আহত সঞ্জিত রায়। নিজস্ব চিত্র
কখনও গুলি কখনও বা বোমার সপ্লিন্টার— গত সাত মাসে মুর্শিদাবাদে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার ঘটনা কম নয়। আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মৃত্যু-তালিকাও বেশ দীর্ঘ। প্রতিটি ঘটনার পরে নিয়ম করে দলের শীর্ষ নেতারা তোপ দেগেছেন বিরোধীদের দিকে। তবে ওই টুকুই। দলের কর্মীদের তাই ক্ষোভ, নেতা-কর্মীর জীবন ফুরোলেই জেলা নেতারা তাঁদের ভুলে যান। দলের এক মেজ নেতা আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘‘জীবনের মেয়াদ শেষ হলেই নেতাদের কাজ শেষ। আর ওই শহিদের পাশে তাঁদের দেখা যায় না। এটাই এখন আমাদের দলের চরিত্র!’’
৩ জুন, পঞ্চায়েত অফিস থেকে মোটরবাইকে ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন নওদা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রিঙ্কি রায়ের স্বামী সঞ্জিত। বুকে-পেটে-পায়ে পাঁচটা বিদ্ধ বুলেট নিয়ে তাঁকে কলকাতার এসএশ কেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সদ্য ছাড়া পেয়েছেন। তবে তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘অভিযুক্তেরা সকলেই বুক ফুলিয়ে পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সকলেই তৃণমূলের। ভাবখানা, পারলে কিছু করে নে!’’ এই আতঙ্কের আবহে, জেলা নেতাদের কেউই তাঁর বাড়িতে আসেননি বলে জানান, সঞ্জিত।
একই অবস্থা বালি ১ গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সনাতন মন্ডলের। গত ডিসেম্বর মাসে বাড়ির সামনে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। গুলি লাগে তার হাতে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর তিনি বাড়িতে। বাড়ির উঠোনে বসে বলেন, ‘‘এখনও স্ক্রু দিয়ে পাত লাগানো রয়েছে হাতে। মাঝেমধ্যেই যন্ত্রণা। স্বাভাবিক কাজকর্মও করতে পারি না।’’ বাড়ির সকলেরই আশঙ্কা ফের আক্রান্ত হতে পারেন তিনি। তাই কদাচিৎ বাইরে পা রাখলে আলো পড়ার আগেই ঘরে ফেরেন। তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘‘স্বামী-ছেলেকে নিয়ে খুব আতঙ্কে আছি।’’ তবে এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেননি তাঁরা। পুলিশে আর ভরসা নেই তাঁদের। তাঁর অভিযুক্তেরাও এলাকায় সহজলভ্য। তবে পুলিশ তাদের ‘খুঁজে পাচ্ছে না’!
সনাতন বলেন, ‘‘এর পরেও কোন ভরসায় পুলিশকে বলি বলুন!’’ বরং বললে যে চাপ আরও বাড়বে তা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন তাঁরা স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ তো এক দিনও তদন্ত করতে এল না বাড়িতে। ওদের উপরে আবার কিসের ভরসা? ওঁরা তো অভিযুক্তকেই খুঁজে পান না।’’ সনাতনের ক্ষোভ, জেলা নেতাদেরকেউই দেখতে আসেননি, ‘‘কেউই দেখতে আসেননি বাড়িতে। তাঁরা যেন গা থেকে বোঝা ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন। সত্যিই তো নেতাদের সময় কোথায়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy