Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘রাক্ষস’ ধরছে খুদে পড়ুয়ারা, পাঁচিল গড়বে স্কুল

তার পর, ব্যাগের ভেতর থেকে নিঃশব্দে বের করে ফেলে বয়ামটা। ঢাকনা খুলে তাকে সেঁদিয়ে দিয়েই তাদের উল্লাস, আরও একটা বাড়ল। যেন রাক্ষসের পরাণটা তারা বন্দি করল ডালডা কিংবা বাদাম তেলের ওই বয়ামে!

বোতলবন্দি রাক্ষস: লালবাগে। ছবি:  ইন্দ্রাশিস বাগচী

বোতলবন্দি রাক্ষস: লালবাগে। ছবি: ইন্দ্রাশিস বাগচী

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
লালবাগ শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৯ ০২:৫৩
Share: Save:

সময় পেলেই ওরা ‘রাক্ষস’ খোঁজে। দল বেঁধে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরা হোক, কিংবা বিকেলে খেলার ফাঁকে ‘রাক্ষস’ দেখলেই ওরা এক ছুট্টে গিয়ে তাকে চিলের মতো ছোঁ মেরে তুলে নেয়। তার পর, ব্যাগের ভেতর থেকে নিঃশব্দে বের করে ফেলে বয়ামটা। ঢাকনা খুলে তাকে সেঁদিয়ে দিয়েই তাদের উল্লাস, আরও একটা বাড়ল। যেন রাক্ষসের পরাণটা তারা বন্দি করল ডালডা কিংবা বাদাম তেলের ওই বয়ামে!

রাক্ষস? হাসতে হাসতে স্কুল ফেরত পড়ুয়ারা বলছে, ‘‘প্লাস্টিকের প্যকেট গো! আমরা প্লাস্টিক মুক্ত মানে রাক্ষস মুক্ত একটা গ্রাম গড়ে তুলব, তুলবই।’’

সেই পরিবেশ গড়তে লালবাগের শিশুভারতী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাস্টিককে ‘রাক্ষস’ বলে এঁকে দিয়েছে ছেলেমেয়েদের মনে। সেই ‘রাক্ষসের’ হাত থেকে শহর বাঁচানোর দায় এখন তাদের হাতে। প্লাস্টিকের সেই প্যাকেট রাখার জন্য স্কুল ও বাড়িতে বয়াম দিয়েছে স্কুল। পড়ুয়ারা তা রাখছে তাদের স্কুল ব্যাগেই, রাক্ষস দেখলেই জাপটে ধরে তাকে সেঁদিয়ে দিচ্ছে বয়ামে। স্কুলব্যাগে জলের বোতলের পাশেই তার ঠাঁই। নিজেদের বাড়ির আশপাশে কিংবা স্কুল চত্বরে, স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্লাস্টিক দেখলেই তা তুলে নিচ্ছে। প্লাস্টিকে সে বয়াম ভর্তি হয়ে গেলে তা স্কুলে জমা দেওয়া হচ্ছে। মাসদুয়েক আগে শুরু হওয়া এই কর্মসূচীতে প্রায় শ’খানেক প্লাস্টিক বয়াম এখন স্কুলের মূলধন। শিশুভারতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজয় চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘প্লাস্টিক ক্যারি ব্যাগে বয়াম পূর্ণ হওয়ায় সেগুলি শক্ত হচ্ছে। আগামী দিনে এগুলি আমরা ইট হিসেবে ব্যবহার করব।’’

সদ্য বেরিয়েছে সরকারি নির্দেশ— প্রতিটি স্কুল চত্বরই পাঁচিল দিয়ে ঘিরতে হবে। শিশুভারতীও সে পথেই হাঁটছে। তবে তাদের প্রাচীর গড়ার রকমটা ভিন্ন।

কেরলের বেশ কিছু এলাকায় ইটের বদলে কাদা মাটির সঙ্গে প্লাটিক বোঝাই বয়াম দিয়ে পোক্ত পাঁচিল গড়া হয়েছে। সে পথেই হাঁটতে চাইছে শিশুভারতীও।

বছর দুয়েক আগে কেরলের একটি বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা ইটের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহারের উপর মডেল তৈরি করেছিলেন। প্লাস্টিক বোতল দিয়ে ঘর তৈরি করেও দেখিয়েছেন তাঁরা। তবে মুর্শিদাবাদে নিদেনপক্ষে পাঁচিল গড়লে তা যে নজির হবে তা নিয়ে সংশয় নেই। স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রাজ মণ্ডল গত দু’মাসে দেদার রাক্ষক ধরেছে। বলছে, ‘‘একটা করে রাক্ষস ধরি আর মনে হয় একটু করে পরিষ্কার হল এলাকাটা। দেখবেন এক দিন এলাকায় একটাও রাক্ষস থাকবে না। তারা সব পাঁচিলে বন্দি হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

murshidabad lalbag plastic free
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE