Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সবুজ বাগানে অস্বস্তি সেই পদ্ম-কাঁটাই

লক্ষ্য ছিল বিরোধী শূন্য চব্বিশে চব্বিশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থামতে হল তেইশে! ঘাসফুলের দুর্গ অক্ষত রেখে নবদ্বীপের চব্বিশটা ওয়ার্ডের মধ্যে তেইশটিতেই তৃণমূলের প্রার্থীরা জয়ী হলেন। এই নিয়ে চতুর্থ বারের জন্য নিরঙ্কুশ ভাবে নবদ্বীপ পুরসভার দখল নিল তৃণমূল। মঙ্গলবার সকাল গড়িয়ে দুপুর ছোঁয়ার আগেই নবদ্বীপে অকাল হোলি। চারিদিক সবুজে সবুজ।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৩
Share: Save:

লক্ষ্য ছিল বিরোধী শূন্য চব্বিশে চব্বিশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থামতে হল তেইশে!

ঘাসফুলের দুর্গ অক্ষত রেখে নবদ্বীপের চব্বিশটা ওয়ার্ডের মধ্যে তেইশটিতেই তৃণমূলের প্রার্থীরা জয়ী হলেন। এই নিয়ে চতুর্থ বারের জন্য নিরঙ্কুশ ভাবে নবদ্বীপ পুরসভার দখল নিল তৃণমূল। মঙ্গলবার সকাল গড়িয়ে দুপুর ছোঁয়ার আগেই নবদ্বীপে অকাল হোলি। চারিদিক সবুজে সবুজ। অথচ এই মসৃণ জয়ের পরেও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে পদ্ম-কাঁটা।

আজ, বুধবার প্রায় এক দশক পড়ে নবদ্বীপে পা রাখার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক তার আগের দিন ‘২৩-১ গোলে ম্যাচ’ জিতে যতটা খুশি হওয়ার কথা ছিল তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের, ঠিক ততটা কিন্তু খুশি নন তাঁরা। কারণ ভোটের ফলাফলের অঙ্ক স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছে। লোকসভা ভোটে নবদ্বীপে মোদী হাওয়ায় ভর করে সিপিএমকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি। একবছর পরেও নবদ্বীপে ছবিটা কিন্তু বিশেষ বদলায়নি। পুরসভায় একটা আসন না পেয়েও বিজেপি তাদের অবস্থান আরও খানিকটা মজবুত করছে। ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডেই বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। অন্য দিকে, গত পুরভোটে তিনটে আসন পাওয়া সিপিএম এ বার একটা মাত্র আসনে জিতে মুখরক্ষা করলেও প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে আরও কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। কংগ্রেস আক্ষরিক অর্থেই টিকে রয়েছে দেওয়ালে।

নবদ্বীপের বিধায়ক তথা মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহার মতে নবদ্বীপের এই জয় আসলে এক ধরনের ধারাবাহিকতা। তিনি বলেন, “এই জয় নবদ্বীপের শান্তিপ্রিয় মানুষের জয়।” বিজেপির ভোট বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “নবদ্বীপে এখন সব দলই তৃণমূলের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী হলেও তাঁরা সংকীর্ণ স্বার্থে পারস্পরিক একটা বোঝাপড়া করে নিয়েছন। সাম্প্রদায়িক বিজেপি এখানে শক্তি বাড়াতে চাইছে। এ ব্যাপারে নবদ্বীপের সচেতন মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে।”

তবে বিজেপির নদিয়া জেলার সহ সভাপতি জীবনকৃষ্ণ সেন বলেন, “গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই নবদ্বীপের মানুষ আমাদের ভরসা করছেন। নবদ্বীপে আমরা এ বার শুধু দ্বিতীয় স্থানেই নই, আগের থেকে ভোটও বেড়েছে অনেক। তবে আমাদের সাংগঠনিক ব্যপারে কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলি কাটিয়ে উঠে আগামী বিধানসভায় আরও ভাল ফলের আশা করছি।”

নবদ্বীপের মতো মসৃণ জয় এসেছে শান্তিপুরেও। সেই সঙ্গে শান্তিপুরের বিধায়ক অজয় দে সেই ১৯৯০ সাল থেকে এই নিয়ে টানা ছ’বার পুরভোটে বিজয়ী হলেন। শান্তিপুরের ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টি ওয়ার্ড তৃণমূল দখল করেছে। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও বের করতে পারেনি ১১ নম্বর ওয়ার্ডটি। সেখানে সিপিএমের গত দু’বারের বিজয়ী সৌমেন মাহাতো এ বারেও জয়ী হয়েছেন। জয়ী হয়েছেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অনিমা মণ্ডলও। অজয়বাবু বলেন, “এ আমাদের প্রত্যাশিত জয়। তবুও যেখানে খামতি আছে আগামীতে তা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করব।’’ বামেদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আসলে বামেরা একটা আসনে জিতেছে। কেন না ওই নির্দল প্রার্থী বাম সমর্থিত নন, উনি সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি সর্বদল সমর্থিত।” সিপিএমের শান্তিপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, “মানুষের কাছে সন্ত্রাস পরাজিত হয়েছে। আগামী বিধানসভা ভোটেও মানুষ তার প্রমাণ দেবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE