রং-রুট: আলপনায় ব্যস্ত শিল্পীরা। শনিবার রাতে ফুলিয়ায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত সুতোর বিন্যাস। তার মধ্যেই মাকুর মসৃণ চলাচল। সেখানেই অভ্যস্ত হাতে নকশা বোনেন ওঁরা।
ওঁরা মানে, ফুলিয়ার তাঁত শিল্পীরা। যাঁদের নকশাদার টাঙ্গাইলের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। সেই ফুলিয়ার শিল্পীরাই নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটিয়ে ফেললেন। শাড়িতে নকশা তোলা আঙুল কংক্রিটের উপরে ফুটিয়ে তুলল অসাধারণ আলপনা। কালো পিচ রাস্তার উপরে রাতভর চলল রং-তুলির কারুকাজ। ভোরে যার মাপ দাঁড়াল তিন কিলোমিটার।
উদ্যোক্তাদের দাবি, এই আলপনাই নাকি বিশ্বের দীর্ঘতম। ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’-এ নাম তোলার জন্য ইতিমধ্যেই আবেদন জানানো হয়েছে। ফুলিয়ার পুরো প্রক্রিয়াটাই ভিডিও ক্যামেরার পাশাপাশি ড্রোন ক্যামেরাতেও ধরে রাখা হয়েছে।
ফুলিয়ার ‘জুনিয়র ওয়ান হান্ড্রেড’ ক্লাবের সদস্যরা এই পরিকল্পনা করেন দুর্গা প্রতিমা ভাসানের দিনে। প্রস্তাবটা দেন একজন তাঁত শিল্পীই— “আমাদের এলাকায় তো প্রচুর শিল্পী রয়েছে। তা হলে আমরা কেন পৃথিবীর সবথেকে দীর্ঘ আলপনা আঁকতে পারব না?”
প্রস্তাবটা লুফে নিয়েছিলেন সবাই। স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি যোগাযোগ করা হয় বাইরের শিল্পী ও কয়েকটি আর্ট কলেজের শিক্ষক-পড়ুয়াদের সঙ্গেও। ডাক ফেরাননি কেউ-ই। যাঁদের হাতের কাজ সমাদৃত সারা বিশ্বে, প্রচারের অন্তরালে থাকা সেই প্রবীণ শিল্পীরাও তুলে নেন রং-তুলি।
শনিবার রাত ন’টা থেকে শুরু হয় এই কর্মযজ্ঞ। এলাকা অনুযায়ী ভাগ হয়ে যান শিল্পীরা। রাস্তার দু’পাশে ভিড় করেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁরা সমানে উৎসাহ দিয়ে গেলেন শিল্পীদের।
এ ভাবে কখন যে রাত কাবার হয়ে ভোর হয়েছে খেয়াল করেননি তাঁরা। ভোরের আলো চোখে পড়তে তুলি হাতে কপালের বিনবিনে ঘাম মুছে বিখ্যাত শিল্পী মন্টু বসাক বলেন, “যাঃ, এর মধ্যেই সকাল হয়ে গেল! তা না হলে আরও খানিকটা আলপনা আঁকা যেত।”
সেই কবে মায়ের কোলে চড়ে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে চলে এসেছিলেন তিনি। একটু বড় হতেই তাঁতের সঙ্গে প্রেম। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিও। কিন্তু এমন কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে পেরে আপ্লুত মন্টুবাবু বলছেন, ‘‘নিজের এলাকায় এমন কাজ করতে পেরে খুব গর্ব হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy