Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

‘ঘরে ফিরতে চেয়ে যেন দোষ করেছি!’

খানিক অপ্রস্তুত হাসি ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া কেরল ফেরত শ্রমিকেরা আর কীই বা দেবেন!

ট্রেন এল স্টেশনে। বুধবার বহরমপুর স্টেশনে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

ট্রেন এল স্টেশনে। বুধবার বহরমপুর স্টেশনে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

বিদ্যুৎ মৈত্র
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২০ ০৬:৪৭
Share: Save:

ট্রেন আসার আসার কথা ছিল দুপুরে। বিকেল গড়িয়ে রাত পৌনে ন’টার সময়ে সে এল বটে, তবে স্যানিটাইজ়েশনের অপেক্ষায় চব্বিশ কামরার কেরল ফেরত সেই বিশেষ ট্রেন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে রইল ঠায় মিনিট চল্লিশ। রেলকর্মীদের অবিরল ছোটাছুটি, পুলিশের কড়া ঘেরাটোপ, আর প্রশাসনের কর্তাদের মুখ-চোখ আড়াল করে ঘনঘন ফোনের আড়ালে রাত সওয়া ন’টা নাগাদ প্রথম কামরার দরজা খুলতেই সেই ব্যস্ততা বেড়ে গেল দ্বিগুণ। স্টেশন চত্বরের ধারে কাছে চেনা ভিড় নেই। তবে বাইরে সার দিয়ে বাস আর উর্দির হম্বিতম্বি। যেন অভাবনীয় কিছু একটা
ঘটতে চলেছে!

প্রায় আড়াই দিনের যাত্রা শেষে শেষ পর্যন্ত কামরার দরজা ঠেলে প্ল্যাটফর্মে পা রাখলেন প্রথম পরিযায়ী শ্রমিক। চোখেমুখে স্পষ্ট স্বস্তিতে আড়াল হয়ে গিয়েছে শরীরের ধকল। তার পর একে একে অন্যরা। স্টেশনে নেমেই কেউ বা আকাশমুখো তাকিয়ে যেন ঈশ্বরের কাছে নিঃশব্দ কৃতজ্ঞতা পাঠালেন কেউ বা সরকারি কর্তাদের ব্যস্ততা দেখে ভ্যবাচ্যাকা খেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন প্ল্যটফর্মে।

প্রতিটি কামরার সামনে ছিলেন টেবিল পাতা স্বাস্থ্যকর্মী। থার্মাল স্ক্রিনিং পর্বের পরে পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়া হল পিপিই’র অঙ্গ মাস্ক। তার পর বাড়িয়ে দেওয়া দু’হাতে ঢেলে দেওয়া হল হ্যান্ড-স্যানিটাইজ়ার। সব শেষে খাবারের প্যাকেট। হাসিমুখে স্বাস্থ্য কর্মীরা পাখি পড়ার মতো করে বলে চলেছেন, ‘‘শুনুন, যা ওষুধ দেওয়া হল প্রতি দিন নিয়ম করে খাবেন কিন্তু। আর যা বলেছি, মনে আছে তোস বাড়ির বাইরে একেবারে নয়।’’ বাধ্য ছাত্রের মতো মাখা হেলিয়ে তাঁরা বোঝালেন সব মানবেন। তার পর লাইন করে তাঁরা গুটি গুটি এগোলেন স্টেশনের লাগোয়া চত্বরে সার দিয়ে রাখা বাসের দিকে, এ বার বাড়ির পথ।

প্ল্যাটফর্ম জুড়ে এই ব্যস্ততার মাঝে ট্রেনের কামরা থেকে উঁকিঝুঁকি শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে এক স্বাস্থ্যকর্মী সতর্ক করে গেলেন, ‘‘এখন থেকেই ছটফট করলে চলবে। এখন অনেক ধৈর্য্য দেখাতে হবে।’’ খানিক অপ্রস্তুত হাসি ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া কেরল ফেরত সেই শ্রমিক আর কীই বা দেবেন!

ট্রেন থেকেই এক শ্রমিক ফিরিয়ে দিলেন পাল্টা মন্তব্য, ‘‘এমন ভিআইপি পরিষেবা দেখিনি তো তাই ভয় লাগছে ভাই!’’ রানিনগরের আব্বাস আলি নেমেই উগরে দিলেন ক্ষোভ, ‘‘নগদ টাকা খরচ করে ফিরেছি, অথচ ভাবখানা এমন যেন বাড়ি ফিরতে চেয়ে কী দোষ করে ফেলেছি! মনে রাখবেন আমরা নিখরচায় নিয়ে আসা হয়নি। ট্রেনে খাবার পেয়েছি দু’বার। জল পাইনি। তবে, খিদে তেষ্টা সব হজম হয়ে গিয়েছে দেশে ফেরার আনন্দে।’’ হাবিবুর সাহু নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘‘টাকাকড়ি নেই। তবু ধার করে ৯১০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হয়েছে।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE