এই প্রকল্পের জল নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন: ধুলিয়ানে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
পানীয় জল প্রকল্পের চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খান কয়েক জলাশয়। বুধবার বিকেল থেকে সেই জলায় খাবি খেয়ে মাছ মরতে দেখা যাচ্ছিল, সন্দেহটা দানা বেঁধেছিল তখনই। ঝুঁকি না নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই, জলে দূষণ ঘটেছে সন্দেহে ধুলিয়ান শহরে বন্ধ করে দেওয়া হল পুরসভার পাইপ লাইনের পানীয় জল সরবরাহ।
জলাধার থেকে বেরনো বাড়তি জল জমা হয় ওই দু’টি জলায়। আবার কখনও সেই পুকুরের জলও ‘রিসাইক্লিং’ করে জলাধারেও তোলা হয়। স্বভাবতই জলে এমন কিছু রয়েছে যা বেশি মাত্রায় দূষিত সন্দেহে পুরপ্রধানের নির্দেশে সকাল থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয় শহরের জল সরবরাহ। গুজবটা ছড়িয়ে পড়তেও সময় লাগেনি। ধুলিয়ান জুড়ে রটে যায়, পাইপের জলে বিষ ছড়িয়েছে। শহর জুড়ে আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি আগের রাতে যারা বাড়িতে পাইপে আসা জল পাত্রে ধরে রেখেছিল তা-ও ফেলে দিতে শুরু করেন তাঁরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাই শহর জুড়ে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেয়।
ধুলিয়ান জল প্রকল্পের পরীক্ষাগারের কেমিষ্ট দীপক কর্মকার জানান, বুধবার বিকেল থেকেই তাঁদের নজরে এসেছিল ওই জলাগুলিতে মাছ খাবি খাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘তখন তেমন গুরুতর কিছু মনে হয়নি। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালেই দেখা যায় শ’য়ে শ’য়ে মাছ মরে ভেসে উঠেছে। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় পুরপ্রধানকে। তিনি নির্দেশ দেন জল সরবরাহ বন্ধ করে দিতে।’’ এরপরই পুকুরের জলের নমুনা নিয়ে রঘুনাথগঞ্জের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের অফিসে ছোটেন পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘‘জলের নমুনা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রিপোর্ট পেতে দু’দিন সময় লাগবে।’’
জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের জঙ্গিপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সৈকত জোশ বলেন, “জলের নমুনা পরীক্ষা করে এত দ্রুত তার রিপোর্ট পাওয়া সম্ভব নয়। ধুলিয়ানের পুরপ্রধান ফোন করেছিলেন। তিনি মতামত জানতে চেয়েছিলেন। আমি তাঁকে বলেছি, ওই জলে মাছ মারা যাওয়ার মত ঘটনা যখন ঘটেছে তখন সে জল পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত শহরে সরবরাহ না করাই ভাল।”
জলে বিষ— খবর ছড়াতেই শহর জুড়ে আলোচনার এটাই বিষয় হয়ে ওঠে। লালপুরের সাবিত্রী মন্ডল বলছেন, “বাজারে গিয়েই শুনলাম পুরসভার জল বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। মাছ মারা গিয়েছে। তাই বাড়ি ফিরেই পাইপ লাইনের গত দিনের ধরা সব জল ফেলে দিয়েছি।’’ স্নান করতে এই শীতেই তাই ছুটতে হচ্ছে গঙ্গায়। ছেদিপাড়ার রাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “আশপাশে নলকূপ নেই, পাইপের জল আসার পর নলকূপ ব্যবহার আর হয় না শহরে। তাই জলের জন্য সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।” লালপুরের ফিটু শেখ ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘জল যে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে পুরসভার কিন্তু কোনও প্রচার নেই। বিপদ ঘটলে কে দায় নেবে!’’ শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের অঙ্গনওয়ারি কর্মী সেলিনা খাতুনের ভয় যাচ্ছে না, “গতকাল ওই জলেই তো রান্না করে খাইয়েছি। জল বিষিয়েছে, এখন ছেলেপুলেদের কি হবে!’’
ধুলিয়ানের পুরপ্রধান সুবল সাহা বলেন, ‘‘শহরে লক্ষাধিক জনসংখ্যার বসবাস। গঙ্গা থেকে জল তুলে পরিশোধন করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট না পেলে জল ফের সরবরাহ করা যাবে কি না তা নিয়েও
সংশয়ে রয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy