Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হা-তৃষ্ণা, হা-নষ্টের জলছবি

কান্দিতে কানাময়ুরাক্ষী খুঁড়ে তেষ্টা মেটাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। লালগোলার একাংশেও শুরু হয়েছে পানীয় জলের জন্য হাহাকার। অথচ জলের অপচয় থামছে কই। রেলস্টেশন হোক বা রাস্তায় জলকলে কোনও ট্যাপ নেই।

কান্দিতে নদী খুঁড়ে জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

কান্দিতে নদী খুঁড়ে জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০২:৪৩
Share: Save:

কান্দিতে কানাময়ুরাক্ষী খুঁড়ে তেষ্টা মেটাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। লালগোলার একাংশেও শুরু হয়েছে পানীয় জলের জন্য হাহাকার। অথচ জলের অপচয় থামছে কই। রেলস্টেশন হোক বা রাস্তায় জলকলে কোনও ট্যাপ নেই। অবাধে গড়িয়ে পড়ছে জল। কোথাও পাইপ ফেটে বইছে জলের ফোয়ারা। অথচ জলের অপচয় রুখতে কোথাও কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে।

লালগোলা স্টেশনে উড়ালপুলের পাশে ট্যাপ না থাকা কল থেকে অবিরাম ধারায় জল পড়ছে। কৃষ্ণপুর স্টেশনে ট্রেনের কোচে জল ভর্তি করার সময় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হোসপাইপ খুলে রাখায় প্রচুর জল অপচয় হয়। অপচয় রোধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে লালগোলার স্টেশন ম্যানেজার বার্নাড বুলির নির্লিপ্ত উত্তর, ‘‘ট্যাপ লাগালে চুরি হয়ে যায়। এখন ফের ট্যাপ লাগানো হবে।’’

লালগোলা স্টেশন থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে প্রয়াত মন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের বাড়ি। প্রয়াত কংগ্রেস মন্ত্রীর ছেলে আবু হেনা ২৫ বছর ধরে স্থানীয় বিধায়ক। মন্ত্রীর নাতি মুর্তুজা হোসেন বকুল জেলা পরিষদের বর্তমান জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ও নাতনি তুহিন সুলতানা বর্তমানে জেলা পরিষদের সদস্য। তিন জন প্রতিনিধির বাড়ি লাগোয়া তহবাজার, গোল্ডেন ক্লাব ও মিনিস্টার রোডে তিনটি জলকলে ট্যাপ নেই। ফলে জলের যথেচ্ছে অপচয় হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মুর্তুজার প্রতিক্রিয়া, ‘‘জলের ধারা ক্ষীণ হওয়ায় এলাকার বাসিন্দারা নলকূপগুলি ভেঙে ফেলেছেন। বিডিওকে জানিয়েছি। কোনও কাজ হয়নি।’’

লালগোলা স্টেশনে এ ভাবেই অপচয় হচ্ছে জল।—নিজস্ব চিত্র

এ দিকে, চামাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া এলাকা, ফকিরপাড়ায়, পুরনো লালগোলা বাসস্টপ-রাধাবাগ মোড়ে, নতুন বাস টার্মিনাসের কাছে ও সিপিএমের লালগোলা জোনাল পার্টি অফিসের পাশের জলকলে ট্যাপ নেই। লালগোলার শ্রীমন্তপুর-রঘুনাথপুর মন্দির লাগোয়া এলাকায় ও ফকিরপাড়া কবরস্থান লাগোয়া এলাকায় দু’জায়গায় পাইপ ফেটে জলের ফোয়ারা ছুটছে। অথচ মেরামতির জন্য কোনও তোড়জোড় চোখে পড়েনি।

১৯৭৬ সালে প্রয়াত মন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের আমলে জল প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। জলাধারে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার গ্যালন জল ধরে। জলাধারটি তিন বছর ধরে পরিস্কার করা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সি আর দাসের ডাক্তারখানা অর্থাৎ তিনমাথার মোড় থেকে কৃষ্ণপুর কালীমন্দির পর্যন্ত, নেতাজি মোড় থেকে কৃষ্ণপুর হাসপাতাল মোড় লাগোয়া টিকটিকিপাড়া পর্যন্ত দুই রাস্তায় প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা পাইপ লাইন আবর্জনায় বন্ধ। ফলে কয়েক মাস ধরে ওই এলাকায় জল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কৃষ্ণপুর হাসপাতাল মোড়, নেতাজি মোড়, কৃষ্ণপুর স্টেশন মোড়, পুরনো বাসস্টপ এলাকায় জলের ট্যাপকলগুলি ভাঙাচোরা অবস্থায় হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে জলকষ্টে ভুগছেন এলাকার মানুষ।

এ ব্যাপারে জানাতে চাইলে লালগোলা জলপ্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা বাস্তুকার নুর নবী বলেন, ‘‘লালগোলা ছাড়াও সাগরদিঘি ও ভগবানগোলা ব্লকের জলপ্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছি। ফলে সব খুঁটিনাটি বিষয় একার পক্ষে দেখভাল করা সম্ভব হয় না।’’

জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর ওই জলপ্রকল্পটি ১৯৯২ সালে লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতিকে হস্তান্তর করে। লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাহী আধিকরিক তথা বিডিও স্বপ্নজিৎ সাহা বলেন, ‘‘পুরনো প্রকল্প। অনেক কিছুই খারাপ হয়ে গিয়েছে। ফলে সময়োপযোগী জলপ্রকল্প গড়ে তুলতে একটি নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।’’

বি়ডিও স্বপ্নজিৎ সাহা ও লালগোলা পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের উপপ্রধান অজয় ঘোষের দাওয়াই, ‘‘জলকলের মুখ থেকে হামেশাই ট্যাপ চুরি হয়ে যায়। জনগণের সচেতনতা ছাড়া এ সব বন্ধ করা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lalgola Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE