Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
ঠেলার নাম ‘দিদিকে বলো’

উঠোনে পা দিতেই ধমক

সে কাজে নেমেই রঘুনাথগঞ্জের বিজেপি প্রভাবিত হিলোড়া এলাকায় গিয়ে অজস্র নালিশ শুনে এলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। তপন সিংহের গ্রাম হিসেবে হিলোড়াকে এক ডাকে চেনেন এলাকার মানুষ।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বিমান হাজরা
হিলোড়া শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৫
Share: Save:

ভোটের উঠোনে গাঁ-গঞ্জে ভরাডুবির পরে মেরামতির প্রথম ধাপ হিসেবে দলের মেজ-সেজ নেতাদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদেরও গ্রামের উঠোনে রাত কাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন দলনেত্রী। সঙ্গে পরামর্শ ছিল— এমন জায়গায় যান যেখানে বিরোধীরা বাসা বাঁধছেন!

সে কাজে নেমেই রঘুনাথগঞ্জের বিজেপি প্রভাবিত হিলোড়া এলাকায় গিয়ে অজস্র নালিশ শুনে এলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। তপন সিংহের গ্রাম হিসেবে হিলোড়াকে এক ডাকে চেনেন এলাকার মানুষ। লোকসভা নির্বাচনের পরে সে গ্রাম এখন বিজেপির দখলে। সেখানেই পা রেখে স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা, তোলাবাজি থেকে দলীয় নেতাদের দুর্ব্যবহারের ভুরি ভুরি অভিযোগ শুনলেন ব্লক নেতারা।

ওই গ্রামেই বাড়ি বিজেপি-র উত্তর মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি সুজিত দাসের। গত লোকসভা নির্বাচনেও গ্রামের ৩টি বুথের একটিতে ২২০ ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। বাকি দু’টি মিলে অবশ্য সামান্য ভোটে এগিয়ে তৃণমূল। এই ফলাফলই কি হিলোড়া নজর কেড়েছে দিদির দাওয়াই প্রশান্ত কিশোরের? নির্দেশ এসেছিল তাই —হিলোড়ায় গিয়ে রাত কাটাতে হবে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের। সেই সঙ্গে নাম পাঠানো হয়েছিল গ্রামের ৫টি পরিবারের। সেই সব পরিবারের কেউই তৃণমূলের সমর্থক নন। সে ভাবে রাজনীতিও করেন না তাঁরা। অথচ তাঁদের বাড়ি গিয়েই শুনতে হবে অভিযোগ ও ক্ষোভের কথা, এমনই নির্দেশ ছিল। সেই নির্দেশ মানতে গিয়েই দলের সুতি ১ ব্লক সভাপতি, যুব ব্লক সভাপতি, স্থানীয় বংশবাটি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, জেলা পরিষদ সদস্য সকলকেই শুনতে হল বেহাল স্বাস্থ্য নিয়ে ক্ষোভের কথা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নেতারা গ্রামে ঢুকেই সটান জহরুল ইসলামের বাড়ি যান। পেশায় গ্রামীণ চিকিৎসক কোনও রাখঢাক না রেখেই নেতাদের কাছে ছুঁড়ে দেন অভিযোগ, “রাস্তাঘাটের কথা ছাড়ুন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটা চালু করুন। আশপাশের ২৫টি গ্রামের কাছে হিলোড়াই ছিল ভরসা। দেখুন কি অবস্থা?” সেখান থেকে দেবপ্রসাদ মজুমদারের বাড়ি। চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরু গেছেন তিনি। তাঁর বৃদ্ধা মায়ের হাতে ‘দিদিকে বলো’র কার্ড বাড়িয়ে দিতেই সটান জবাব, “আমরা কি কথা বলব দিদিকে, দেখছেন তো সব। স্বাস্থ্যহীন গ্রামে কি করে ভাল থাকব!’’ একই কথা তানেরা বিবির। নেতাদের সামনেই তিনি বলেন, “প্রসূতি মায়েদের কষ্টের কথাটা কেউ ভাবেন না। ভাবলে এ ভাবে পড়ে থাকত না হাসপাতাল। চিকিৎসার জন্য ছুটতে হত না বীরভূমে।”

সুবোধ খামারুর বর্ধিষ্ণু পরিবার। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। অথচ তাঁর বাড়িতেই শাসক দলের নেতাদের দেখে প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে যান। দিদিকে বলো কর্মসূচী মেনেই তাঁদের আসা জানিয়ে দিদির অফিসের ফোন নম্বর লেখা কার্ডটি বাড়িয়ে দিতেই একটু যেন স্বস্তি পেলেন। বললেন, “যদি গ্রামের জন্য কিছু করতেই হয় সারিয়ে তুলুন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সেরাজুল ইসলাম বলছেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে গ্রামের ক্ষোভ অসঙ্গত নয়। আমরা সেটাই শুনতে এসেছিলাম। দিদির সঙ্গে যোগাযোগের একটা ফোন নম্বর দিয়েছি। সমস্যার কথা জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Didi Ke Bolo TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE