Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছিল চোলাই, বাড়ছে দেশি মদের ঝোঁক

আরবপুর গ্রামের দেবু সর্দার জানান, কম খরচে চোলাইয়ের নেশা করতে গিয়ে অনেক পুরুষ ও মহিলা সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়ছিলেন। বহু বাড়িতে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারেনি।

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৪৫
Share: Save:

সে একটা সময় ছিল।

তেহট্টের হাটে-মাঠে চলত ভাটি। তৈরি হত চোলাই। পাঁচ কেজি গুড়ের সঙ্গে দশ লিটার জল আর একটি মেডিসিন ট্যাবলেট মিশিয়ে তিন দিন রেখে দেওয়া হত। সেই মিশ্রণ হাঁড়িতে ফুটিয়ে তার বাষ্প একটি পাত্রে জমা করে চোলাই তৈরি হত।

কয়েক বছর আগে এলাকার বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া গ্রামে এটাই ছিল চেনা ছবি। চোলাইয়ের গন্ধে ম-ম করত আশপাশ, সন্ধ্যা নামতে না-নামতেই গ্রামের মানুষজন চোলাই খাওয়ার জন্য এসে ভিড় করতেন— এমনটাই জানাচ্ছেন হোগলবেড়িয়ার সুন্দলপুর মালপাড়ার দুলাল মাল।

দুলাল জানান, সেই সময়ে দুই রকম মদ তৈরি হত। একটি চোলাই, যা গুড় দিয়ে তৈরি করা হত। অপরটি ভাতে জল দিয়ে চার দিন পচিয়ে তৈরি হত। সারা দিন কাজের শেষে লোকে ওই চোলাই চল্লিশ টাকা লিটার দামে কিনে খেত। কেউ কেউ অবশ্য সকাল থেকেই শুরু করত। দুলালের কথায়, ‘‘বছর দুয়েক হল, গ্রামে চোলাই তৈরি বন্ধ হয়েছে। আগে যারা চোলাই তৈরি করত, তাদের অনেকে বেঁচে নেই, অনেকে এখন বাইরে কাজ করে।”

বছর আটেক আগের কথা আজও মনে আছে মুরুটিয়ার ধাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের। সে দিন গ্রামে তৈরি চোলাই খেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কাজলি পাহাড়ি নামে এক মহিলা। বছর দশেকের মধ্যে চোলাই খেয়ে কারও মৃত্যু না হলেও অনেকেই কম-বেশি অসুস্থ হয়েছেন।

তেহট্ট মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় গরিব মানুষের চোলাই মদ খাওয়ার অভ্যাস ছিল সে সময়ে। তবে গত কয়েক বছরে তা পাল্টে গিয়েছে। এলাকার মানুষেরা জানাচ্ছেন, হোগলবেড়িয়া, করিমপুর বা মুরুটিয়া থানা এলাকার বেশ কিছু গ্রামে চোলাই তৈরি হত। চলত চোলাইয়ের ঠেক। সেই সমস্ত ঠেকে চোলাই মদ খেতে ভিড় করতেন দিনমজুর, ভ্যান চালক, ঝাড়ুদারেরা। এখন সেই অবস্থা অনেকটাই পাল্টেছে।

করিমপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ইরাজুল মণ্ডল বলেন, “এক সময়ে আমাদের এলাকায় ব্যাপক ভাবে চোলাই চলত। এখন সময়ের সঙ্গে নেশার বদল হয়েছে। চোলাই ছেড়ে অনেকেই এখন দেশি মদের দিকে ঝুঁকছেন।’’ তাঁর দাবি, গ্রামে চোলাইয়ের কুফল সম্পর্কে প্রচার অভিযান চালানোতেই কাজ হয়েছে।

আরবপুর গ্রামের দেবু সর্দার জানান, কম খরচে চোলাইয়ের নেশা করতে গিয়ে অনেক পুরুষ ও মহিলা সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়ছিলেন। বহু বাড়িতে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারেনি। করিমপুর, মুরুটিয়া ও হোগলবেড়িয়া এলাকার আবগারি অফিসার সিদ্ধার্থকুমার দাস জানান, গত কয়েক বছর ধরে লিফলেট বিলি করার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

সুন্দলপুরের ফুলকুমারি মালের কথায়, “ছোট থেকেই দেখেছি, পাড়ায় চোলাই তৈরি হত, বেশির ভাগ পুরুষ তা খেত। অভাবের সংসারে তা নিয়ে অশান্তিও লেগে থাকত। বছর দুই আগে আবগারি দফতরের কর্তারা কয়েক বার এসে বোঝান, চোলাইয়ে সমাজ ও শরীরের কী ক্ষতি হতে পারে। তাতে অনেকটা কাজ হয়েছে।”

তবে এর ফাঁকেও যে চোরাগোপ্তা চালান আসে না, তা তো নয়। টের পাওয়া যাবে ফের চৌধুরীপাড়ার মতো অঘটন ঘটে গেলে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hooch Country Liquor Tendency
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE