প্রতীকী ছবি।
সাত জন আগেই গিয়েছিলেন। রবিবার দলীয় সভায় হরিণঘাটা পুরসভার আরও তিন কাউন্সিলরের অনুপস্থিতি তৃণমূলকে চরম দুশ্চিন্তায় ফেলল।
দলীয় সূত্রের খবর, হরিণঘাটা পুরসভা নিয়ে দলের সঙ্কট চরমে ওঠার পরেই তৃণমূলের সদ্যনিযুক্ত নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার এখানে সভা করতে আসেন। কিন্তু তাতে সমস্যা মেটার বদলে বরং দুশ্চিন্তার দাগ চওড়া হয়েছে দলীয় নেতাদের কপালে। কারণ, তিন কাউন্সিলারের অনুপস্থিতি।
ইতিমধ্যে ১৭ কাউন্সিলরের এই পুরসভায় তৃণমূলের ৭ জন কাউন্সিলর হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। গত শনিবার দিলীপ রায়, তাপস হালদার, নীলয় রায়, সুমন্ত মণ্ডল-সহ সাত জন উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ায় মুকুল রায়ের বাড়িতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কাঁচরাপাড়ার মিলননগরের মাঠে জনসভায় তাঁরা হাতে বিজেপির পতাকা তুলে নেন।
সেখানেই তাঁরা ঘোষণা করেছিলেন, আরও তিন জন কাউন্সিলর আস্থা ভোটে বিজেপির পক্ষে ভোট দেবেন। ফলে দ্রুত ১১ সদস্যের সমর্থনে বোর্ড গড়ে ফেলবে বিজেপি। জেলার এই নবীনতম পুরসভা তৃণমূলের হাত ছাড়া হবে। সেই দাবি তখন প্রকাশ্যে উড়িয়ে দেয় তৃণমূল।
কিন্তু রবিবার ঠিক সেই তিন জন কাউন্সিলরই বৈঠকে অনুপস্থিত থেকে তৃণমূলের পক্ষে পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলেছেন। বোর্ড বাঁচাতে তৃণমূল মরিয়া হলেও ১৭ জনের মধ্যে মাত্র সাত জন কাউন্সিলরকে এ দিনের সভায় হাজির করতে পেরেছে দল। যদিও ওই তিন জন তাঁদের অনুপস্থিতির পিছনে অসুস্থতা ও বাড়ির সমস্যার কারণ দর্শিয়েছেন, তবে রাজনৈতিক মহলের খবর, তাঁদের দলবদল এক রকম পাকা। হরিণঘাটা পুরসভা ধরে রাখা এখন তৃণমূলের পক্ষে কার্যত অসম্ভব।
চাকদহের সিংহেরবাগানে জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর সিংহের বাড়িতে ডাকা এ দিনের সভায় যে তিন জন কাউন্সিলর আসেননি তাঁরা হলেন যথাক্রমে বিউটি দাস, মানিক ভট্ট ও শান্তা পাল। বিউটি দেবী অসুস্থতার কারণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। বাকি দু’জন মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মানিক ভট্ট ফোনে বলেন, “অসুস্থ বলে যেতে পারিনি।” আর শান্তা পাল বলেন, “আমার শাশুড়ি অসুস্থ। তাই সভায় যেতে পারিনি।”
মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দলীয় সমস্যা সমাধানে এ দিন কোনও সভা করার কথা মানতে চাননি। দাবি করেছেন, “এ দিন কোনও সভা ডাকা হয়নি। আমি শংকরদার বাড়িতে এসেছিলাম। তাই হরিণঘাটা পুরসভার কয়েক জন কাউন্সিলর আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের দলের বোর্ড নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।” জেলা সভাপতি শঙ্কর সিংহের কথাতেও, “হরিণঘাটায় তেমন কোনও সমস্যা নেই। সব ঠিক আছে।”
হরিণঘাটা ব্লকের দুটো পঞ্চায়েত নিয়ে বছর চারেক আগে তৈরি হয়েছে পুরসভা। পুরপ্রধান কে হবেন রাজীব দালাল নাকি দিলীপ রায় তা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। তার অব্যবহিত আগেই ব্লক তৃণমূল সভাপতি ছিলেন চঞ্চল। তবে পুরসভা এলাকায় সভাপতি করা হয় উত্তম সাহাকে। তবে তৃণমূল সূত্রেরই দাবি, এক সময়ে শুধু নামেই সভাপতি ছিলেন উত্তম। শহর তৃণমূলের সব সিদ্ধান্ত নিতেন চঞ্চল নিজে। নবগঠিত হরিণঘাটা পুরসভায় রাজীব দালালকে পুরপ্রধান করার পিছনেও তাঁরই হাত ছিল। এমনিতেই রাজীব পুরপ্রধান হওয়ার পর থেকেই অন্তত তিন জন কাউন্সিলর পুরসভায় যাওয়া বন্ধ করে দেন। আর বেশ কয়েকজন অনিয়মিত হয়ে যাতায়াত করতেন। আর দিলীপ রায়কে পুরোপুরি কোণঠাসা করে দেওয়া হয়।
দলীয় সূত্রের খবর, রাজীব দালাল বিরুদ্ধে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হওয়ারই পরিণতিতেই একাংশের দলত্যাগ। তাই অনেকেই পুরপ্রধানের বদল চাইছেন। রাজীব দালাল অবশ্য বলেন, “কে কী বলছে, জানি না। তবে দল চাইলে আমি পদ থেকে সরে যেতে রাজি আছি।”
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy