Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ঝুঁকি বিধায়ক, বিডিও, কর্মীদের
Coronavirus

লালা পরীক্ষা দিয়েও বেরিয়ে পড়লেন নেতা

নেতার সংক্রমণের রিপোর্ট আসার পরেই মঙ্গলবার রানাঘাট ১ ব্লক অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে বিডিও-সহ বেশ কিছু কর্মীকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সম্রাট চন্দ ও সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ০৬:২২
Share: Save:

গত বুধবার থেকে তাঁর জ্বর ছিল। পরে জ্বর কমে গেলেও সন্দেহ হওয়ায় শনিবার তিনি রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিজের লালারস পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। তার পর সোমবার বিকেলে বেরিয়ে পড়েন রামনগর ১ পঞ্চায়েত এলাকায় পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দলীয় পদযাত্রায়। রাতে রিপোর্ট এলে জানা যায়, রানাঘাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির ওই তৃণমূল নেতা করোনায় আক্রান্ত।

নেতার সংক্রমণের রিপোর্ট আসার পরেই মঙ্গলবার রানাঘাট ১ ব্লক অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে বিডিও-সহ বেশ কিছু কর্মীকে। রামনগর ১ পঞ্চায়েত এলাকাকে ‘কনটেনমেন্ট জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে দিন কারা ওই নেতার সংস্পর্শে এসেছিলেন তার তালিকা তৈরি হচ্ছে। স্যানিটাইজ় করা হয়েছে ব্লক অফিস, রামনগর ১ পঞ্চায়েত অফিস, স্থানীয় তৃণমূলের দফতর। ব্লক অফিসের ৫০ জনেরও বেশি কর্মীকে চিহ্নিত করা হয়েছে যাঁরা ওই নেতার সংস্পর্শে এসেছিলেন। এর মধ্যে বিডিও-সহ ১২ জনের লালারসের নমুনা এ দিনই সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকিদেরও তা নেওয়া হবে। ব্লক অফিসের কর্মীদের ইতিমধ্যে মেসেজ পাঠিয়ে নিভৃতবাসে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও দলীয় কর্মী, পঞ্চায়েত প্রধান বা জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কারা নেতার সংস্পর্শে এসেছিলেন তা চিহ্নিত করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রোগের প্রকোপ বেশি না থাকায় ওই তৃণমূল নেতাকে আপাতত বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করানো হচ্ছে। কিন্তু তাঁর নিজেরই যেখানে সন্দেহ ছিল, সেখানে কী করে ওই নেতা সর্বসমক্ষে এলেন, সেই প্রশ্ন প্রত্যাশিত ভাবেই উঠছে। রানাঘাট ১ ব্লক তৃণমূলের ওই কর্মসূচিতে বহু নেতাকর্মী তো ছিলেনই, বর্ষীয়ান বিধায়ক তথা দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শঙ্কর সিংহও উপস্থিত ছিলেন। বিরোধীরা তো বটেই, দলেরও অনেকে এখন বলছেন, রিপোর্ট আসা পর্যন্ত ওই নেতার অপেক্ষা করা উচিত ছিল। তা না করে তিনি অনেককে বিপদের মুখে টেনে আনলেন।

মঙ্গলবার ওই নেতা অবশ্য দাবি করেন, “আমার জ্বর সেরে গিয়েছিল। আমি এর মধ্যে আর বেরোইনি। দলীয় কর্মসূচি থাকায় শুধু অল্প কয়েক মিনিটের জন্য গিয়েছিলাম।” বিধায়ক শঙ্কর সিংহও বলেন, “ওই নেতা সামান্য সময়ের জন্য এসেছিলেন। তখন তাঁর জ্বর ছিল না, রিপোর্টও আসেনি। আমরা সাবধানতা নিয়েছি। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলছি। পরীক্ষা করাব।”

তৃণমূল নেতার এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন, “ওঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। তবে এই সময়ে ওঁর আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল। সন্দেহ ছিল বলেই তো উনি পরীক্ষা করিয়েছিলেন। রিপোর্ট আসার আগেই এ ভাবে বেরিয়ে পড়লেন কেন যাতে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়?”

সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “রাজনৈতিক কর্মীদের নানা কর্মসূচিতে যোগ দিতে হয় ঠিকই। কিন্তু পরীক্ষার রিপোর্ট আসা পর্যন্ত ওঁর অপেক্ষা করা উচিত ছিল। এতে আরও অনেককে বিপদে ফেলা হল। যা-ই হোক, উনি তাড়াতাড়ি সেরে উঠুন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE