Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ধেয়ে আসছে বর্ষার ভরা জলঙ্গি, ভাঙন রুখল রাম-রহিমের গ্রাম

চাপড়ার দক্ষিণ বড় আন্দুলিয়া গ্রামে বাঁশ, বালির বস্তা ফেলে বাঁধটাকে যখন কোনও মতে রক্ষা করা গেল, তখন মাঝদুপুর। ভোর থেকে বাঁশের খুঁটি পুঁতে ক্লান্ত গ্রামের প্রায় শ’দেড়েক মানুষ।

বাঁধ গড়ার কাজে হাত লাগিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

বাঁধ গড়ার কাজে হাত লাগিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
চাপড়া শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৭:৪০
Share: Save:

দু’দিন ধরেই নদীর পাড় ভাঙার ঝুপঝাপ শব্দে মাঝরাতে ঘুম ভাঙছিল। শুক্রবার ভোরে মসজিদের মাইকে ডাক শুনে আর শুয়ে থাকতে পারেননি কেউ। মসজিদ বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন জলঙ্গি নদীর ধারে। নিজামুদ্দিন, আলমগিরদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অভিজিৎ, গৌরাঙ্গেরা।

চাপড়ার দক্ষিণ বড় আন্দুলিয়া গ্রামে বাঁশ, বালির বস্তা ফেলে বাঁধটাকে যখন কোনও মতে রক্ষা করা গেল, তখন মাঝদুপুর। ভোর থেকে বাঁশের খুঁটি পুঁতে ক্লান্ত গ্রামের প্রায় শ’দেড়েক মানুষ। সারা গায়ে কাদা মেখে অভিজিৎ দত্ত বলেন, “যাক মসজিদটাকে তা হলে বাঁচানো গেল।’’ যা শুনে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বসির মিঞা বলেন, “চার দিকে শুধু ধর্ম নিয়ে গন্ডগোলের খবর শুনি। তাতে কী হয় কে জানে। সবাই আমাদের গ্রামে এসে দেখে যাক, ধর্ম পালন কাকে বলে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন আগেই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলঙ্গির পাড় ভাঙতে শুরু করেছিল। সেই ভাঙন রোধ করার জন্য প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছিল স্থানীয় পঞ্চায়েত। কিন্তু মসজিদের সামনের অংশটি তিন দিন আগে দ্রুত ভাঙতে শুরু করে। নদী চলে আসে মসজিদের একেবারে কাছে। ফলে পঞ্চায়েতের জন্য আর অপেক্ষা করতে পারেননি গ্রামের মানুষ। ভোরে মসজিদের মাইকে বাঁধ বাঁচানোর ডাক দিতেই ছুটে যান সকলে। বাঁশবাগান থেকে বাঁশ কেটে নিয়ে যেতে বলা হয়। সেই মতো হিন্দু-মুসলিম সকলেই বাঁশ নিয়ে যান। নিয়ে যান বালি, সিমেন্টের ব্যাগ। স্থানীয় বাসিন্দা তথা গাতিশালা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কালীপদ হালদার বলেন, “দেশ জুড়ে অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে বড় আন্দুলিয়া এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। আমরা চাই ভারতের সমস্ত গ্রাম যেন এমন হয়ে ওঠে।”

তবে বড় আন্দুলিয়া গ্রামের এটাই ধারা। বছর কয়েক আগে জলঙ্গির ধারেই গ্রামের গোপীনাথের মন্দিরের কাছে ভাঙন শুরু হয়েছিল। অভিজিৎ বলেন, “সেবার একই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুসলিম ভাইরা। এই গ্রাম বিদ্বেষ চায় না। আলাদা ভাবে বাঁচতেও চায় না।” এ বছরই পাশের গ্রাম শিকরায় অর্থাভাবে বন্ধ হতে বসেছিল দুর্গা পুজো। সে সময় সমস্ত দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মুসলিমরা। শুধু তা-ই নয়, বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসা গদাধরের মেলার দায়িত্বও ভাগ করে নিয়েছেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। যে মেলা এখন সম্প্রীতির মেলা বলে পরিচিত।

তবে এ দিন কোনও মতে বাঁধ রক্ষা করা গেলেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে ভবিষ্যতে গ্রামের বড় অংশ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই পঞ্চায়েতের প্রধান কালীপদ বলেন, ‘‘শুধু তো মসজিদের সামনের জায়গা নয়, ভাঙন অনেকটা বড় জায়গা জুড়ে ধরেছে। ব্লকের সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে পাকাপাকি ভাবে বাঁধ মেরামতির ব্যবস্থা করা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dam Repair Jalangi জলঙ্গি Secular
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE