Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
corona virus

লকডাউনে রক্তাল্পতায় ব্লাডব্যাঙ্ক

অস্ত্রোপচারের আগে তাই রোগীর পরিবারের লোকের কাছেই রক্ত জোগাড়ের আগাম আর্জি জানিয়ে রাখছে হাসপাতাল।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

বিদ্যুৎ মৈত্র
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২০ ০৩:২২
Share: Save:

দেশ জুড়ে প্রলম্বিত লকডাউন সঙ্গে দোসর বৈশাখী গ্রীষ্ম। এই জোড়া ফলায় গ্রাম শহরে বিভিন্ন ক্লাব-সংগঠনের রক্তদান শিবির করার ঘনঘটা শিকেয়। আর তার রেশ ছড়িয়ে রয়েছে জেলার বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে, হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে।

বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডোমকল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, শুধু কাঁদি মহকুমা নয়, পড়শি বীরভূমের ভরসা কান্দি মহকুমা হাসাপাতল থেকে প্রতিবেশি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের রোগীর ভিড় লেগে থাকা জঙ্গিপুর হাসপাতাল--- রক্তের তীব্র আকাল। যার ফলে আপতকালীন কোনও অস্ত্রোপচার ছাড়া মুর্শিদাবাদের সব হাসপাতালের ওটি বন্ধ। অস্ত্রোপচারের আগে তাই রোগীর পরিবারের লোকের কাছেই রক্ত জোগাড়ের আগাম আর্জি জানিয়ে রাখছে হাসপাতাল। অবস্থা যে সত্যিই সঙ্কটজনক, মেনে নিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস। তাঁর আবেদন, ``ভয়ের কোনও কারণ নেই, স্বাস্থ্য বিধি মেনে স্থানীয় সংগঠনগুলো ছোট মাপের রক্তাদান শিবির তো করতেই পারে। চাইলে এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতর তাদের সব রকম সাহায্যও করবে।``

লকডাউনের আবহেও শিবির করার এই ছাড়পত্র থেকেই জেলার রক্ত সঙ্কটের প্রকট চেহারাটা স্পষ্ট। জেলার ৬`টি রক্ত-ব্যাঙ্কে মজুক রক্তের পরিসংখ্যানের দিকে চোখ গেলেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বহরমপুর ব্লাড ব্যাঙ্কে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মজুত রক্তের পরিমাণ সাকুল্যে ৭০ ইউনিট। লালবাগে ৪৮, জঙ্গিপুরে মাত্র ২ ইউনিট।

বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ, ডোমকল, জঙ্গিপুর, কান্দি, লালবাগ, এবং সাগরদিঘি হাসপাতালে, সব মিলিয়ে জেলায় সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের সংখ্যা ছ’টি। রক্তের আকাল সব ক`টিতেই। ফলে আতান্তরে পড়েছেন থ্যালাসেমিয়া রোগীরা. অস্ত্রোপচার যাচ্ছে পিছিয়ে, প্রসূতিদের অপারেশনের আগেও পাঁচ বার ভাবতে হচ্ছে চিকিসকদের। লকডাউনের প্রথম দিকে ভিড় ঠেকাতে রক্তদান শিবির বন্ধ করে দিয়েছিল জেলা প্রশান। তবে আকাল শুরু হতেই, স্বাস্থ্যভবন থেকে বিধি মেনে রক্তদান শিবিরের অনুমোদন মেলে। তবে মানুষের ভ্রান্তি কাটেনি, অনেকেরই আশঙ্কা ছিল, শিবিরে যাঁরা রক্ত দিচ্ছেন তাঁদের শরীরে নিভৃতে করোনাভাইরাস থাকলে তা সংক্রামিত হবে না তো? তবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে অভয় দেওয়ায় এখন জেলার আনাচ কানাচে রক্তদান শিবির শুরু হয়েছে। জঙ্গিপুর, সাগরদিঘি এলাকায় এপ্রিলে একটি শিবিরের আয়োজন হয়, রক্ত সংগ্রহ হয়েছে ৩০ ইউনিট। তা যে নিতান্তই কম মেনে নিয়েছে স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জঙ্গিপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “শিবিরই রক্তের উতস। এটা চালু না হলে রক্িতের আকাশ ভয়াবহ হয়ে ফঠেবে।” থ্যালাসেমিয়া রোগীদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষে অনন্ত বিশ্বাস বলেন, “কোন রোগীর হিমোগ্লবিনের মাত্রা হঠাৎ কমে গেলে তিনি রক্ত কোথায় পাবেন তা কেউ জানে না।”

তবে জেলায় সবথেকে বেশি রক্তসংকটে রয়েছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটের কাউন্সিলর মহম্মদ হেলালউদ্দিন শেখ বলেন, “মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে জেলায় প্রায় বারশো রোগী নিয়মিত রক্ত নেন। লকডাউনের ফলে তাঁদের অনেকেই রক্ত পাচ্ছেন না। ফলে সমস্যায় পড়ছেন রোগীরা।”
জরুরি অবস্থা ছাড়া এখন বেশিরভাগ অস্ত্রোপচার বন্ধ আছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। মজুত থাকা রক্ত মাতৃমা এবং থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। বাকিরা,
শিবিরের অপেক্ষায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus BloodBank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE