১৪টি গ্রামীণ হাসপাতালের মধ্যে ১১টিতে এখনও সিজ়ারের ব্যবস্থা করা যায়নি। প্রতীকী ছবি।
প্রসূতি ও শিশুমৃত্যু রুখতে কোনও সমঝোতা করা হবে না, তা বার-বার বলে আসছে স্বাস্থ্য দফতর। কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে একগুচ্ছ স্বাস্থ্য পরিকল্পনাও রয়েছে তার জন্য। হাসপাতালে প্রসবের উপরে জোর দিয়ে প্রচার চলছে লাগাতার। অথচ, নদিয়া জেলায় ১৪টি গ্রামীণ হাসপাতালের মধ্যে ১১টিতে এখনও সিজ়ারের ব্যবস্থা করা যায়নি। এলাকার মানুষই প্রশ্ন তুলেছেন, হাসপাতালে সিজ়ারের ব্যবস্থা না থাকলে কোন মুখে সরকার হাসপাতালে প্রসবের কথা বলে?
তাঁরা অভিযোগ করেছে, সিজ়ারের পরিকাঠামোর অভাবে বহু প্রসূতি ও তাঁদের গর্ভস্থ ভ্রূণের প্রাণসংশয় ঘটছে। সিজ়ার দরকার এমন প্রসূতিকে নিয়ে দীর্ঘ পথ উজিয়ে জেলা বা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে বাড়ির লোককে। অনেকে আবার সেই ঝুঁকি না-নিয়ে বাড়িতেই দাই ডেকে প্রসব করাচ্ছেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, স্বাস্থ্যখাতে এত অর্থ বিনিয়োগ তা হলে কীসের জন্য? তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালেও এই মুহূর্তে তিন দিনের বেশি সিজ়ার হয় না। বাকি দিন সিজ়ার দরকার হলে রোগীদের ছুটতে হয় জেলা হাসপাতালে। সেখানে কোনও অ্যানাসথেটিস্ট নেই। জেলা হাসপাতাল থেকে সপ্তাহে তিন দিন অ্যানাসথেটিস্ট এসে কোনও মতে কাজ চালাচ্ছেন। বেশ কয়েক মাস ধরে বেথুয়াডরি ও বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে সপ্তাহে দু’দিন ধরে পরিকল্পিত ভাবে সিজ়ার হচ্ছে। দিন দশেক আগে করিমপুর গ্রামীন হাসপাতালেও সপ্তাহে দু’দিন সিজ়ার করা শুরু হয়েছে।
এক চিকিৎসক জানালেন, প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছে প্রসূতি। অথচ, করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে সে দিন সিজ়ার করা যাবে না। কারণ সপ্তাহে দু’দিনের বেশি ওই হাসপাতালে সিজ়ার হয় না। অগত্যা তাঁকে ‘রেফার’ করা হল প্রায় আশি কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণনগরের জেলা সদর হাসপাতালে। এতটা রাস্তা উজিয়ে সেই প্রসূতি যখন সদর হাসপাতালে পৌঁছলেন তখন তাঁর অবস্থা অতি সঙ্কটজনক। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সিজ়ারে দেরি হলে গর্ভের মধ্যে শ্বাসকষ্টে শিশুর মৃত্যু হতে পারে।’’ গত বৃহস্পতিবারই এমন তিন জন প্রসূতিকে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছে জেলা হাসপাতালে।
শুধু করিমপুরেই নয়, তেহট্ট, পলাশিপাড়া, কালীগঞ্জ-সহ জেলার প্রায় সর্বত্রই দেখা যায় এমন চিত্র। কারণ, হাতে গোনা কয়েকটি হাসপাতালে সিজ়ার হয়। জেলা সদর হাসপাতাল ছাড়া রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল, চাকদহ, নবদ্বীপ ও শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা সিজ়ারের পরিকাঠামো আছে। জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, দূরদূরান্ত থেকে এ ভাবে প্রসূতিদের জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়। দীর্ঘ যাত্রার ফলে প্রসূতিদের জটিলতা আরও বেড়ে যায়। জেলা সদর হাসপাতালের এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কথায়, “জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রসূতিদের পাঠানো হয়। জেলা হাসপাতালে মারাত্মক চাপ। হিমসিম খাই আমরা।” তিনি বলেন, “৭০-৮০ কিলোমিটার দূর থেকে আসতে গিয়ে মা ও গর্ভস্থ সন্তান দু’জনেরই অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়। রোগীর ক্ষেত্রে ভাল মন্দ কিছু হয়ে গেলে আমাদের উপরে দোষ চাপে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলছেন, “সরাকারি ভাবে জেলা যে ক’টি হাসপাতালে সিজার চালু করার কথা আমরা তার সব ক’টিই চালু করতে পেরেছি।” তাঁর কথায়, “তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালের জন্য দু’জন অ্যানাসথেটিস্ট পাঠানো হবে। তখন ওই হাসপাতালেও ২৪ ঘণ্টা সিজার হবে।’’ কিন্তু ওই ১১ গ্রামীণ হাসপাতালে কী হবে তার উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy