মহম্মদ হিলালউদ্দিন। নিজস্ব চিত্র
মাস্টারমশাই কিন্তু কিছুই দেখেননি!
তিনি ঢুকেছিলেন ভোট-যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে। ফিরে এসে দেখলেন, কাত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাহন। উধাও আইএসআই মার্কা শিরস্ত্রাণ!
সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফে রক্ষা নেই, দোসর ভোট-মরসুম! মাথায় হেলমেট না থাকলে ঘরে-বাইরে বিপদ। অতএব বাহন থাকল দাঁড়িয়ে। মাস্টারমশাই চললেন নতুন হেলমেট কিনতে।
মুর্শিদাবাদের ২৩ নম্বর সূতীঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ হিলালউদ্দিন ম্লান হাসছেন, ‘‘চোরের আক্কেলটা দেখেছেন এক বার!’’
হেলমেটের জন্য আর পুলিশের কাছে নালিশ জানাননি বহরমপুরের সলুয়াডাঙার বাসিন্দা ওই শিক্ষক। তবে ফেসবুকে নিজের একটা ছবি পোস্টিয়ে লিখেছিলেন—‘ভোটের ট্রেনিংয়ে এসে হেলমেট
চুরি হল।’
ব্যস! রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৬০টি লাইক, ৯৩টি কমেন্ট ও সাতটি শেয়ার!
কেউ সাবধান করেছেন, চৌকিদারের প্রসঙ্গ টেনেছেন কেউ, কারও পরামর্শ, ‘নির্বাচন কমিশনকে জানান।’ কেউ আবার চোরের মধ্যে সচেতনতার ছায়া দেখে মন্তব্য করেছেন, ‘‘যাক, দেরিতে হলেও চোর অন্তত হেলমেটের গুরুত্ব বুঝেছে!’’ কারও মন্তব্য, ‘‘আশপাশে বোধহয় কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না।’’
শনিবার দুপুরে বহরমপুরে কাশীশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে নির্বাচনের প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিলেন হিলালউদ্দিন। পাক্কা সাড়ে তিন ঘণ্টার প্রশিক্ষণ শেষে তিনি এমনিতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। ভেবেছিলেন, দ্রুত বাড়ি ফিরে একটু বিশ্রাম নেবেন। কিন্তু স্কুলের গ্যারাজে এসে দেখেন, নীলচে-বেগুনি স্কুটি বিশ্রাম নিচ্ছে। কিন্তু বাহনের হাতল থেকে খোয়া গিয়েছে হেলমেট!
হেলমেট পরা কতটা জরুরি তা বোঝাতে বছর তিনেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ‘নো হেলমেট, নো পেট্রলের’ কথা ঘোষণা করেছিলেন। একই সঙ্গে রাজ্য জুড়ে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর প্রচারও শুরু হয়। নড়েচড়ে বসে পুলিশও। ফলে হেলমেট ব্যবহারের প্রবণতা আগের থেকে বেড়েছে।
অভিযোগ, সেই সঙ্গে বেড়েছে হেললমেট চুরিও। বাজার থেকে শুরু করে অফিস, আদালত কিংবা হাসপাতাল চত্বরে রাখা মোটরবাইকের হাতল থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে হেলমেট। দিন কয়েক আগে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক জনকে রক্ত দিতে এসেছিলেন বহরমপুরের গোরাবাজারের বাসিন্দা সুমন সাহা। ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে এসে দেখেন, মোটরবাইক আছে, হেলমেট নেই। সুমন বলছেন, ‘‘চোর যদি সত্যিই সেটা ব্যবহার করে তা হলে ভালই। অভিযোগ জানানোর ঝক্কির থেকে কিনে নেওয়া ভাল ভেবেই আর থানায় যাইনি।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘হেলমেট চুরি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। তবে চুরি তো চুরিই। পুলিশ নজর রাখছে।’’
নেটিজেনদের এক জন হিলালউদ্দিনকে সাবধান করেছেন, ‘‘যা গিয়েছে তা যাক। অবিলম্বে আর একটা হেলমেট কিনে নিন। নইলে পুলিশ ধরলে আর এক ঝক্কি।’’ মাস্টারমশাইও জবাব দিয়েছেন, ‘‘সে আর বলতে! বহরমপুর থেকে নতুন হেলমেট কিনেই বাড়ি ফিরেছি। হরিদাসমাটির কাছে পুলিশ তল্লাশি করছিল। দুর্ঘটনার ভয় তো ছিলই, নতুন হেলমেটটা না কিনলে ফের জরিমানাও গুনতে হত!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy