Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাজিগ্রামে স্বস্তি পুলিশ-প্রশাসনে

মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক গ্রাম, নতুন চাঁদরা। অরঙ্গাবাদের যে জনপদের নাম মুখে মুখে হয়ে যায় বাজিগ্রাম। আড়ালে কেউ কেউ ‘বোমাগ্রাম’ও বলতেন!

বিমান হাজরা
অরঙ্গাবাদ শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২৯
Share: Save:

কথা রেখেছে বাজিগ্রাম!

এক এক করে গ্রামে ঢুকেছিল ১০ জনের নিথর দেহ। দগ্ধ সেই দেহ ছুঁয়ে বাজিগ্রাম কথা দিয়েছিল, ‘‘ঢের হয়েছে! বারুদের কারবার আর নয়।’’

মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক গ্রাম, নতুন চাঁদরা। অরঙ্গাবাদের যে জনপদের নাম মুখে মুখে হয়ে যায় বাজিগ্রাম। আড়ালে কেউ কেউ ‘বোমাগ্রাম’ও বলতেন! ২০১৫ সালের মে মাসে পিংলার বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মারা যান ১৩ জন। তাঁদের মধ্যে দশ জনই ছিলেন নতুন চাঁদরার বাসিন্দা।

সেই ঘটনার পরে গ্রামটা আছে। উধাও বাজি! জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘একটা সময় এই গ্রামকে নিয়ে মাথাব্যথার অন্ত ছিল না। আড়ালে বোমার কারবারও চলত। বছর তিনেক থেকে বারুদ ছেড়েছে ওই গ্রাম।’’

কয়েক বছর আগেও ফালি উঠোন জুড়ে শুকোত ঝাউ, কদম্ব, এয়ার ফাইটার, তুবড়ি। বাড়ির মেয়ে-বৌয়েরাও সে কাজে হাত লাগাতেন। পুজো তো বটেই, অন্নপ্রাশন, বিয়ে, পৈতে উপলক্ষেও বছরভর গ্রামে আনাগোনা করতেন বাজির ক্রেতারা।

নতুন চাঁদরার কলিমুদ্দিন শেখ, রবিউল ইসলাম জানাচ্ছেন, নতুন চাঁদরার বাজি তৈরির অন্যতম কারিগর ছিলেন হানিফ শেখ। হানিফের বাজির লাইসেন্স ছিল ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। সরকার লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়ায় হাইকোর্টে মামলাও করেন হানিফ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থাভাবে তিনি আর মামলা চালাতে পারেননি।

গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, তার পরেও লুকিয়ে কিছু দিন বাজি তৈরি হয়েছে। কিন্তু অরঙ্গাবাদে বেশ কিছু এলাকায় বোমাবাজির ঘটনায় নাম জড়ায় নতুন চাঁদরার। অভিযোগ ওঠে, বাজিতে টান পড়ায় বোমা বাঁধছে কিছু কারিগর। শুরু হয় পুলিশি নজরদারি। গ্রামের কিছু কিশোর, যুবক তখন ভিন জেলার বাজি কারখানায় পাড়ি দিলেন। পিংলাতেও গিয়েছিলেন এই গ্রামের ন’জন কিশোর ও এক যুবক। তাঁরা কেউই বেঁচে ফেরেননি।

গ্রামের ছেলেরা এখনও বাইরে যান। তবে বাজি-কারবারে নয়। বারুদ ছেড়ে কেউ চাষের কাজ করেন, কেউ আছেন কারখানায়, কেউ আবার হাতে তুলে নিয়েছেন কর্নিক। মহিলারা বিড়ি বাঁধেন। নতুন চাঁদরার মোবারক শেখের দুই ছেলেই মারা গিয়েছেন পিংলার বাজি কারখানায়। মোবারক এখন বর্ধমান, কলকাতায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিনি বলছেন, ‘‘বাজিই আমার তরতাজা দুই ছেলেকে খেয়েছে। জীবনে আর ওই পথ মাড়াব না।’’ মঞ্জিরা বিবিরও এক ছেলে মারা গিয়েছেন পিংলায়। তিনি এখন বিড়ি বাঁধেন। মঞ্জিরার কথায়, ‘‘বাজির কথা ভাবলেই ছেলের নিথর মুখটা ভেসে ওঠে। সংসারে অভাব আছে। থাক। কিন্তু আর কাউকে হারাতে চাই না।’’

বাড়ির ফালি উঠোনে এখন হেমন্তের রোদে শুকোচ্ছে ধান, কলাই।

বাজিগ্রাম কথা রেখেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Cracker Village police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE