Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ব্রিগেডে সভা তো হবেই, বেড়ানোও হবে

তৃণমূল নেতারাই বলছেন, এ বার ব্রিগেড সমাবেশ ঘিরে কর্মীদের মধ্যে উৎসবের মেজাজ তৈরি হয়েছে। 

যাত্রা-নাস্তি: দুর্ঘটনায় দুই বালক আহত হওয়ার পরে ভাণ্ডারখোলায় অবরোধে আটকে পড়ল ব্রিগেডগামী বাস। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ

যাত্রা-নাস্তি: দুর্ঘটনায় দুই বালক আহত হওয়ার পরে ভাণ্ডারখোলায় অবরোধে আটকে পড়ল ব্রিগেডগামী বাস। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২১
Share: Save:

তৃণমূল নেতারাই বলছেন, এ বার ব্রিগেড সমাবেশ ঘিরে কর্মীদের মধ্যে উৎসবের মেজাজ তৈরি হয়েছে।

বুধবার সকালেই তাই করিমপুর থেকে রওনা হয়ে গিয়েছিল কর্মী বোঝাই বাস। সারা দিন মায়াপুর ঘুরে দিঘা। সেখানে দু’দিন কাটিয়ে তার পর আজ, শনিবার ব্রিগেড।

শুক্রবারও অনেক কর্মী জেলার এ দিক-ও দিক থেকে রওনা হয়েছেন। দুপুর দুপুর থেকেই জেলা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস ছাড়তে শুরু করেছে। তাদের থাকার জন্য কলকাতায় নানা জায়গায় ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। শনিবার ভোর থেকে রেল-লাগোয়া এলাকার কর্মীরা চেপে পড়বেন ট্রেনে। নদিয়ার তৃণমূল নেতারা বুক ঠুকে বলছেন, “এ বার দেড় থেকে দু’লক্ষ লোক যাবে।”

তৃণমূল নেত্রীর ব্রিগেড সমাবেশ এ বার তারকাখচিত। অন্য মাত্রার। তাই আয়োজনের কোনও রকম ত্রুটি রাখতে চাননি জেলার নেতারা। ব্লক ধরে ধরে হিসেব করা দেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক বাস। সেই সঙ্গে আছে কয়েক হাজার ছোট গাড়ি। অনেকেই বলছেন, এ বার সত্যিই রেকর্ড সংখ্যক লোক যাচ্ছে নদিয়া থেকে।

ব্রিগেড সফল করার জন্য অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা তৃণমূল। গত ২৯ ডিসেম্বর বেতাইয়ে জনসভা করে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার রেশ কাটতে না কাটতে ৯ ও ১০ জানুয়ারি প্রশাসনিক সভা করতে জেলায় এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগর থেকে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সরাসরি তোপ দেগে গিয়েছেন। তার প্রভাব ব্রিগেডমুখী ভিড়ের উপরেও পড়ছে। তা ছাড়া, লোকসভা নির্বাচনের আগে নিজের এলাকা থেকে বেশি লোক নিয়ে গিয়ে জেলা নেতৃত্বের নজরে আসার তাগিদও কাজ করছে স্থানীয় মেজো-ছোট নেতাদের মধ্যে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলা নেতৃত্ব প্রায় দেড় হাজার বাসের ব্যবস্থা করেছেন। তেহট্ট মহকুমায় রেললাইন নেই। যাতায়াত পুরোপুরি সড়কপথে। তাই তেহট্ট, চাপড়া, করিমপুর ও পলাশিপাড়া বিধানসভা এলাকার জন্য বরাদ্দ হয়েছে প্রায় পাঁচশো বাস। যদিও পলাশিপাড়ার বেশির ভাগ কর্মী পলাশি স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেন।

কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া, কৃষ্ণনগর উত্তর ও দক্ষিণ বিধানসভা এলাকার বেশির ভাগ কর্মীও ট্রেনে যান। ফলে এই চার এলাকার জন্য অপেক্ষাকৃত কম, আড়াইশো বাস বরাদ্দ করা হয়েছে। চাকদহ-হরিণঘাটা এলাকার জন্য বরাদ্দ হয়েছে তিনশো বাস। নবদ্বীপের কর্মীদের একটি বড় অংশও ট্রেনে যাতায়াত করেন। তার পরেও শুধু এই বিধানসভার এলাকার জন্য বরাদ্দ হয়েছে দেড়শো বাস। এর বাইরে কল্যাণী, শান্তিপুর, কৃষ্ণগঞ্জ, হাঁসখালি, রানাঘাট-১ ও ২ ব্লকের বেশির ভাগ কর্মী ট্রেনে যান। এ বারও তা-ই হবে। এই ছ’টি ব্লকের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় তিনশো বাস। নদিয়ার পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনা থেকেও নেওয়া হয়েছে বাস।

বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলা জুড়ে যত বেসরকারি বাস চলে তার আশি শতাংশের বেশি তুলে নেওয়া হয়েছে। কলকাতায় চলে গিয়েছে প্রচুর গাড়িও। ফলে শনিবার রাস্তায় বেরোতে বাধ্য হবেন যাঁরা, তাঁঅদের ভোগান্তি প্রায় অনিবার্য। নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির পক্ষে অসীম দত্ত অবশ্য আশ্বাস দেন, ‘‘যে ,ব বাস জেলায় থাকছে, সেগুলি যাতে যত বেশি সম্ভব চালানো যায়, আমরা সেই চেষ্টা করছি।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের দাবি, “এ বারের ব্রিগেড সমাবেশ কর্মীদের মধ্যে একটা উৎসবের চেহারা নিয়েছে। কাউকে সে ভাবে বলতে হয়নি। সকলেই যে যার মতো আয়োজন করে চলে যাচ্ছেন।”

উৎসাহের চোটেই বোধহয় ‘ব্রিগে়ড পর্যটনে’ও বেরিয়ে পড়েছেন অনেকে। করিমপুরের পিপুলবেড়িয়া পঞ্চায়েতের আনন্দপুর গ্রাম থেকে যে বাসটি বুধবারই মায়াপুর হয়ে দিঘার রাস্তা ধরেছে, তাতে সওয়ার জনা ষাটেক। সপরিবার বেড়ানো। ফোনে গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মিন্টু সরকার বলেন, ‘‘গাঁয়ের লোকের বেড়ানো হয় না। তাই ভাবলাম, ব্রিগেড যখন যাবই, দু’দিন ঘুরেও আসা যাক। খরচাপাতি যা লাগছে, আমরা নিজেরাই দিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE