Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

নিজের হাতে বানানো রুটি খেয়েই ৪৮০ কিমি পাড়ি

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজারবাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মনোতোষ দাস
হুমাইপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২০ ০৪:৩৭
Share: Save:

গ্রামে তেমন কাজ না থাকায় খুব ছোটবেলা থেকেই ভিন্ রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করি। চেন্নাই, মুম্বই সহ একাধিক জায়গায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেছি। স্ত্রী আর আর দুই ছেলে নিয়ে অভাবের সংসার। ছেলে দুটোকেও লেখাপড়া করাতে হবে। ফলে এলাকায় কাজ করে সংসার সামলে দুই ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া একপ্রকার কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গ্রামের বেশ কয়েকজন ঝাড়খণ্ডে ভাঙা লোহা লক্কড় কেনার কাজ করত। তাদের কাছ থেকেই শুনতাম এই ব্যবসায় লাভ ভালই হয়।

প্রায় দশ বছর আগে তাদের সূত্র ধরেই ঝাড়খণ্ডে চলে যাই। লাতেহার জেলার শহরের কাছাকাছি এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। লকডাউনের মাস খানেক আগেও বাড়ি এসেছিলাম। সপ্তাহ খানেক বাড়িতে থেকে ফের রওনা দিই কাজের জায়গায়। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু, করোনা ভাইরাসের কারনে লক ডাউন শুরু হতেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। ঘরে বসেই জমানো টাকায় চলছিল। লকডাউনের কারনে দোকানপাট বন্ধ থাকায় খাবার দাবার পেতেও অসুবিধা হচ্ছিল। এদিকে মহাজনের কাছ থেকে টাকাও পাচ্ছিলাম না। এ ভাবেই মাস খানেক কাটার পর হাতে পড়ে মাত্র ৫০০ টাকা। তখন ঠিক করি যা করেই হোক ঘরে ফিরতে হবে।

একদিন ভোরে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি বাড়ির উদ্দেশে। সেদিন ছিল বুধবার। নিজের তৈরি রুটি আর আলুভাজা ব্যাগে পুরে, সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ি। প্রথম দিন সেই খাবারেই চলে। রাস্তায় খাবার দোকান, হোটেল সবই বন্ধ ছিল। ফলে মুদির দোকান থেকে মুড়ি, চানাচুর, কলা আর রাস্তার ধারের কলের জল খেয়েই চার দিন সাইকেল ঠেঙিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। ধানবাদ থেকে রানিগঞ্জ হয়ে চাতরা হয়ে বাড়ি ফিরি৷ কয়েক বছর ধরে একাধিকবার বাসে যাতায়াত করার ফলে রাস্তা অনেকটাই চেনা ছিল। তবে জেলার বর্ডার এলাকায় রাস্তায় পুলিশের ভয়ে কখনও লোকাল রাস্তাও ধরতে হয়েছে।

রাস্তায় ঠিক মতো খাবার পাচ্ছিলাম না ঠিকই, কিন্তু, অন্য কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি। মাঝরাত হলে কোনও দোকানের চালায় সাইকেলে তালা মেরে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতাম। ভোরের আলো ফোটার আগেই ফের রওনা দিতাম। শনিবার রাতে হরিহরপাড়া পৌঁছই। টানা চার দিন সাইকেল চালিয়ে গা হাত পা ব্যথা হয়ে গিয়েছিল। হরিহরপাড়া হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার পর গ্রামে পৌঁছই। প্রায় দু-মাস হতে চলল গ্রামে ফিরেছি। কিন্তু এলাকায় তেমন কাজ নেই। বসে খেলে তো আর চার জনের পেট চলবে না। তাই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ফের লাতেহার গিয়ে নিজের কাজ শুরু করব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE