বাঁধন-যাপন: লালগোলায়।
টালির ছাউনি দেওয়া একফালি বারান্দা। ছোট তক্তপোশে মলিন পোশাক পরে জমজ দুই ভাই, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। দু’জনের পায়েই শেকল, খুঁটিতে বাঁধা।
লালগোলার লস্করপুরের উনত্রিশ বছরের দুই মানসিক প্রতিবন্ধী ভাইয়ের দিন যাপন এমনই শৃঙ্খলিত। কেন?
বাড়ির লোকজন দায়সারা করে উত্তর ছুঁড়ে দিচ্ছেন, ‘‘পালিয়ে গেলে কে দেখবে, খুঁজবে কে!’’ ছাড়া পেলেই এলোমেলো হেঁটে তাঁরা ‘হারিয়ে’ যান। তাদের খুঁজে পেতে বাড়ির লোকজনকে কম ‘হ্যাপা’ পোহাতে হয় না। তাই এটাই উপায়।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শুধুমাত্র শৌচকাজ আর খাওয়ার সময় একটু, বাকিটা তক্তপোশে খুঁটে বাঁধা পড়েছে ওঁরা।
খবরটা পৌঁছিয়েছে, লালগোলার বিডিও সামসুজ্জামানের কাছে। বলছেন, ‘‘খবর পেয়েই কিছুদিন আগে বিএমওএইচকে ওদের বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম। প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়েছে। কিন্তু মানসিক হাসপাতালেও ভর্তি না করালে তো উপায় নেই।’’
দুই ভাইয়ের বাবা আলতাফ শেখ। পাড়ায় হরেক মাল বিক্রি করেন। মা এরাসুন বিবি ঘর গেরস্তালি সামাল দেন আপ্রাণ। গরিবের টানাটানির সংসারে চার ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। যমজ দুই ভাই রাকিব ও সাকিব ছোট থেকেই এ ভাবে। সুযোগ পেলেই দুই ভাই যেন উড়ে বেড়ায়।
যমজ ছেড়ে অন্য গ্রামে চলে যায়। দিন কয়েক আগেই তারা ঘর ছাড়া হয়ে চলে গিয়েছিল লালগোলা স্টেশন। সেখান থেকে ট্রেন ধরে সটান দক্ষিণ ২৪ পরগণা। বিস্তর খোঁজ করে শেষতক ফিরিয়ে আনা তাঁদের।
রাকিবের মা এরাসুন বলেন, ‘‘বহরমপুরের ডাক্তার দেখিয়েছি। তেমন আশা দেননি ডাক্তার। ঘরে রাখতে গেলে শেকল ছাড়া উপায় কি!’’ আলতাফ বলছেন, ‘‘ওদের ছেড়ে দিলেই গ্রাম ছেড়ে কোথায় চলে যাবে তার ঠিক নেই। তাই বাধ্য হয়েই এ ভাবে রাখতে হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy