Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সংসার থেকে বাতিলের খাতায়, দুই বৃদ্ধার ঠিকানা আপাতত নবদ্বীপ হাসপাতালই

বয়সের দায়! পরিবার ছেড়েছে রাস্তায়

তিনি নবদ্বীপ হাসপাতালেই রয়েছেন। চিকিৎসকদের মতে, এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ। তাঁকে হাসপাতালে রাখার দরকার নেই। কিন্তু কোথায় যাবেন ওই বৃদ্ধা? সামান্য দু’একটি কথা ছাড়া নিজের সম্পর্কে কোনও কথাই বলতে রাজি নন তিনি। 

বাড়ির লোকের দেখা নেই। নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসাপাতলে ঠাঁই হয়েছে দুই বৃদ্ধার। নিজস্ব  চিত্র

বাড়ির লোকের দেখা নেই। নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসাপাতলে ঠাঁই হয়েছে দুই বৃদ্ধার। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৫৫
Share: Save:

মন্দির দেখানোর নাম করে এক বৃদ্ধাকে নবদ্বীপের রাস্তায় ছেড়ে গেলেন পরিবারের লোকেরা।

গত বৃহস্পতিবার রাতের দিকে নবদ্বীপ পোড়ামাতলার একটি গলির মধ্যে ওই বৃদ্ধাকে বসে থাকতে দেখা যায়। প্রথম দিকে কেউ তেমন নজর দেননি। কিন্তু রাত দশটা বেজে গেলেও বৃদ্ধা একই ভাবে ওখানেই বসে থাকায় সন্দেহ হয় স্থানীয় মানুষদের। তাঁরা কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই কাঁদতে শুরু করেন মধ্য সত্তরের ওই বৃদ্ধা। দেখা যায়, তিনি বেশ অসুস্থও। তাঁকে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

সেই থেকে তিনি নবদ্বীপ হাসপাতালেই রয়েছেন। চিকিৎসকদের মতে, এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ। তাঁকে হাসপাতালে রাখার দরকার নেই। কিন্তু কোথায় যাবেন ওই বৃদ্ধা? সামান্য দু’একটি কথা ছাড়া নিজের সম্পর্কে কোনও কথাই বলতে রাজি নন তিনি।

রবিবার হাসপাতালে বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলতে গেলে প্রথমে কিছুই বলতে চাননি ওই বৃদ্ধা। পরে বিক্ষিপ্ত ভাবে ক’টি কথা বলেন। তিনি তাঁর নাম হাসপাতালে রেণুবালা বললেও পরে জানান, তঁর নাম কিরণবালা দেবনাথ। বাড়ির ঠিকানায় তিন জায়গার নাম করেছেন— রানাঘাট, তাহেরপুর এবং বারাসাত। কানে কিছুটাকম শোনা ওই বৃদ্ধা জানান, তাঁর বিনোদ দেবনাথ নামে এক ছেলে ছিল, যাঁর চার বছর মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই সমস্যার শুরু। ওই বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘নবদ্বীপের মন্দির দেখানোর নাম করে ওরা আমায় ছেড়ে দিয়ে গিয়েছে। ভিড়ে আর খুঁজে পাইনি।’’ জানা গিয়েছে, ৬ সেপ্টেম্বর, নবদ্বীপে কালাদিবসের মহামিছিলের দিন এই ঘটনা ঘটে।

বৃদ্ধা জানিয়েছেন, তাহেরপুরে তাঁর দু’বিঘা জমি আছে। আছে সরকারি খরচে করে দেওয়া বাড়ি। কাঁদতে কাঁদতে ওই বৃদ্ধার অভিযোগ, ছেলে মারা যাওয়ার পর তাঁকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন তাঁর বউমা গীতা। তার আগে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে যাবতীয় সম্পত্তি। পুত্রবধূর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে ওই বৃদ্ধা বলেন, ‘‘আমি আর কিছুতেই বাড়ি ফিরব না।’’

অন্যদিকে, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নবদ্বীপের বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট থেকে আরও এক অসুস্থ প্রবীণ মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন কয়েক জন যুবক। নবদ্বীপের বাসিন্দা মৃন্ময়, চিরন্তন প্রমুখ জানান, বৃষ্টির মধ্যে স্টেশনে তাঁকে পড়ে থাকতে দেখে রেল পুলিশের সাহায্যে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বয়স্ক ওই মহিলার হাতে একটি বড় মাপের ক্ষত ছিল। কয়েক দিনের চিকিৎসায় সেই ক্ষত কিছুটা ভাল হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই বৃদ্ধা মানসিক ভারসাম্যহীন। হাসপাতাল সুপার বাপ্পা ঢালি বলেন, ‘‘ওঁর জন্য বিকল্প কী ব্যবস্থা করা যায়, দেখছি।” আপাতত পরিবারের ত্যাগ করা দুই বৃদ্ধার ঠিকানা নবদ্বীপ হাসপাতাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elderly Woman Barred Age
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE