Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Mamata Banerjee

‘দিদিকে বলো’ ফেরাতে চান তৃণমূল নেতারা

দলের জেলা সভাপতি আবু তাহের খানও অরিত, সৌমিকের রাস্তায় হেঁটে এই কর্মসূচির পক্ষেই সওয়াল করেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বিদ্যুৎ মৈত্র
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ ০২:৪২
Share: Save:

বছর খানেক আগে মানুষের সুবিধা অসুবিধার কথা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে রাজ্য জুড়ে চালু হয়েছিল ‘দিদিকে বলো কর্মসূচি’। লোকসভা ভোটের পর ভোটকুশলী পিকে-র পরামর্শে জনসংযোগ বাড়াতে তৃণমূলের এই কর্মসূচি ঘিরে উৎসাহ দেখা দিয়েছিল দলীয় নেতা কর্মীদের মধ্যে। বিরোধী দলের নেতা কর্মীরাও এলাকার অভাব অভিযোগ জানানোর সুযোগ নিয়েছিলেন সেই নম্বরে ফোন করেই। পাশাপাশি গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার শাসকদলের নেতা-কর্মীরা নামে বেনামে দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সম্প্রতি এই কর্মসূচির সক্রিয়তা কমেছে। কিন্তু এই কর্মসূচির চাহিদা রয়েছে বলে জানান শাসকদলের নেতারাই। সেই কর্মসূচির সুফল জেলার মানুষ পেয়েছিলেন জানিয়ে ওই কর্মসূচীর জেলা কো-অর্ডিনেটর অরিত মজুমদার বলেন, “চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দিদিকে বলো কর্মসূচি ততটা সক্রিয় নেই। তবে এখনও ওই ফোন নম্বর সক্রিয় থাকায় অনেক ফোন আসে সাহায্য চেয়ে। এই কর্মসূচি ফের শুরু করলে ভাল হয়। সে কথা রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”

ট্রেনের টিকিট বুক করা থেকে হাসপাতালের বেড পাওয়ার সাহায্য চেয়েও ফোন ঢুকত ওই নম্বরে। শিশু থেকে ক্যানসার রোগীর পরিবারও সরকারি সাহায্য পেয়েছেন ‘দিদিকে বলো’তে ফোন করেই। এমনকি আর্থিক সাহায্য চেয়েও ফোন হয়েছে নির্দিষ্ট ওই ফোন নম্বরে। তাদের সাহায্য করে জননেতা হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন স্থানীয় নেতারাও।

জেলার ২৬টি ব্লকের প্রতিটি অঞ্চলে অঞ্চলে নানান অভিযোগ নিয়ে জেলা জুড়ে কয়েক হাজার ফোন এসেছিল ওই ফোন নম্বরে। অভিযোগ ও সাহায্য চেয়ে ফোন এসেছিল হাজারের উপরে, এমনটাই দাবি অরিতবাবুর। তার মধ্যে এই কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে রেশন ব্যবস্থার সমস্যার সুরাহা বেশি হয়েছে বলে জানান তিনি। কোথাও সরকারি প্রকল্পে অবহেলা বা কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভর্ৎসনা থেকে সাজা দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি আমলারাও পেয়েছেন। সেই কারণেই আজও দিদিকে ফোন করে নিজের অভিযোগ না জানাতে পারার আক্ষেপ রয়েছে বহু মানুষের।

তবে মানুষের সব অভিযোগ মেটানো হয়ত সম্ভব হয়নি জানিয়ে অরিতবাবু বলেন, “এই কর্মসূচিতে যে সব সময় দলের বিরুদ্ধে অভিযোগই আসত, তা তো নয়। এই নম্বরটা মানুষ হেল্পলাইন হিসাবেও ব্যবহার করত। তাই মনে হয় এই কর্মসূচি চালু থাকলে ভোটের আগে আমাদেরও সুবিধা হত।” দলের অন্য আর এক কো-অর্ডিনেটর সৌমিক হোসেন বলেন, “এই কর্মসূচিতে মানুষের উপকার হয়েছিল। আমার মনে হয় এই কর্মসূচি সক্রিয় থাকলে ভালই হত।”

দলের জেলা সভাপতি আবু তাহের খানও অরিত, সৌমিকের রাস্তায় হেঁটে এই কর্মসূচির পক্ষেই সওয়াল করেন। তিনি বলেন, “এই কর্মসূচিতে সরাসরি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে মানুষ নিজের কথা জানিয়ে উপকার পেয়েছিলেন। মানুষই চাইছেন এই কর্মসূচি থাকুক।”চেয়ারম্যন সুব্রত সাহা অবশ্য এই কর্মসূচি প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে বলেই মনে করেন। তিনি বলেন, “একটা সময় পরে যে কোনও কর্মসূচির গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এই কর্মসূচিরও প্রয়োজন ফুরিয়েছে।” কিন্তু জেলা নেতাদের একাংশ বলেন, “স্থানীয় নেতাদের দুর্নীতির কথা সরাসরি সরকারি আধিকারিক কিংবা দিদিকে বলবার সুযোগ থাকায় লোকসভা ভোটের পরে মানুষের সঙ্গে দলের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল অনেকটা।”

তবে কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন “দিদিকে বলো কর্মসূচি বুমেরাং হয়েছে। দিদির প্রতিনিধি হিসাবে যেখানে যেখানে গিয়েছে সেখানেই দূর্নীতির অভিযোগ শুনেছে পিকে’র দল। তাই মনে হয়েছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE