জতুগৃহ: শান্তিপুরের সাপ্তাহিক হাটের ছবিটা এ রকমই ঘিঞ্জি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
আগুন লেগেছে, কিন্তু দমকল ঢোকার পথ রুদ্ধ!
আগুন নেভাতে দমকলের গাড়ি-ই ও কর্মীরাই যদি ঘটনাস্থলে পৌঁছতে না-পারে তা হলে বড় জলাধার, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বা লোক বের হওয়ার একাধিক পথ থেকেও কি শেষ রক্ষা হবে? উত্তরটা যে ‘না’, তা ভাল করে জানেন শান্তিপুরের সুত্রাগড় ও বড়বাজার এলাকার কাপড়ের হাটের ব্যবসায়ীরা। কলকাতার বাগড়ি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর তাঁরা কার্যত যে কোনও দিন অঘটনের আশঙ্কায় সিঁটিয়ে রয়েছেন। কিন্তু ঘিঞ্জি গলি আর কয়েক শো মানুষের ভিড়ে প্রায় স্থবির হয়ে পড়া বাজার এলাকায় বিকল্প এমন কোনও সমাধানসূত্র তাঁরা বের করতে পারছে না যার মাধ্যমে দমকলের গাড়ি প্রয়োজনে বাজার পর্যন্ত ঢুকতে পারে।
শান্তিপুরের খ্যাতি তার কাপড়ের জন্য। সুত্রাগড় এলাকায় কাপড় বিক্রির দু’টি বড় হাট রয়েছে একেবারে মুখোমুখি। বেসরকারি মালিকানাধীন এই দুই হাটে প্রায় হাজার দু’য়েক দোকান রয়েছে। সপ্তাহে দু’দিন করে হাট বসে। কয়েক হাজার ক্রেতা জেলার এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হন। হাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অগ্নিনির্বাপণের যাবতীয় ব্যবস্থা তাঁদের রয়েছে। দু’টি হাটের মধ্যে একটির মালিক শান্তিপুর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলার বিভাস ঘোষ। তিনি বলছেন, হাটের মধ্যেই রয়েছে জলাধার। যাতে প্রায় ৩ হাজার লিটার জল ধরে। হাটের প্রতি তলায় ফায়ার এস্টিঙ্গুইশার রয়েছে। হাটের মধ্যে দশটি জায়গায় সিঁড়ি রয়েছে যা দিয়ে উপরের তলা থেকে নীচে নেমে আসা যায়। একাধিক বাইরে বেরোনোর রাস্তাও রয়েছে। দ্বিতীয় হাটের মালিক অমল বঙ্গ-ও দাবি করেছেন, ‘‘ভুগর্ভস্থ একটি জলাধারও রয়েছে হাটে। যাতে প্রায় ৩০ হাজার লিটার জল ধরে। তিনটি তলাতেই নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও তিনটি জায়গায় ‘ইমার্জেন্সি এক্সিট রয়েছে।
তা না-হয় হল, কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। ঘেরা জায়গায় বাজার। কিন্তু হাটের দিন বাজারের সামনের রাস্তায় দু’পাশে পসরা নিয়ে বসে পড়েন দোকানিরা। সেই সঙ্গে রাস্তাতেই থাকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাইক, টোটো, ভ্যান, রিক্সা। সেই রাস্তা দিয়ে তখন হাঁটাচলাই দুষ্কর। যদি কোনও ভাবে আগুন লাগে তা হলে দমকলের একটি ইঞ্জিনও সেই রাস্তায় প্রবেশ করতে পারবে না। দমকলের ইঞ্জিন ঢুকতে না পারলে জলাধারের জল পাইপে করে কী ভাবে দেওয়া যাবে। বালতি বা মগে করে জল তুলে তো আগুন নেভানো যায় না। দমকলকর্মীদের পক্ষেও সেই জায়গায় ঢুকে আগুন নেভানোর কাজ করা প্রায় অসম্ভব বলা যায়। বাজার থেকে বের হওয়ার একাধিক সিঁড়ি থাকলেও তা বেশ সরু। কয়েক হাজার লোক বাজারে থাকেন। সেই সময় আগুন লাগলে ওই সরু পথ দিয়ে তাড়াহুড়োয় আদৌ কত জন নামতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার শান্তিপুর পুরসভার তরফে পুলিশ, দমকল এবং বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে নানা বাজার, লজ-সহ এলাকার জনবহুল জায়গাগুলির অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়। পুরপ্রধান অজয় দে জানিয়েছেন, এই সমস্ত এলাকায় নিয়মিত নজরদারির পাশাপাশি তাঁরা পরিদর্শন করবেন।
শান্তিপুরের বড়বাজার এলাকার রাস্তারও একই হাল। ব্যবসায়ীরা দোকান বাড়াতে বাড়াতে রাস্তা অর্ধেক দখল করে ফেলেছেন। প্রায় ৩২০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন এখানে। রোদ বা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ওই ঘিঞ্জি রাস্তার উপর আবার পলিথিন টাঙাচ্ছেন। আগুন লাগলে বাজারের ধারে-কাছে দমকলের গাড়ি আসতে পারবে না। সমস্যার কথা মানছেন বড়বাজার ব্যবসায়ী কল্যান সমিতির সম্পাদক প্রসেনজিৎ দেন। তিনি বলেন, “রাস্তা দখলের জন্য ব্যবসায়ীদের অনেককে শো কজ করা হয়েছে। কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছি আমরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy