Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পায়ে আলতা পরিয়ে শুভলগ্ন রাঙিয়ে তোলেন তিনি

এখন আলতা রাসায়নিক দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। বর্তমানে প্রচুর প্রসাধনী দোকান হয়েছে। অনেকেই সেখানে আলতা কেনেন। শৈলেনের দাবি, ‘‘আমার বিক্রি কমেনি। এখনও আমার হাতে তৈরি আলতা পায়েই মেয়েরা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।”

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ০৮:২০
Share: Save:

এলাকায় কোনও পরিবারে মেয়ের বিয়ের কথা পাকা হলেই তাঁর ডাক পড়ে, এমনই তাঁর আলতার কদর! এখন অনেকে আলতার প্রয়োজন মোবাইলেও জানান।

দীর্ঘ চল্লিশ বছর থেকে নিজের তৈরি আলতা বিক্রি করছেন তিনি। বিয়ের মরসুম এলেই অনুষ্ঠান বাড়িতে ডাক পড়ে। নাওয়াখাওয়ার সময় থাকে না। তেহট্টের বেতাই তাবুপাড়ার শৈলেন বালা। তিনি গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে আলতাবাবু, আলতাকাকু বা আলতামামা নামেই পরিচিত। বয়সের ভারে এখন পরিশ্রমের ক্ষমতা কমেছে। তবুও কাঁধে ব্যাগ ও দুই হাতে প্রসাধনী সামগ্রী বোঝাই কাচের শোকেস নিয়ে হেঁটে চলেন গ্রামের পথে।

জানা গেল, করিমপুর, মুরুটিয়া, তেহট্ট, পলাশিপাড়া ও চাপড়া থানার প্রত্যন্ত গ্রামে পায়ে হেঁটেই এই আলতা বিক্রি করেন তিনি। শোনা যায়, বছর ত্রিশ আগে আলতা নিয়ে যাওয়ার জন্য বিয়েবাড়ি থেকে এসে তাঁকে খবর দেওয়া হত। সেই মতো তিনি নির্দিষ্ট দিনে আলতা নিয়ে হাজির হতেন। আলতার কদর এখনও আগের মতোই আছে বলে জানান বছর পয়ষট্টির শৈলেন। তিনি বলেন, “কলকাতা থেকে উপকরণ নিয়ে এসে বাড়িতে নিজের হাতে আলতা, স্নো, পাউডার তৈরি করে বিক্রি করি।’’

আলতা হাতে শৈলেন। —নিজস্ব চিত্র।

এখন আলতা রাসায়নিক দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। বর্তমানে প্রচুর প্রসাধনী দোকান হয়েছে। অনেকেই সেখানে আলতা কেনেন। শৈলেনের দাবি, ‘‘আমার বিক্রি কমেনি। এখনও আমার হাতে তৈরি আলতা পায়েই মেয়েরা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।”

শৈলেন বাবুর স্ত্রী সুলতার কথায়, “বিয়ের পর থেকেই ওঁকে আলতা তৈরি করে, বিক্রি করতে দেখেছি। সপ্তাহের সাত দিনই তিনি আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরেন। এখন লোভনীয় মোড়ক বন্দি প্রসাধনীর প্রতিযোগিতা রয়েছে বাজারে। তবুও আমাদের জিনিসের চাহিদা এতটুকু কমেনি।’’

যে কোনও বিয়ের জন্য আলতা অপরিহার্য। তাই এই বয়সেও শৈলেনকে প্রায় প্রতিদিনই পরিশ্রম করতে হয়। বহু মূল্যের প্রশাধনীর পাশে নগণ্য হলেও প্রয়োজন পড়ে তাঁর তৈরি আলতার। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের সামগ্রী ব্যবহার করে কেউ আজ পর্যন্ত কুফল পাননি।’’ তবে এই আলতা তাঁদের অর্থনৈতিক সম্বলও। আলতা গ্রামে গ্রামে ফেরি করে যা রোজগার হয়, তাতেই দুই মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে সংসার চালান।

বেতাইয়ের বৃদ্ধা রেনুবালা বিশ্বাস বলেন, “শৈলেন বালার দেওয়া আলতা পরেই আমার বিয়ে হয়েছিল। আগে কুমারি মেয়েদের ঠোঁট রাঙাতেও আলতার ব্যবহার ছিল। আধুনিক সমাজে যদিও আলতার কদর কমেছে।” যদিও এখনও আলতাবাবুর আলতার ছোঁয়ায় কনেদের শুভলগ্ন শুরু হয় বলেই জানান এলাকাবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Ritual
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE