Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মাঝি কোথায়, ফেরি চালায় কিশোর পুত্র

থাকার কথা সবই। সেইমত চুক্তি করেই ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তঋপক্ষ ঠিকাদার নিয়োগ করেছিল ফিডার ক্যানালের উপর তাদের ১০টি ফেরিঘাট চালানোর জন্য। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, মানা হয় না কোনও নিয়মই। 

বিমান হাজরা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২১
Share: Save:

থাকার কথা সবই। সেইমত চুক্তি করেই ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তঋপক্ষ ঠিকাদার নিয়োগ করেছিল ফিডার ক্যানালের উপর তাদের ১০টি ফেরিঘাট চালানোর জন্য। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, মানা হয় না কোনও নিয়মই।

আলো নেই, ঘাটে নামার পথ ও সিঁড়ি নেই, নেই শোচাগার কিংবা সামান্য নলকূপও। অভিযোগ, লাইফ জ্যাকেটও ছিল না। এ বছরই ঘাট প্রতি ৫/৬টি করে দেওয়া হয়েছে তা। থাকার কথা মাঝিদের পোশাক ও পরিচয় পত্র অভিযোগ, বেশির ভাগ ঘাটেই এ সবের বালাই নেই। তাই বাবার নৌকো চালাচ্ছে হয় ছেলে না হয় জামাই। চার দশক আগে ফরাক্কা ব্যারাজ তৈরির সময় ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ফিডার ক্যানাল খনন করেন ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। এই ক্যানাল দিয়েই ফরাক্কা থেকে গঙ্গার জল গিয়ে মিশেছে সুতির আহিরণে। ক্যানালের দু’পাড়ে প্রায় শ’দেড়েক গ্রাম। যোগাযোগ ব্যাহত হবে বলে ক্যানাল কাটা নিয়ে তারা আপত্তি তুললে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ তখন আশ্বাস দিয়েছিলেন, এলাকার মানুষজনের যাতায়াতের জন্য ১০টি জায়গায় ফিডার ক্যানালের উপর সেতু গড়ে দেবেন তারা। যত দিন সেতু গড়া না হচ্ছে, ততদিন নিখরচায় যাত্রীদের নদী পারাপারের ফেরিঘাট চালাবে ফরাক্কা ব্যারাজ। চার দশক পেরিয়েও সেতু হয়নি কোথাও। ফলে ফেরিঘাটই ভরসা এলাকার মানুষের।

এই চুক্তি মেনেই সুতি থেকে ফরাক্কার ঘোড়াইপাড়া, নিশিন্দ্রা, মালঞ্চ, শঙ্করপুর, বল্লালপুর, আমুহা, বালিয়াঘাটি, বামুহা-সহ এলাকায় ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ ১০টি ফেরি সার্ভিস চালু রেখেছেন আজও। ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে শর্ত মেনে প্রতি বছর ফেরিঘাটগুলিতে নিখরচায় পারাপারের জন্য নিলাম ডাক করা হয়। ২২২ জন মাঝি রয়েছেন ওই দশ ফেরিঘাটে। মাঝিদের কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যুনতম হারে মজুরি, ছুটির দরুন বাড়তি, বছরে ৮.৩৩ হারে বোনাস-সহ ১০টি ঘাট চালাতে বছরে ঠিকাদারদের প্রায় ৬ কোটি টাকা মেটায় ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের সুরক্ষায় ঘাটগুলিতে থাকার কথা ঘাটের দু’পাড়ে আলো, পানীয় জলের নলকূপ, শৌচাগার, মাঝি ও যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট। প্রতি দিন প্রায় লক্ষাধিক যাত্রী পারাপার হয় মালঞ্চা, বালিয়াঘাটি, আমুহায়। তিনটি ঘাটেই ৩৪ জন করে মাঝি রয়েছে। শঙ্করপুর ঘাটে ২৮ জন, ঘোড়াইপাড়া ও নিশিন্দ্রায় ২২ জন, বল্লালপুরে ২৬ জন। অভিযোগ, অনেক সময়ই আসল মাঝি কাজে না এসে সামান্য টাকা দিয়ে বাইরের কোনো কিশোর বা তার নিজের ছেলেকে লাগায় নৌকো চালানোর কাজে।

মাঝিদের সিটু নিয়ন্ত্রিত সংগঠনের সভাপতি আবুল হাসনাত খান বলেন, “লিখিত নিয়ম যাই থাক যাত্রী নিরাপত্তা কখনও মানা হয় না ব্যারাজের ঘাটে।’’ তৃণমূলের মাঝি সংগঠনের নেতা সুরেন ঘোষের কথা, “এক একটা ঘাটে ৩৪ জন মাঝি। আদৌ তারা কাজে রয়েছেন, নাকি বহিরাগত বোঝার উপায় নেই।’’

ফেরিঘাটের ঠিকাদাররা অবশ্য যাত্রীদের নিরাপত্তা নেই তা মানতে চান নি। ঠিকাদার সুনীল চৌধুরীর কথা, “দুর্ঘটনার আশঙ্কায় বাড়তি যাত্রী নৌকোয় না চাপাতে কড়া নির্দেশ আছে। তা মেনেই নৌকা চলে।’’ ফরাক্কা ব্যারাজের এক এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের দাবি, কোনও ফেরিঘাট নিয়ম ভেঙে চলছে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farakka Barrage Ferry Irregularities
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE