Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ কেমন ভোট হল, বলুন তো কর্তা!

এত দিন বোমা পড়েছে, গুলি চলেছে। ভোটে নিহতও হয়েছেন বহু লোক। কিন্তু প্রথম পুরভোট দেখে থ ডোমকল। এমন ‘সন্ত্রাস’ এ জনপদ আগে কখনও দেখেনি।

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৭ ০২:২০
Share: Save:

এত দিন বোমা পড়েছে, গুলি চলেছে। ভোটে নিহতও হয়েছেন বহু লোক। কিন্তু প্রথম পুরভোট দেখে থ ডোমকল। এমন ‘সন্ত্রাস’ এ জনপদ আগে কখনও দেখেনি। নাম ও ছবি প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জনের সঙ্গে কথাও বলল আনন্দবাজার।

ডিজিটাল কায়দা

ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কথা তিনি শুনেছিলেন। রবিবার ডোমকলের বছর চৌষট্টির এক বৃদ্ধ ভোট দিতে গিয়ে তা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন। ভোটার কার্ড নিয়ে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে ঢুকতেই ওই বৃদ্ধকে শুনতে হয়, ‘‘ওরে, কে আছিস? চাচার আঙুলে কালিটা লাগিয়ে দে।’’ তড়িঘড়ি একজন কালি লাগিয়ে বলে, ‘‘তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যান। বড্ড গরম পড়ছে তো।’’ ওই বৃদ্ধ বেশ অবাক হয়ে বলেন, ‘‘সে কী হে! আমি তো বোতামই টিপলাম না। ভোট না দিয়েই চলে যাব?’’ পাশ থেকে একজন বলে উঠল, ‘‘মাথা গরম করাবে না চাচা। এখন সবই ডিজিটাল। তোমার ভোট দূর থেকেই হয়ে গিয়েছে।’’ পরিস্থিতি আঁচ করে বৃদ্ধ আর কথা বাড়াননি। বাড়ি যাওয়ার পথে বেজার মুখে বৃদ্ধ বলছেন, ‘‘সেই কবে থেকে ভোট দিচ্ছি! ব্যালট উঠে গিয়ে বোতাম এল। কিন্তু এমন ডিজিটাল কায়দা এই প্রথম দেখলাম। এ কেমন ভোট হল, বলুন তো কর্তা!’’

ভূতের ভোট

১৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথ তখন প্রায় ফাঁকা। বসে আছেন কেবল ভোটকর্মীরা। বাড়ির কাজকর্ম সেরে ভোট দিতে গিয়েছিলেন ওই ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা। কিন্তু বুথে ঢুকতেই বেশ খুশি হয়েছিলেন ওই যুবক। কোনও ভিড় নেই। চট করেই ভোটটা দিয়ে তিনি বাড়ি ফিরতে পারবেন। কিন্তু ভোটের কথা বলতেই এক ভোটবাবু বেশ কিছুক্ষণ কাগজপত্র উল্টে জানিয়ে দেন, ‘‘আপনার তো মশাই ভোট হয়ে গিয়েছে।’’ আকাশ থেকে পড়েন ওই যুবক। জানতে চান, ‘‘এই তো আমি। আপনার সামনে দাঁড়িয়ে। এই দেখুন আঙুল। কোনও কালির দাগ নেই। তাহলে আমার ভোট দিল কে?’’ বিরক্তির সঙ্গে সেই ভোটবাবু বলেন, ‘‘এত কিছু বলতে পারব না। বললাম তো, আপনার ভোট হয়ে গিয়েছে।’’ বুথের বাইরে এসে ওই যুবক বলছেন, ‘‘ভূত কোনও দিন দেখিনি। তবে তেনারা যে আছে তাই নয়, প্রয়োজনে ভোটও দেয়।’’

বাপরে কী দরদ

অন্য সময় কেউ ঘুরেও তাকায় না। কেউ জানতেও চায় না, কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না। কিন্তু ভোটের দিন এলাকার ছেলেপুলেদের দরদ দেখে তিনি বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। দক্ষিণনগর এলাকার বছর চল্লিশের এক মহিলা বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা পথ উজিয়ে স্থানীয় এক বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বুথে ঢোকার আগেই তাঁর পথ আটকান মুখচেনা কিছু ছেলে। হাসি মুখে তারা বলে, ‘‘আরে ভাবি, এই রোদে গরমে কষ্ট করে তোমার আসার কী দরকার ছিল! তোমার ভোট তো সেই সাত সকালেই হয়ে গিয়েছে। যাও, বাড়ি গিয়ে গোসল করে খাওয়াদাওয়া সেরে নাও।’’ ওই মহিলা বুঝে গিয়েছেন কী ঘটেছে। বাড়ি ঢোকার মুখে তিনি বলছেন, ‘‘বাপ রে কী দরদ! তা দেখেই বুঝেছিলাম, যা গণ্ডগোল হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Voters Angry Domkol Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE