Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মহুয়া নিয়ে অস্বস্তিতে পর্যবেক্ষকও

প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে: এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কেন নেই  সাংসদ তথা সাংগঠনিক জেলা সভাপতি? বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ তাঁকে ফোন করার কথা বলাতেই কি দল মহুয়াকে আড়াল করছে? তাই কি বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারলেন না? 

বৈঠকের পরে শঙ্কর সিংহ ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

বৈঠকের পরে শঙ্কর সিংহ ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২২
Share: Save:

সাংসদ তথা কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে তৃণমূল যে কার্যত অস্বস্তিতে, তা ফের প্রমাণ হয়ে গেল। শুক্রবার কৃষ্ণনগর জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যেপাধ্যায়। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও দেখা গেল না মহুয়াকে। গত কয়েক দিন ধরেই তাঁকে নিয়ে দলের সদস্যদের মধ্যে গুঞ্জনের অন্ত নেই। এ দিন তা আরও বেড়েছে। বৈঠক শেষ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েও মহুয়াকে নিয়ে কার্যত অস্বস্তিতে পড়তে হয় রাজীবকে।

প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে: এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কেন নেই সাংসদ তথা সাংগঠনিক জেলা সভাপতি? বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ তাঁকে ফোন করার কথা বলাতেই কি দল মহুয়াকে আড়াল করছে? তাই কি বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারলেন না?

রাজীব অবশ্য দাবি করেন, মহুয়া শারীরিক কারণে জেলার বাইরে আছেন। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে আজও ওঁর কথা হয়েছে। কালও কথা হয়েছে। দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের ব্যাখ্যা তিনি নিজেও দিয়েছেন, দলের তরফে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও তাঁর বক্তব্য জানিয়েছেন।”

প্রতি মাসে দলের জেলা সংগঠনে দুই স্তরে বৈঠক করার নির্দেশ দিয়ে যে চিঠি মহুয়া পাঠিয়েছিলেন, তার নীচে ‘বাই অর্ডার’ কথাটি লেখা ছিল। তা নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ-ও তাঁর ক্ষোভের কথা জানিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজীবকে চিঠি দিয়েছিলেন। এ দিন সেই প্রসঙ্গ উঠলে ফের অস্বস্তিতে পড়েন রাজীব। তিনি বলেন, “আমি জানি না, কী করে এই চিঠি সংবাদমাধ্যমের কাছে গিয়েছে। কল্লোল খাঁ যদি কিছু বলেও থাকেন, তা হলে সেটা দলনেত্রীকে বলেছেন আর পর্যবেক্ষক হিসাবে আমার কাছে এসেছে। এই বিষয় নিয়ে আমি সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলব না।”

লোকসভা ভোট মিটে যাওয়ার পর থেকে মহুয়াকে জেলায় না পাওয়া, ফোন না ধরা-সহ নানা বিষয় নিয়ে একাধিক বার প্রকাশ্যেই ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন কল্লোল। এর পরে ফের এই চিঠি। পর্যবেক্ষক হিসাবে এটা তাঁর কাছে কতটা অস্বস্তিকর, তা নিয়ে কথা বাড়াতে চাননি রাজীব। তিনি শুধু বলেন, “আমি দলের এক জন অনুগত সৈনিক। যেটুকু যা বলার দলনেত্রীকেই বলব। আগামী দিনে দল যে ভাবে নির্দেশ দেবে, সেই মতোই যা করার করব।”

এ দিন বৈঠক শুরু আগে জেলা পরিষদের সভাকক্ষে এসে একে-একে হাজির হতে থাকেন দলের জেলা পরিষদ সদস্যরা। মহুয়া মৈত্র ও দেবশ্রী রায় সম্পর্কে দিলীপ ঘোষের মন্তব্য নিয়ে আলোচনা হতে থাকে। সরস মন্তব্যও শোনা যায়। তবে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে চাননি। মুচকি হেসে এক জেলা পরিষদ সদস্য বলেন, “বলব বলব, আগে দেখে নিই দল কী ব্যবস্থা নেয়!”

পরে বৈঠকে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যান জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডু। কোনও কোনও সদস্য তাঁর বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন। তাঁদের অভিযোগ, অনেক সময়েই কথা বলতে গিয়ে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরে রিক্তা এর জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। দলীয় সূত্রের খবর: রিক্তা দাবি করেন, এটাই তাঁর কথা বলার ধরন। এটা তাঁর দোষের মধ্যে পড়ে। ইচ্ছা করে তিনি কাউকে আঘাত করতে চান না। যদিও বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি দাবি করেন, “সভায় এমন কিছুই ঘটেনি।”

গত ৮ অগস্ট কৃষ্ণনগর পুরসভার সভাকক্ষে তেহট্টের জেলা পরিষদ সদস্য টিনা ভৌমিক অভিযোগ করেন, তাঁর এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ হলে তাঁকে কিছুই জানতে দেওয়া হয় না। এ দিন সে প্রসঙ্গে রাজীব জানিয়ে দেন, যে এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ হবে, সেখানকার সদস্যকে অবশ্যই জানাতে হবে। সেই সঙ্গে পূর্ত ও সেচের মতো দফতরগুলির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। এক মাস অন্তর জেলা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করার নির্দেশও দেন তিনি দলনেতা চঞ্চল দেবনাথকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Mahua Moitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE