Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Crime

তৃণমূলের কর্মী খুন, অন্তর্দ্বন্দ্বের নালিশ

ধৃত সুমনের স্ত্রী গার্গী রায়ের অভিযোগ, ‘‘আমার স্বামীকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমার স্বামী খুনের সঙ্গে যুক্ত নন।’’

চিরঞ্জিতের দেহ ঘিরে ভিড়। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

চিরঞ্জিতের দেহ ঘিরে ভিড়। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২০ ০৭:৫০
Share: Save:

মধ্য রাতে, শহরের একেবারে মাঝখানে ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকায় মঙ্গলবার গুলি করে খুন করা হল চিরঞ্জিত চক্রবর্তী (৩২) নামে এক যুবককে। চিরঞ্জিত বহরমপুর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। চিরঞ্জিতের বাড়ি বহরমপুর শহরের গোরাবাজারে। এই ঘটনায় সুমন রায় নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি সুমনের কাছ থেকে একটি পিস্তল, ৪ রাউন্ড গুলি ও একটি মোটরবাইক উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁকে বুধবার বহরমপুরে সিজেএমের এজলাসে তোলা হলে বিচারক ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদের সময় ধৃত সুমন জানিয়েছে চিরঞ্জিত আমার সঙ্গে একজনের সম্পর্ক নষ্ট করে দিচ্ছিল। ওকে না সরালে, ও আমাকে সরিয়ে দিত। তাই আমি ওকে খুন করেছি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের কথা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে, তেমনই এই খুনের পিছনে অন্য কেউ আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ ধৃত সুমনের স্ত্রী গার্গী রায়ের অভিযোগ, ‘‘আমার স্বামীকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমার স্বামী খুনের সঙ্গে যুক্ত নন।’’

পুরভোটের মুখে এই খুন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে হইচই শুরু হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ তুলছে কংগ্রেস। জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, ‘‘চিরঞ্জিৎ দলের সক্রিয় কর্মী। তাঁকে খুন করেছে সুমন রায় নামে এক দুষ্কৃতী। অভিযুক্তের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ অশোকের দাবি, ‘‘বহরমপুর শহরের অনেক খুনোখুনির সঙ্গে যুক্ত অধীর চৌধুরী। এই খুনের ঘটনায় তাঁর কোনও ভূমিকা আছে কি না পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’’ কংগ্রেস সাংসদ অধীরবাবুর বক্তব্য, ‘‘মত্ত অবস্থায় এক তৃণমূল কর্মী আর এক তৃণমূল কর্মীকে খুন করেছে। পুলিশ তদন্ত করলেই তা জানতে পারবে। তবে পুলিশকে অনুরোধ, তৃণমূলের কথায় তারা যেন কংগ্রেস কর্মীদের ফাঁসিয়ে না দেয়।’’

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চিরঞ্জিত শহর তৃণমূল সভাপতি নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। ধৃত সুমনের সঙ্গেও নাড়ুগোপালবাবুর সম্পর্ক ছিল বলে দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে। নাড়ুগোপালবাবু বলেন, ‘‘সুমন আমাদের দলের কেউ নয়। প্রতিবেশী সুমন মাঝে মধ্যে আমার কাছে আসতো। কিন্তু ওর কার্যকলাপ ভাল নয় দেখে ১৩ দিন আগে তাকে আমার কাছে আসতে নিষেধ করে দিয়েছিলাম।’’

প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ব্যক্তিগত গোলমালের জেরেই এই খুন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নাড়ুগোপালের বাড়িতে দলের অফিসে ছিলেন চিরঞ্জিৎ এবং সুজয়শোভন সাহা। সূত্রের খবর, রাত ১১ টা ১৮ মিনিট নাগাদ সুমন নাড়ুগোপালবাবুকে ফোন করেন। কিন্তু নাড়ুগোপালবাবু তাঁর ফোন কেটে দেন।

তার কিছু ক্ষণ পরে চিরঞ্জিৎ এবং সুজয়শোভন সাহা একটি স্কুটি করে বাইরে বোরোন বলে সুজয়বাবুর দাবি। এর পরে নাড়ুগোপালবাবুর বাড়ি থেকে একশো মিটারের মধ্যে সুমন একটি বাইকে করে এসে চিরঞ্জিতকে দাঁড় করান। কিছু কথা কাটাকাটি হওয়ার পরে চিরঞ্জিতের বাঁ কানের গোড়ায় ও কোমরের উপরে গুলি করেন। প্রত্যক্ষদর্শী সুজয় পালিয়ে যান। তখন তাঁর দিকেও গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। নাড়ুগোপালবাবুর লোকজন চিরঞ্জিৎকে উদ্ধার করে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসরা চিরঞ্জিতকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

নাডুগোপালেবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমার ধারণা বেশ কয়েক মাস ধরে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। মনে হচ্ছে সুমন আমাকে খুন করার উদ্দেশ্যে এসেছিল। আমি ফোন কেটে দেওয়ায় আমার বাড়িতে আসেনি। তাই মাঝ রাস্তার আমার ভায়ের মতো দলীয় কর্মী খুন করেছে।’’

তাঁর আবেদন, ‘‘এই খুনের পিছনে যারা আছে তাদের চিহ্নিত করে পুলিশ ব্যবস্থা নিক।’’ ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে বহরমপুর থানার পুলিশ যায়। সেখানে থাকা একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আততায়ীর বাইকের ছবি উদ্ধার করে। এর পরে সেই নম্বর ধরে খোঁজ নিতে দেখা যায় মোটরবাইকটি সুমনের নামে রয়েছে। সুমনকে মত্ত অবস্থাতে গ্রেফতার করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE