দাম বাড়ায় কমেছে ডিমের বিক্রি।
ডিম নিয়েও এমন দরদাম হতে পারে! ক্রেতা-বিক্রেতার কথোপকথনে থমকে দাঁড়াচ্ছেন বাজারে আসা লোক। বিক্রেতা কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। এ দিকে, ক্রেতাও নাছোড়বান্দা।
—ডিম কত করে?
—সাত টাকা।
—জোড়া?
—না দাদা, একটার দাম!
—দু’দিন আগে তো নিয়ে গেলাম চার টাকা করে।
—দাম বেড়েছে।
—সাড়ে ছ’টাকা করে নাও।
—পারব না। লোকসান হবে।
শেষতক রফা হল ৬.৭৫ টাকা। রবিবার কৃষ্ণনগর বাজারে দাম মিটিয়ে মাঝবয়সী সেই ক্রেতা বিজয়ীর হাসি হাসছেন, ‘‘তবুও তো ২৫ পয়সা করে কমে পেলাম!’’ বহরমপুর বাজারে আর এক দৃশ্য। ১৩ টাকা জোড়া শুনে বাজার করতে আসা এক যুবক বলেছিলেন, ‘‘পোলট্রি মুরগির ডিমের দাম জানতে চেয়েছিলাম তো।’’ যা শুনে ডিম বিক্রেতা বলেছেন, ‘‘আমিও তো দাদা ঘোড়ার ডিম রাখি না।’’
বাঙালির আগে মাছে-ভাতে, দুধে-ভাতের মতো বেশ কিছু শব্দ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুধ কিংবা মাছের মতো ডিমও যে বাঙালির পাতে কতটা জরুরি তা টের পাওয়া যায় খাদ্য তালিকায় চোখ রাখলেই। অ্যালার্জি, ডাক্তারের নিষেধ কিংবা নিরামিশাষীদের বাদ দিলে প্রাতঃরাশ থেকে রাতে, ডিম বিনে গতি নেই। সেই ডিমের দাম এমন বেড়ে গেলে হইচই তো হওয়ার কথা। হচ্ছে। কল্যাণী থেকে কৃষ্ণনগর, করিমপুর থেকে কাগ্রাম, বহরমপুর থেকে বাদকুল্লা, জলঙ্গি থেকে জঙ্গিপুর, সাগরপাড়া থেকে সাগরদিঘি সর্বত্রই একই হাহাকার, ‘‘দাম কমবে কবে?’’
কৃষ্ণনগরে কোথাও ডিমের দাম সাড়ে ছ’টাকা, কোথাও সাত টাকা। খুচরো ব্যবসায়ীদের দাবি, ‘‘ডিম বাজারে কম আসছে। আর আমাদেরও অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।”
পাইকারদের দাবি, ডিম আগের মতো আসছে। তবে দাম বেশি পড়ছে। কিন্তু কখনই সেটা ৭ টাকা হতে পারে না। কৃষ্ণনগরের পাত্রবাজারের ডিমের পাইকার অমিত বিশ্বাস জানান, তিনি প্রতিদিন ১১০৪ বাক্স ডিম আনান অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। সেই একই ডিম আনাচ্ছেন। ফলে ডিমের জোগান কম, এমনটা কিন্তু এখনই বলা যাচ্ছে না।
নবদ্বীপে আনাজে বাজার এখনও আগুন। মাছের বাজারও চড়া। খাসির মাংসের দোকানে লক্ষ্মণের দু’টো গণ্ডি। এক চড়া দাম, দুই ডাক্তারের নিষেধ। এ দিকে, চিকেনে ক্লান্ত লোকজন সিদ্ধ, ওমলেট, হাফ বয়েলড কিংবা নিপাট ঝোল যাই হোক না কেন ডিমেই দিব্যি ছিলেন। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে ডিমের এমন মূল্যবৃদ্ধিতে মাথায় হাত সকলের। নবদ্বীপ বাজারে গত সপ্তাহেও ডিম বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা জোড়া। রবিবার তা বিক্রি হয়েছে ১৩ টাকা থেকে ১৪ টাকা জোড়া। নবদ্বীপের ডিম ব্যবসায়ী আশিস দাম, দীপক দামেরা বলছেন, ‘‘কেন যে এমন হল, বুঝতে পারছি না। মহাজনেরা বলেছেন, বিহার ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলিতে ডিমের চাহিদা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই কারণেই এই মূল্যবৃদ্ধি।’’
কৃষ্ণনগরে পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী উত্তম দেবনাথ বলেন, ‘‘অন্ধ্রপ্রদেশে ফোন করে জেনেছি, বিদ্যুতের বিল, শ্রমিকের মজুরি ও ফার্মের খরচ বেড়ে যাওয়ার জন্যই নাকি ডিমের দাম বেড়েছে।’’ জঙ্গিপুরে ডিম সাড়ে ছ’টাকা। ৩০টি ডিম একসঙ্গে কিনলে ১৭০ টাকা পড়ছে। কান্দিতেও ডিমের দাম সাড়ে ছ’টাকা থেকে সাত টাকা।
রবিবার বহরমপুরের আড়তে ডিমের পাইকারি দর ছিল ৫ টাকা ৬০ পয়সা। খোলা বাজারে যা সাড়ে ছ’টাকা থেকে সাত টাকা। বহরমপুরের ডিমের আড়তদার বাচ্চু প্রামাণিক জানিয়েছেন অন্ধ্র থেকে ডিম আমদানি হয় কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা জেলায়। প্রতি বছর শীতে ডিমের দর বাড়ে। শীতে অন্ধ্র থেকে ডিম বিহারে আমদানি হয়। এ বছর এ রাজ্যে না পাঠিয়ে বিহারে পাঠানোয় এ অবস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy