Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

‘আমার তো হল, আপনার রেজাল্ট!’

তার মুখে সন্দেশ ছুঁইয়ে দিয়ে অধীর চৌধুরী থতমত খেয়ে বলেছেন, ‘‘তুমিই বল কেমন হবে, ভাল তো!’’

সাফল্যের পরে: অধীর চৌধুরী। কান্দিতে। নিজস্ব চিত্র

সাফল্যের পরে: অধীর চৌধুরী। কান্দিতে। নিজস্ব চিত্র

কৌশিক সাহা
কান্দি শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০০:২১
Share: Save:

আঁধার ভোরেই বিছানা ছেড়ে উঠোনে দাঁড়িয়েছিলেন মা। মেয়ে তখনও ঘুমে কাদা। টিভি খুলেছিলেন সকাল ফরসা হতেই, তর সইছে না যে! আর ফল প্রকাশের মিনিট পনেরোর মধ্যেই..., ‘‘কি যেন শুনলাম, মেয়ের নাম না’’, সুলতানা পরভিন বলছেন, ‘‘প্রথমে ভাবতেই পারিনি, এ ভাবেই বুঝি স্বপ্ন সত্যি হয়, রুমানা মাধ্যমিকে পঞ্চম!’’

মাধ্যমিকে তাক লাগিয়ে দিয়ে শুধু মা-বাবা-পাড়া-স্কুল-জেলা নয়, রুমানা অবাক হয়েছে নিজেও। বলছে, ‘‘পরীক্ষা ভালই দিয়েছিলাম। তা বলে একেবারে প্রথম দিকে থাকব, না একেবারেই ভাবিনি!’’ আর ভাবেনি বলেই, বেলা গড়িয়ে ঘুমিয়েছে মেয়ে, সদ্য ভোটের গন্ধ মাখা রাজনীতির দাপুটে নেতারা বাড়ি এলে তাদেরও পাল্টা জানিয়ে দিয়েছে, ‘‘আমার রেজাল্ট তো বেরিয়ে গেল, ২৩ তারিখ আপনাদের তো ফল!’’

তার মুখে সন্দেশ ছুঁইয়ে দিয়ে অধীর চৌধুরী থতমত খেয়ে বলেছেন, ‘‘তুমিই বল কেমন হবে, ভাল তো!’’ তার পর বাড়ির সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলে গেছেন, “ভীষণ মিষ্টি মেয়ে! সকাল দেখলে যেমন বোঝা যায় দিন কেমন যাবে, তেমনই ঘরের মেয়ে রুমানাকে দেখেই বুঝলাম পরিশ্রম করলে ফল ভালই হয়‍!’’

তিনিই বা কম কিসে! তাই বেলা গড়াতেই কান্দির ১১ নম্বর ওয়ার্ডে হোটেলপাড়ায় হন্তদন্ত হয়ে রুমানাদের বাড়ি এসেছিলেন বহরমপুর লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব সরকারও। রুমানার কাছে তাঁকেও শুনতে হয়েছে— ‘আপনার রেজাল্ট কেমন হবে?’

যা শুনে কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত অপূর্বকেও ভোট প্রচারের লব্জেই বলতে শোনা গেছে, “আমি মানুষের সঙ্গেই থাকি, মানুষের সেবা করি। পরিশ্রম করেছি যখন, ফল নিশ্চয় অনুকূলেই থাকবে।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সদ্য নির্বাচন পেরিয়েছে। ফল বেরোয়নি, তবে তার আঁচ বয়ে এ দিন দিলভর রুমানার বাড়িতে দর্শনার্থীদের তালিকায় ছিলেন উপ-নির্বাচনে তৃণমূল ও কংগ্রেসের দুই প্রার্থী গৌতম রায় এবং শফিউল খানও।

হোক না সদ্য মাধ্যমিক পাশ, রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েটি, বাবা রবিউল আলম এবং মা সুলতানার মতোই (দু’জনেই ইররাজির শিক্ষক) দিব্যি মনস্ক। টিভি সিরিয়াল, পাজামা ক্রিকেট নয় বরং তার সময় কাটে খবরের কাগজ পড়ে আর টিভিতে নিউজ চ্যানেলে ডুবে। বলছে, ‘‘বুথ ফেরত সমীক্ষা যাই বলুক না কেন, আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। ফল এমন হবে না দেখবেন।’’

মাধ্যমিকে পঞ্চম স্থান দখল করা রুমানার নম্বর, ৬৮৬। বাংলা ৯৬, ইংরাজি ৯৫, অঙ্ক ও ভৌতবিঞ্জানে ১০০, জীবন বিজ্ঞান এবং ভূগোলে ৯৯, ইতিহাসে ৯৭ নম্বর পেয়েছে সে। তার পর? মাথা নাড়ে মেয়েটি, ‘‘এখনও ভাবিনি, দেখি না, অনেক কিছুই তো বাকি!’’ সত্যিই এত আগে থেকে ফলাফল বলা যায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE