Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

৪৫ লক্ষের লুঠ শহরে

মঙ্গলবার ব্যাঙ্কে যাওয়ার পথেই ওই যুবকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্রের বাড়ি মেরে, শূন্যে গুলি ছুড়ে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে পালায় তিন দুষ্কৃতী। যদিও ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পুলিশ তাদের ধরে ফেলে। খোয়া যাওয়া টাকাও উদ্ধার হয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৭
Share: Save:

রোজই নানা পেট্রোল পাম্প ঘুরে তাড়া-তাড়া টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কে জমা দিতে যান তিনি। মোটরবাইকেই যান। কেউ যে তাঁর গতিবিধি নজর করছে তা ঘুণাক্ষরেও বোঝেননি।

মঙ্গলবার ব্যাঙ্কে যাওয়ার পথেই ওই যুবকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্রের বাড়ি মেরে, শূন্যে গুলি ছুড়ে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে পালায় তিন দুষ্কৃতী। যদিও ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পুলিশ তাদের ধরে ফেলে। খোয়া যাওয়া টাকাও উদ্ধার হয়েছে।

ঘটনাস্থল রানাঘাট শহরের মিশন রোড। আক্রান্ত যুবকের নাম তন্ময় ঘোষ। বাড়ি শান্তিপুর থানার ফুলিয়া সাহেবডাঙায়। মাথায় চোট পাওয়ায় তাঁকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

তন্ময় জানান, নানা পেট্রোল পাম্প থেকে টাকা সংগ্রহ করে ব্যাঙ্কে জমা দেওয়াটাই তাঁর কাজ। অন্য দিনের মতো এ দিনও টাকা নিয়ে বাইকে রানাঘাটের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। দুপুর ১২টা নাগাদ রানাঘাটের ঘটিগাছা এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি পেট্রোল পাম্প থেকে তিনি শেষ টাকা সংগ্রহ করেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময়ে যে বাইকে তিন যুবক তাঁর পিছু নিয়েছে, তা তিনি বুঝতে পারেননি।

তন্ময়ের বয়ান অনুযায়ী, মিশন রেলগেট পার করে ডান দিকে মিশন রোড দিয়ে খানিকটা যাওয়ার পরে দেবনাথ স্কুলের সামনে হাম্প থকায় তিনি বাইকের গতি কমান। তখনই পিছন থেকে বাইকে তিন যুবক এসে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তাঁর মাথায় মারে। আচমকা আঘাতে তিনি বেসামাল হয়ে গেলেও টাকার ব্যাগ ছাড়েননি। মরিয়া হয়ে এক দুষ্কৃতী শূন্যে গুলি ছোড়ে। এ বার ভয় পেয়ে যান তন্ময়। আর সেই সুযোগে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।

ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী ভাস্কর সরকার বলেন, “চোখের সামনে দিয়ে বাইক দু’টি চলে যায়। প্রথমটিতে এক জন, আর পিছনের বাইকে তিন জন ছিল। তখন বুঝতে পারিনি, কী ঘটতে চলেছে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে গুলির শব্দ। ছুটে গিয়ে দেখি, প্রথম বাইকের ছেলেটি রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছে। তাঁর মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে।”

গুলির শব্দ পেয়ে এলাকার আরও লোকজন ছুটে এসেছিলেন। তাঁরাই তন্ময়কে হাসপাতালে নিয়ে যান। এর মধ্যে পুলিশ এসে যায়। তাদের কাছে হামলাকারী আর তাদের বাইকের বিবরণ দেন তন্ময়। রানাঘাট শহরের চারদিকের রাস্তায় নজরদারি শুরু করে দেয় পুলিশ। ঘণ্টাখানেক বাদে রানাঘাট থানারই নোকারি এলাকা থেকে তিন জনকে পাকড়াও করা হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম অনুপ হেলা, বিকাশ মণ্ডল এবং সুজিত পত্তনদার। অনুপের বাড়ি কুপার্স ক্যাম্পে, বিকাশের তাহেরপুরে আর সুজিতের গাংনাপুর থানার ঘোলা এলাকায়। ধৃতদের কাছ থেকে টাকা ছাড়াও দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং দু’টি কার্তুজও পাওয়া গিয়েছে।

হাসপাতালে শুয়ে তন্ময় বলেন, “প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা ছিল আমার ব্যাগে। ওরা পুরোটাই ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।” পুলিশের দাবি, পুরো টাকাটাই উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু এত টাকা রোজ এ ভাবে নিয়ে যাওয়া কি নিরাপদ? এখন পেট্রোল পাম্পের মালিকদের অনেকেই বলছেন, এটাই দস্তুর ঠিকই। কিন্তু এতে যে ঝুঁকিও রয়েছে, তা-ও ঠিক। তবে তাঁদের প্রশ্ন, পুলিশ কি আদৌ রাস্তায় টহল দেয়? নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়ার দাবি, ‘‘আমাদের নজর রয়েছে। আতঙ্কের কারণ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Snatching Money Miscreants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE