ গ্রামে নাবালিকার বিয়ে হয়নি। স্কুলছুট নেই। সাক্ষরতার হার বেড়েছে। কাপাসডাঙা তো বটেই আশপাশের গাঁয়ের লোকজনও বলাবলি করে, ‘‘এই না হলে ইস্কুল! যেমনি নিয়ম-কানুন, তেমনি কাজকর্ম। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।’’

সম্প্রতি আরও একটি কাণ্ড করে বসেছে ওই স্কুলের পড়ুয়ারা। শিক্ষকদের পরামর্শে তাঁরা বাড়িতে গিয়ে বাবা-মাকে চিনিয়েছে অক্ষর। এখন এই গ্রামে কেউ আর টিপসই করেন না। শনিবার সদ্য সাক্ষর হওয়া অভিভাবক ও তাঁদের সন্তানদের সংবর্ধনাও দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। জেলার সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) সুশান্তপ্রসাদ দাস বলছেন, ‘‘কাপাসডাঙার ওই স্কুল আমাদের জেলার গর্ব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Birthday Kapas Danga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE